মৃত্যুর আগে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ‘দেখছিলেন’ ওয়ার্ন

বর্ণিল ক্যারিয়ারে ২২ গজে জাদু দেখিয়েছেন বল হাতে। খেলা ছাড়ার পরও নানা ভূমিকায় ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন শেন ওয়ার্ন। আকস্মিক মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও খেলাটিই ছিল কিংবদন্তি এই লেগ স্পিনারের সঙ্গী। রিসোর্টে তাকে অচেতন অবস্থায় যখন পাওয়া যায়, তখন টেলিভিশনে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট চলছিল বলে জানা গেছে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2022, 03:46 PM
Updated : 5 March 2022, 03:46 PM

গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় মাঝরাতে ওয়ার্নের মৃত্যুর খবর জানায় তার ম্যানেজমেন্ট সংস্থা। হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওয়ার্নের দীর্ঘদিনের ম্যানেজার জেমস এরস্কিনের বরাত দিয়ে সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানিয়েছে, এই কিংবদন্তিকে যখন অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় তখন টেলিভিশনে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের খেলা চলছিল। ইংল্যান্ডে গ্রীষ্মের ধারাভাষ্য দিতে যাওয়ার আগে থাইল্যান্ডের একটি রিসোর্টে ছুটি কাটাচ্ছিলেন তিনি।

এরস্কিন হেরাল্ড ও দ্য এজের সঙ্গে আলাপচারিতায় তুলে ধরেছেন টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০৮ উইকেট শিকারির মারা যাওয়ার আগে ও পরের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ। তিনি বলেন, ওয়ার্নকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন তার বন্ধু ও সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্নের ডকুমেন্টারির নির্বাহী প্রযোজক অ্যান্ড্রু নিয়োফিটো।

“তাদের বিকাল ৫টায় কিছু লোকের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। নিও ওয়ার্নের পাশের ভিলাতেই ছিলেন, সবসময় ঠিক সময়ে উপস্থিত থাকতেন তিনি।”

“তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ওয়ার্নের অবস্থা তখন ভালো ছিল না। নিও তখন তাকে মাউথ-টু-মাউথ দেওয়ার চেষ্টা করেন, তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার হৃদস্পন্দন ছিল না, অ্যাম্বুলেন্স ২০ মিনিট পরে এসেছিল এবং এক ঘন্টার একটু পর (থাই ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে) তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।”

এরস্কিন জানিয়েছেন, ঘণ্টা দুয়েক আগে সবশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৯৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী ওয়ার্নকে।

ক্যারিয়ার জুড়ে নানা সময়ে বিতর্কের জন্ম দেওয়া ওয়ার্ন জীবনটা পুরোপুরি উপভোগ করতে চাইতেন। অনেকের মতে, তিনি বিশৃঙ্খল জীবন যাপন করতেন। ধূমপান করতে ভালোবাসতেন তিনি, মদ্যপানের প্রতিও আসক্তি ছিল তার। তবে এরস্কিন জানালেন ভিন্ন কথা। তার মতে, যতোটা ভাবা হয় আদতে ততোটা মদ্যপান করতেন না ওয়ার্ন।

পোকার ও গলফ খেলার পাশাপাশি তার পরিকল্পনা ছিল পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর।

“ঘুম দিচ্ছিলেন, তিনি মদ্যপান করেননি, ওজন কমানোর জন্য তিনি ডায়েটে ছিলেন। তিনি বেশি মদ্যপান করেননি। সবাই মনে করে তিনি অনেক মদ্যপান করেন, কিন্তু মোটেও তা নয়। আমি তাকে ওয়াইনের একটি ক্রেট পাঠিয়েছিলাম, ১০ বছর পরেও এটি এখনও সেভাবেই আছে। তিনি মদ্যপান করেন না, কখনও মাদক গ্রহণ করেন না। তিনি মাদককে ঘৃণা করতেন।”

“তিনি তাই করতে যাচ্ছিলেন যা করতে তিনি পছন্দ করেন। একটি বা দুটি পোকার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া, প্রচুর গলফ খেলা আর বাচ্চাদের সঙ্গে থাকা। এভাবেই তিনি নিজের জীবনের পরিকল্পনা করেছিলেন সময় রেখেছিল।”

১৯৯৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের ‘ম্যান অব দা ম্যাচ’ ওয়ার্নের অকাল প্রয়ানে তার সন্তান ব্রুক, সামার ও জ্যাকসন একদম ভেঙে পড়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন এরস্কিন। ওয়ার্নের বাবা কিথ খবরটি জানার পর শনিবার সকালে তার নাতি-নাতনিদের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন।

অসীম শূন্যতায় পাড়ি জমানো ওয়ার্নের জন্ম, বেড়ে ওঠা, ক্রিকেটে পথচলার শুরু, সবই মেলবোর্নে। তার সম্মানে এমসিজির একটি স্ট্যান্ডের নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভিক্টোরিয়ার পর্যটন ও ক্রীড়ামন্ত্রী মার্টিন পাকুলা নিশ্চিত করেছেন, দা গ্রেট সাউদার্ন স্ট্যান্ডের নাম বদলে রাখা হবে এস.কে ওয়ার্ন স্ট্যান্ড। চিরস্থায়ীভাবে এমসিজিতে থাকবে ওয়ার্নের নামে এই স্ট্যান্ড।