রডনি মার্শের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে টুইট করেছেন তখনও ১২ ঘণ্টা হয়নি। নিজেও নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি জমালেন অসীমের পানে। ক্রিকেটকে অনেক সমৃদ্ধ করে বিদায় নিলেন শেন ওয়ার্ন।
Published : 05 Mar 2022, 12:31 AM
ওয়ার্নের জাদুকরী তিন পারফরম্যান্স
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে মার্শ-ওয়ার্ন স্মরণ
বর্ণময় এই চরিত্রের বিদায়ে ক্রিকেট যেন আজ রিক্ত, শূন্য।
১৯৬৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভিক্টোরিয়ার ফের্নট্রি গালিতে জন্ম নেওয়া ওয়ার্ন মারা গেছেন কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের থাইল্যান্ডের কোহ সামুইয়ে। ধারণা করা হচ্ছে, মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক।
পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে অনুরোধ করা হয়েছে, গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য। যথা সময়ে তারাই জানাবেন সব কিছু।
ওয়ার্নের বোলিং যেমন ছিল যেমন ধাঁধা, রহস্য। তার ব্যক্তিগত জীবনটাও ছিল তা-ই। ঘটিয়েছেন বিচিত্র সব ঘটনা। কখনও কখনও পড়েছেন প্রবল সমালোচনার মুখেও। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগের দিন ধরা পড়েন মাদক পরীক্ষায়, নিষিদ্ধ হন এক বছরের জন্য। ১২ মাস পর ঠিকই ফেরেন প্রতাপের সঙ্গে।
টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০৮টি উইকেট নেওয়া ওয়ার্নের জীবনে এসেছে অসংখ্য নারী। এর জন্য কম মাশুল দিতে হয়নি। তিন সন্তান নিয়ে আলাদা হয়ে গেছেন স্ত্রী সিমোন ক্যালাহান। ব্রিটিশ একজন নারীকে অশালীন বার্তা পাঠিয়ে ২০০০ সালে হারিয়েছিলেন সহ-অধিনায়কের পদ।
ঝামেলায় জড়িয়েছেন সতীর্থ স্টিভ ওয়াহ ও রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়ার দারুণ সফল কোচ জন বুকাননের সঙ্গেও তার কম ঝামেলা হয়নি।
ক্রিকেটের শান্ত, নিস্তরঙ্গ ভূবনে ওয়ার্ন যেন নিয়ে আসেন ঝড়। বিশাল সব ঘুর্ণি, খ্যাতি আর বিতর্ক। বাজিকর, ডায়েট পিল, আরও বিতর্ক এবং সব সময়ে কাগজের হেডলাইনে থাকা- এই সব মিলিয়েই ছিল ওয়ার্নের জীবন। ২০০০ সালে যাকে উইজডেন নির্বাচিত করেছিল বিংশ শতাব্দীর সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন হিসেবে, ২০০৬ সালে তাকে দেখা গেল আরও শাণিত চেহারায়।
নানা ঘটনা আর নাটকীয়তায় ভরা এক জীবন বেছে নিয়েছিলেন ওয়ার্ন। তার জীবনের একটা অংশ রূপকথার মতো আরেক অংশ বিতর্কের কালিমালিপ্ত। আছে টেস্ট হ্যাটট্রিক, আছে বিশ্বকাপের ফাইনালে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতার কীর্তি।
তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক বই। তার বোলিং নিয়ে হয়েছে অনেক গবেষণা। সেঞ্চুরি না করে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান তার। ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত ডেলিভারিটি সম্ভবত তারই করা। ১৯৯৩ সালে মাইক গ্যাটিংকে আউট করা সেই ডেলিভারি পরিচিত ‘বল অব দা সেঞ্চুরি’ নামে। হারাতে বসা লেগ স্পিনকে দিয়েছিলেন পুনর্জীবন।
নিষেধাজ্ঞার সময়টায় হারিয়ে যাননি ওয়ার্ন। ২০০৪ সালে ফেরেন আরও সমৃদ্ধ হয়ে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে নেন ২৬ উইকেট। পরের মৌসুমে ৯৬ উইকেট নিয়ে গড়েন বিশ্বরেকর্ড। তবুও জেতা হয়নি অ্যালান বোর্ডার মেডেল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লেগ স্পিনের অস্ত্র ভাণ্ডার হয়েছিল সমৃদ্ধ।
খেলোয়াড়ি জীবন শেষে যোগ দেন ধারাভাষ্যে। খেলার গভীরে গিয়ে ব্যাখ্যা করতেন বিভিন্ন টেকনিক্যাল ব্যাপার। একই সঙ্গে মাঝে মধ্যে করতেন বিস্ফোরক মন্তব্যও।
একজন পেশাদার পোকার খেলোয়াড়ও ছিলেন ওয়ার্ন। খেলোয়াড়ি জীবনে প্রতিপক্ষের সঙ্গে যে মানসিক লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়তেন, তাসের এই খেলায় সেটারই কিছুটা ছাপ দেখতেন তিনি। খেলাটিতে এতটায় জড়িয়ে ছিলেন যে, ২০০৯ সালে অ্যাশেজ ধারাভাষ্য দিতে আসতেন দেরি করে।
ধীরে ধীরে ক্রিকেটে আরও মনোযোগী হচ্ছিলেন ওয়ার্ন। হতে চেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের কোচ। হতে পারতেন কি না, সেটা সময়ই বলে দিতো। কিন্তু জীবন সেই সুযোগ দিলো না ওয়ার্নকে। ক্রিকেট বিশ্বকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। স্রেফ ৫২ বছর বয়সে।