ভুল ধরতে পেরে শুধরানোর চেষ্টায় সৌম্য

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেটে গেছে সাত বছর। বয়স হয়ে গেছে ২৯। এই সময়ে জাতীয় দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের একজন হওয়ার কথা ছিল সৌম্য সরকারের। কিন্তু প্রতিভার ঝলক মাঝে মধ্যে দেখালেও কখনও পারেননি ধারাবাহিক হতে। আর এখন তো সব সংস্করণেই দলে জায়গা হারিয়ে নিজেকে খুঁজে ফিরছেন তিনি। ক্যারিয়ারে কঠিন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে বললেন, বুঝতে পেরেছেন নিজের ভুল, করছেন সংশোধনের কাজ। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2022, 02:22 PM
Updated : 6 March 2022, 02:22 PM

নিজের ঠিক কোন ভুলটা খুঁজে পেয়েছেন, সেটা অবশ্য খুলে বলেননি সৌম্য। বললেন, সমস্যা দূর করার চেষ্টা চলছে। শতভাগ সাফল্য না মিললেও আছেন উন্নতির পথে।

ব্যাট হাতে সৌম্যর সমস্যা কতটা গুরুতর বোঝাত বলা যায়, রানের পথটাই হারিয়ে ফেলেছেন  তিনি। সবশেষ ১৮ টেস্ট ইনিংসে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস কেবল একটি; ২০১৯ সালে হ্যামিল্টন টেস্টে ১৪৯। এর বাইরে ৩০ ছাড়াতে পেরেছেন কেবল একবার।

২০১৯ সালে চট্টগ্রামে আফগানিস্তান টেস্টে হারের পর বাদ পড়েন এই সংস্করণের দল থেকে। পরে হুট করে ডাক পেয়ে খেলে ফেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট। সেই ম্যাচের ব্যর্থতার পর থেকে দলের বাইরে তিনি।

সবশেষ ১৫ ওয়ানডে ইনিংসে ফিফটি কেবল একটি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৯ সালে ৮৬ বলে করেন ৬৯। এর বাইরে ত্রিশের ঘর ছাড়াতে পারেন কেবল একবার। গত বছরের মার্চ থেকে জায়গা মিলছে না ওয়ানডে দলে।

টি-টোয়েন্টিতেও অবস্থা করুণ। ২০২০ ও ২০২১ মিলিয়ে ৮ ইনিংসে করেছিলেন চার ফিফটি। এরপর এখানেও রান উধাও। সবশেষ ১০ ইনিংসে একবারও যেতে পারেননি ২০ পর্যন্ত। আটবার ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক, সর্বোচ্চ ১৭। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে নেই টি-টোয়েন্টি দলে। 

নিজেকে খুঁজে ফেরা ব্যাটসম্যানের ঠাঁই হয়েছে বাংলাদেশ টাইগার্সের প্রথম ক‍্যাম্পে। বুধবার বিসিবির পাঠানো ভিডিও বার্তায় তিনি জানালেন, এখানে কাজ করে ধরতে পেরেছেন নিজের ভুল।

“ক্যাম্পটা তো এত লম্বা সময়ের ছিল না, অল্প সময়ের। যে ভুলটা ছিল ওইটা নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি, নিজে ধরতে পেরেছি। কোচ যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। হয়তোবা শতভাগ হয়নি। একটু লম্বা সময়ের ক্যাম্প হলে সেটাও এখান থেকে সমাধান করে নতুন আরেকটা জিনিস নিয়ে কাজ করতে পারতাম।”

“ছোট ছোট দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। আমার ব্যক্তিগত দুটি জিনিস। আমার কাজে আমি খুশি। আরও একদিন বাকি আছে ক্যাম্প। যে কদিনই কাজ করেছি রুমে গিয়ে চিন্তা করেছি, আমার মনে হয়েছে যে কাজটা করেছি, আমি অনেকটা হ্যাপি।”

বিসিবির এই ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম চলবে নিয়মিত। সামনে ক‍্যাম্প হবে আরও লম্বা সময় ধরে। সৌম্য নিশ্চিত, এমন ক্যাম্পে উপকৃত হবেন সব ক্রিকেটার।

“এরকম অনুশীলন সুবিধা থাকলে সব খেলোয়াড়ই টাচে থাকে এবং আত্মবিশ্বাস ভালো পর্যায়ে থাকে। কারণ, সবাই সবার ভুলগুলো বা শক্তির দিকগুলো নিয়ে কাজ করতে পারে। সমস্যা থাকলে এখান থেকে সেটা উতরাতে পারে। বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্পটা খুবই ভালো। পরেও যারা আসবে সবার জন্য খুব ভালো একটা ক্যাম্প হবে।”

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ক্যাম্প চলবে ৭ মার্চ পর্যন্ত। দিনের হিসেবে ছোট ক্যাম্প হলেও সময়ের ব্যাপ্তিতে ছোট ছিল না। সৌম‍্য জানালেন, সারাদিন অনুশীলন ছিল বলে মনসংযোগেরও একটা পরীক্ষা হয়ে গেছে এখানে।

“সকাল থেকে আমরা শুরু করতাম বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলত। অনেক লম্বা সময় নিয়ে অনুশীলন করাতে আলাদা একটা মানসিক প্রস্তুতি হয়েছে। যেমন ম্যাচে প্রথম হাফের পর সেকেন্ড হাফের দিকে একটা মনযোগের ঘাটতি হয়। এরকম জিনিসগুলো এই ক্যাম্পে থেকে ভালো হয়েছে সারাদিন অনুশীলনের ফলে।”

“ঢাকাতে অনুশীলন করি যখন, একা একা হয়তোবা জিম বা একটু ব্যাটিং, বোলিং করে দিন শেষ হয়ে যায়। এখানে আমরা সকাল থেকে শুরু করেছি। যেমন অনেক সকালে অনেকে ব্যাট করেছে আবার দুপুরে গিয়ে ফিটনেস অনুশীলন। সব কিছু মিলিয়ে নিজেকে প্রস্তত করার জন্য খুবই সুন্দর একটা ক্যাম্প ছিল। সেটা জাতীয় দল হোক বা যারা জাতীয় দলের বাইরে আছে, সবার জন্যই। অনুশীলন করে, ভালো পারফর্ম করে আবার জাতীয় দলে যেন ফিরতে পারি, তার জন্য এই জায়গাটা খুবই ভালো।”