বৃষ্টিতে খেলা চালানোয় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ অধিনায়ক

ব্যাটিংয়ে ভালো শুরুর পর এলোমেলো হয়ে পড়া, বোলিংয়ে শুরুতে উইকেট নেওয়ার পর চাপ সৃষ্টি করতে না পারা। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশে হারের মূল কারণ সাদা চোখে এসব। নিগার সুলতানা তা মেনেও নিচ্ছেন অকপটে। পাশাপাশি বাংলাদেশ অধিনায়ক দায় দিচ্ছেন কন্ডিশনকেও। বৃষ্টির মধ্যেও খেলা চালানোয় বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি। বোলাররা বল গ্রিপ করতেই পারছিল না বলে দাবি তার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2022, 07:35 AM
Updated : 7 March 2022, 09:47 AM

মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সোমবার এই ম্যাচ শুরু হতেই অনেকটা দেরি হয় বৃষ্টির কারণে। পরে ম্যাচ নেমে আসে ২৭ ওভারে। শামিমা সুলতানা ও ফারজানা হক দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫৯ রানের জুটি গড়ার পর নিয়মিত উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করতে পারে ১৪০ রান।

রান তাড়ায় শুরুতে অধিনায়ক সোফি ডিভাইনকে হারালেও আর কোনো উইকেট হারায়নি নিউ জিল্যান্ড। সুজি বেটসের অপরাজিত ৭৯ ও অ্যামিলিয়া কারের অপরাজিত ৪৭ রানে তারা জিতে যায় ২০ ওভারেই।

নিউ জিল্যান্ডের শক্তিশালী ব্যাটিংয়ের সামনে ২৭ ওভার ১৪০ যদিও খুব বড় রান নয়, তবে সেটিকে যথেষ্ট ভালো স্কোর বলেই মনে করেন নিগার। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, বৃষ্টির কারণেই ভালো করতে পারেনি তার বোলাররা।

“সংগ্রহ যা ছিল বোর্ডে, তা খুবই ভালো ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে চিত্র পুরো ভিন্ন ছিল। বৃষ্টি ছিল অনেক বেশি ও আবহাওয়ার অবস্থা খেলার উপযুক্ত ছিল না। তবু আমরা খেলেছি। বোলাররা গ্রিপ করতে সমস্যা অনুভব করেছে। আউটফিল্ডে যারা ফিল্ডিং করেছে, এত বৃষ্টি হচ্ছিল যে বল দেখতেও কষ্ট হচ্ছিল।”

বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসে একটা সময় সত্যিই বৃষ্টির বেশ ছিল বেশ তীব্র। টিভি ধারাভাষ্যে সঞ্জয় মাঞ্জরেকার বলছিলেন, চারপাশ অনেকটাই ঘোলাটে হয়ে গেছে।

শুধু বল গ্রিপ করা বা বল দেখার সমস্যাই নয়, বৃষ্টিতে খেলা চালানোর বিপদ আরও বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন নিগার। পিচ্ছিল মাঠে চোট-আঘাতের শঙ্কা পেয়ে বসেছিল তাকে।

“ফিল্ডারদের নিরাপদে ম্যাচ শেষ করা নিয়ে দুর্ভাবনায় ছিলাম আমি। কারণ আরও ৫টি ম্যাচ বাকি আছে। আমার খেলোয়াড়রা যদি নিরাপদ থাকে, তাহলেই বাকি ম্যাচগুলো খেলতে পারব। লড়াইটা করব যাদের নিয়ে, তাদের নিরাপত্তা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

“এখন আপনারা বলতে পারেন যে এটা অজুহাত, কারণ প্রথম ইনিংসেও বৃষ্টি ছিল। কিন্তু আসলে তা নয়। প্রথম ইনিংসে বৃষ্টির জোর এত ছিল না, আমাদের ব্যাটিংয়ে সময় কন্ডিশন তুলনামূলক ভালো ছিল। আমাদের বোলিং-ফিল্ডিংয়ের সময় বৃষ্টি অনেক ভারী ছিল। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা আমাদের ভাবতে হবে। বিশ্বকাপের পরও অনেক খেলা আছে আমাদের।”

নিজেদের আপত্তির কথা মাঠের আম্পায়ারদের জানিয়েও লাভ হয়নি দাবি বাংলাদেশ অধিনায়কের।

“মাঠে যখন ছিলাম, আম্পায়ারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এই কন্ডিশনে খেলা চালিয়ে যাব কিনা। তারা বারবার বলছিলেন যে, ‘চালিয়ে যান।’ সেক্ষেত্রে মাঠে আমার আর বেশি কিছু করার থাকে না। কিন্তু মাঠের বাইরে অবশ্যই যতটুকু কাজ করা যায়, কথা বলে ম্যাচ রেফারিকে জানাব যে কন্ডিশন এরকম ছিল বা পরের ম্যাচে কী কী করলে ভালো হবে।”

তবে বৃষ্টির কারণে বোলিংয়ের সমস্যা হলেও বাংলাদেশের হারের পথে এগিয়ে যায় ম্যাচের প্রথম ভাগেই। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬৯ রানের উদ্বোধনী জুটির পরও বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৭৫ রানে। এ দিন ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটির পর ২৭ ওভারে আসে কেবল ১৪০।

ব্যাটিংয়ে নিজেদের সেই ব্যর্থতা মেনে নিচ্ছেন নিগার।

“সবশেষ দুটি ম্যাচে আমাদের ওপেনাররা খুব ভালো শুরু এনে দিয়েছে। এমনিতে সবসময় আমাদের দুর্ভাবনা থাকে প্রথম ১০ ওভারে নতুন বল সামলানো নিয়ে। সেখানে খুব ভালোভাবে টিকে থেকেও পরের ব্যাটাররা এখানে জুটি গড়তে পারছে না। এখানে ধস নামছে। পরের ম্যাচগুলোয় আশা করি আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।”

বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে, সমস্যা যতটা স্কিলের, তার চেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক।

“স্কিলের যা কাজ, মাঠের যে কাজ, নেটে যা করার, এর মধ্যেই অনেক করেছি। এখন আমাদের ভেতরেই বিষয়গুলো। এটা একটা মানসিক ব্যাপার। আমরা যত দ্রুত জিনিসগুলো ভেতর থেকে উপলব্ধি করতে পারব… উপলব্ধি হচ্ছেও, যত দ্রুত আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব, তত ভালো হবে দলের জন্য।”

তিন দিনের মধ্যে দুটি ম্যাচ খেলার পর এখন ৬ দিনের বিরতি পাচ্ছে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে আগামী সোমবার। এই সময়টায় নিজেদের আরও শানিত করতে চান নিগার।

“প্রস্তুতির জন্য লম্বা একটা সময় আমরা পাব। আরও ভালোভাবে, খেলোয়াড়রা আলাদা করে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করার কিছু সময় পাব ঘাটতিগুলো দূর করার। আমার কাছে মনে হয় তখন আরও শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।”