জয়ের আশা জাগিয়েও পেরে উঠল না বাংলাদেশ

বোলারদের গোছানো পারফরম্যান্স, দুর্দান্ত ফিল্ডিং আর দুই ওপেনিং ব্যাটারের ভালো শুরু, সব মিলিয়ে জয়ের আয়োজন সাজানো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আয়াবঙ্গা খাকার বিধ্বংসী এক স্পেলেই হয়ে গেল সর্বনাশ। পরে লড়াই করেও আর লাভ হলো না। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাগে পেয়েও শেষ পর্যন্ত হারাতে পারল না বাংলাদেশ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2022, 05:24 AM
Updated : 5 March 2022, 06:15 AM

মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের অভিষেক ম্যাচে জয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো না বাংলাদেশের। বড় পুঁজি না পেলেও বোলারদের নৈপুন্যে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে গেল ৩২ রানে।

ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে শনিবার বাংলাদশের পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা ফারিহা তৃষ্ণা নেন তিন উইকেট, দুই অভিজ্ঞ পেসার জাহানারা আলম ও রিতু মনি দুটি করে।

রান তাড়ায় বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৬৯। কিন্তু ২ ওভারের মধ্যে খাকার ৩ উইকেট আর নির্ভরযোগ্য ফারজানা হকের রান আউটে বিপদে পড়ে যায় দল। শেষ দিকে নিগার সুলতানা ও রিতু মনির জুটিতে আবার খানিকটা জেগে ওঠে জয়ের সম্ভাবনা। কিন্তু তাদের দুজনের বিদায়ের পর দল থমকে যায় ১৭৫ রানে।

ম্যাচের শুরুতে প্রয়াত দুই অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি রডনি মার্শ ও শেন ওয়ার্নকে স্মরণ করে দুই দল। বাংলাদেশ বোলিংয়ে নামে টস জিতে। উইকেটে ঘাস খুব একটা না থাকলেও মুভমেন্ট মিলেছে কিছুটা, বাউন্স তো ছিলই।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওভারেই পেতে পারত সাফল্য। কিন্তু তৃষ্ণার বলে মিড অনে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তাজমিন ব্রিটস।

ব্রিটস এরপরও খুব স্বস্তিতে খেলতে পারেননি। তবে উদ্বোধনী জুটি টিকে যায় ৭ ওভার। ব্রিটসকে (২৪ বলে ৮) ফিরিয়ে সেই তৃষ্ণাই বাংলাদেশকে এনে দেন প্রথম উইকেট।

তিনে নেমে ভুগছিলেন লারা গুডলও। তবে আরেক ওপেনার লরা উলভার্ট দারুণ কিছু শটে বাড়াতে থঅকেন রান। গড়ে ওঠে জুটিও।

৩৯ রানের জুটির পর এই দুজনকে পরপর দুই ওভারে বিদায় করে বাংলাদেশ। রিতু মনির ভেতরে ঢোকা দারুণ ডেলিভারি বোল্ড হন ৫২ বলে ৪১ রান করা উলভার্ট। রানের জন্য ছটফট করতে করতে গুডল (৪৩ বলে ১২) রিভার্স সুইপ খেলেন সালমা খাতুনের বলে, পয়েন্টে চোখধাঁধানো ক্যাচ নেন রুমানা আক্তার।

এরপর দুই অভিজ্ঞ সুনে লিস ও মিগনন ডু প্রিজ জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও তা বড় হয়নি। বোলার রুমানার হাতে ছোঁয়া লেগে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট হন অধিনায়ক লিস (২৫), ডু প্রিজ (১৮) ফিরতি ক্যাচ দেন রুমানাকে।

১১৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন বেশ বিপাকে দক্ষিণ আফ্রিকা।

সেখান থেকে তাদেরকে উদ্ধার করেন মারিজান ক্যাপ ও ক্লোয়ে ট্রায়ন। শুধু জুটিই গড়েননি দুজন, রানের গতিও বাড়ান দারুণ ব্যাটিংয়ে। জুটিতে ৭১ রান আসে ৬৮ বলেই।

দুই ছক্কায় ৪০ বলে ৩৯ রান করা ট্রায়নকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন জাহানারা। তার বলেই পরে ৪২ রান করে বিদায় নেন ক্যাপ। সীমানায় দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ফারজানা হক।

পরে তৃষ্ণা পরপর দুই ওভারে উইকেট নেন দুটি। রিতু মনি নেন শেষ উইকেট। ১৭ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

