ওয়ার্নের জাদুকরী তিন পারফরম্যান্স

বল হাতে শেন ওয়ার্ন ছিলেন যেন একজন শিল্পী। ক্রিকেট মাঠে এঁকেছেন দারুণ সব ছবি। উপহার দিয়েছেন কত জাদুকরী মুহূর্ত। লেগ স্পিনের ভেলকিতে বোকা বানিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের। তার অনেক পারফরম্যান্স ক্রিকেট ইতিহাসে পেয়ে গেছে চিরস্থায়ী জায়গা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2022, 08:38 PM
Updated : 4 March 2022, 08:40 PM

৫২ বছর বয়সেই শুক্রবার চিরবিদায় নিয়েছেন সব সময়ের সেরা লেগ স্পিনার ওয়ার্ন। টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০৮ উইকেট নেওয়া অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি চলে গেছেন ঠিকই, কিন্তু রেখে গেছেন অসাধারণ সব মুহূর্ত। তেমন তিনটি স্মরণীয় ঘটনা তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

বল অব দা সেঞ্চুরি

ওয়ার্নের আলো ঝলমলে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন এটি। ১৯৯৩ সালের ৪ জুন। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন। ওয়ার্ন উপহার দেন ঐন্দ্রজালিক এক মুহূর্ত। অবিশ্বাস্য এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন মাইক গ্যাটিংকে।

ডানহাতি ব্যাটসম্যানের লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে বলটা। দারুণ ড্রিফট ও অবিশ্বাস্য বাঁক খেয়ে ব্যাটসম্যানের ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় অফ স্টাম্পে।

ওয়ার্নের সেই জাদুকরী ডেলিভারি ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্থায়ী জায়গা পেয়ে গেছে ‘বল অব দা সেঞ্চুরি’ নামে। ‘গ্যাটিং ডেলিভারি’ও বলা হয় এটিকে।

মজার ব্যাপার হলো, এটিই ছিল ওয়ার্নের ক্যারিয়ারের প্রথম অ্যাশেজ টেস্ট, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বল! সেখানেই করেন বাজিমাত।

শুধুমাত্র ম্যাচ কিংবা সিরিজের প্রেক্ষাপটেই নয়, সার্বিকভাবেই লেগ স্পিন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার বার্তা দিয়েছিল ওয়ার্নারের ওই ডেলিভারি।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে মহাকাব্যিক পারফরম্যান্স

এজবাস্টনে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনাল ম্যাচ। ২১৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বিনা উইকেটে ৪৮ রান তুলে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দলটি ইঙ্গিত দিচ্ছিল সেমি-ফাইনাল জুজু কাটিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে যাওয়ার। অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ব্রেক থ্রু।

এরপরই ওয়ার্নের আবিভার্ব। নিজের দুই ওভারের মধ্যে তিনি পাল্টে দেন ম্যাচের চিত্র। প্রথমে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন হার্শেল গিবসকে। লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল ব্যাটসম্যানকে ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে অফ স্টাম্পে।

পরের ওভারে তার প্রথম বল একইভাবে অনেকটা বাঁক খেয়ে ভেঙে দেয় গ্যারি কার্স্টেনের স্টাম্প। এক বল পরই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন হানসি ক্রোনিয়ে।

ওই দুই ওভারে কোনো রান না দিয়েই উইকেট তিনটি নেন ওয়ার্ন। তার বোলিং ফিগার ছিল তখন ৩-২-৩-৩!

রোমাঞ্চ-উত্তেজনার নানা ধাপ পেরিয়ে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ম্যাচ হয়ে যায় ‘টাই।’ সুপার সিক্স রাউন্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকায় অস্ট্রেলিয়া উঠে যায় ফাইনালে এবং পরে জিতে নেয় শিরোপা। ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা ম্যাচগুলোর একটি হয়ে আছে সেটি।

অ্যাশেজের সেই স্পেল

২০০৬ সালে অ্যাডিলেইডে অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। চতুর্থ দিন শেষে ড্রই মনে হচ্ছিল টেস্টের সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল। ইংল্যান্ড শেষ দিনে যখন ব্যাটিংয়ে নামে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেট হাতে রেখে তারা এগিয়ে ৯৭ রানে। কিন্তু ওয়ার্নের অসাধারণ এক স্পেলে ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়।

ওয়ার্নের টানা তিন ওভারে বিদায় নেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, ইয়ান বেল ও কেভিন পিটারসেন। মাঝের জন অবশ্য রান আউট হন। বাকি দুই জনের উইকেট জমা পড়ে ওয়ার্নের প্রাপ্তির খাতায়।

দিনের প্রথম ওভার দিয়ে শুরু, ২৭ ওভারের স্পেলে ওয়ার্ন পরে উইকেট নেন আরও দুটি। ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ১২৯ রানেই। ১৬৮ রানের লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়া ছুঁয়ে ফেলে ৬ উইকেট হাতে রেখে। ওয়ার্ন হন ‘ম্যাচ অব দা ম্যাচ।’