বাংলাদেশের সামনে তখন বিশ্বকাপ অভিষেক জয়ে রাঙানোর হাতছানি। তা আরও উজ্জ্বল হয় উদ্বোধনী জুটির সৌজন্যে। শামিমা সুলতানা ও শারমিন আক্তার খুব দ্রুত রান তুলতে না পারলেও গড়ে দেন শক্ত ভিত।

নতুন বলে ক্যাপ ও শাবনিম ইসমাইলের জুটি সব দলের জন্যই বড় হুমকি। শামিমা ও শারমিন সাবধানী ব্যাটিংয়ে উইকেট দেননি এই দুজনকে। খাকার প্রথম স্পেলও তারা নিরাপদে পার করেন। জুটির পঞ্চাশ আসে ষোড়শ ওভারে।

কিন্তু হুট করেই ধৈর্য হারান শামিমা। ২০তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা খাকাকে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি ৫০ বলে ২৭ রান করে।

খাকা পরের ওভারে আদায় করে নেন আরও দুই উইকেট। স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে কিপারের হাতে ধরা পড়েন শারমিন (৭৭ বলে ৩৪)। মুর্শিদা খাতুন আলগা ড্রাইভে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনেই।

বাংলাদেশ এরপর বড় ধাক্কা খায় বড় ভরসা ফারজানা হককে রান আউটে হারিয়ে। অভিজ্ঞ রুমানা আহমেদ চেষ্টা করেন প্রতিরোধের। উইকেটে যাওয়ার পরপরই একটি বাউন্ডারি মারেন তিনি, পরে ক্লোয়ে ট্রায়নের ওভারে মারেন দুটি বাউন্ডারি। কিন্তু তাকেও থামিয়ে খাকা দেখা পান শততম ওয়ানডে উইকেটের। শরীর থেকে দূরে বাজে ড্রাইভে উইকেট হারান রুমানা (৩২ বলে ২১)।

এরপর সালমা খাতুন যখন আউট হলেন ২ রানে, ১১৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে অনেকটা ছিটকে যায় বাংলাদেশ।

তবে হাল ছাড়েননি নিগার সুলতানা ও রিতু মনি। কিপিংয়ের সময় চোট পেয়ে কিপিং ছাড়লেও ব্যাট হাতে লড়াই করেন অধিনায়ক নিগার। রিতু মনি দারুণ কয়েকটি শটে বাড়ান রান। খানিকটা উত্তেজনা ফেরে ম্যাচে।

তবে জুটি গড়ে উঠলেও প্রয়োজনীয় রানের গতি বাড়তে থাকে। শেষ ৫ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৪৩ রানের। রান বাড়ানোর তাড়ায় শাবনিম ইসমাইলের বলে বোল্ড জয়ে যান রিতু মনি (৩৮ বলে ২৭)।

অধিনায়ক নিগার ৫৯ বল খেলেও বাউন্ডারি আদায় করতে পারেননি। ২৯ রান করে তিনি ফেরেন রান আউটে। এরপর আর পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ।

পরের ম্যাচে বাংলাদেশের অপেক্ষায় আরও বড় পরীক্ষা। এই মাঠেই সোমবার প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নিউ জিল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.৫ ওভারে ২০৭ (উলভার্ট ৪১, ব্রিটস ৮, গুডল ১২, লিস ২৫, ডু প্রিজ ১৮, ক্যাপ ৪২, ট্রায়ন ৩৯, চেট্টি ১, ইসমাইল ৩, ক্লাস ৪*, খাকা ২; জাহানারা ৯-১-২৮-২, তৃষ্ণা ১০-০-৩৫-৩, সালমা ৯-০-৪৬-১, রিতু মনি ৯.৫-১-৩৬-২, নাহিদা ৫-০-২৭-০, রুমানা ৭-০-২৯-১)।

বাংলাদেশ: ৪৯.৩ ওভারে ১৭৫ (শামিমা ২৭, শারমিন ৩৪, ফারজানা ৮, মুর্শিদা ০, রুমানা ২১, নিগার ২৯, সালমা ২, রিতু ২৭, জাহানারা ৫*, নাহিদা ০, তৃষ্ণা ০; ইসমাইল ১০-০-৩৩-১, ক্যাপ ৯.৩-০-৩৭-১, খাকা ১০-৩-৩২-৪, ক্লাস ১০-১-৩৬-২, লিস ২-০-১২-০, ট্রায়ন ৮-১-২২-০)।

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৩২ রানে জয়ী।

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: আয়াবঙ্গা খাকা।