অসীম শূন্যতায় স্পিন জাদুকর

অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্ন আর নেই। ৫২ বছর বয়সে মারা গেছেন সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে বিবেচিত সাবেক এই লেগ স্পিনার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2022, 02:14 PM
Updated : 4 March 2022, 08:41 PM

ওয়ার্নের ম্যানেজমেন্ট সংস্থা স্থানীয় সময় শুক্রবার মাঝরাতে এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। তারা ধারণা করছে, থাইল্যান্ডে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে ওয়ার্নের।

“শেনকে অচেতন অবস্থায় তার ভিলায় পাওয়া যায়। মেডিকেল স্টাফের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো যায়নি।”

“কঠিন এই সময়ে গোপনীয়তা রক্ষার অনুরোধ জানিয়েছে তার পরিবার। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।”

১২ ঘণ্টার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। হার্ট অ্যাটাকের পর এক সপ্তাহ ধরে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শুক্রবার অ্যাডিলেইডে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক কিপার-ব্যাটসম্যান রড মার্শ।

উইজডেনের শতাব্দী সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন ওয়ার্ন ১৫ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে উইকেট নিয়েছেন ৭০৮টি। টেস্ট ইতিহাসে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ওয়ানডেতে তার উইকেট ২৯৩টি। জিতেছেন ১৯৯৯ বিশ্বকাপ। ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই ছিলেন ম্যাচ সেরা।

১৯৯২ সালে সিডনিতে ওয়ার্নের টেস্ট অভিষেক ভারতের বিপক্ষে। পরের বছর ওয়েলিংটনে হয় ওয়ানডে অভিষেক। সব দলের বিপক্ষেই তিনি ছিলেন দারুণ সফল। ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার পারফরম্যান্স ছিল চমৎকার। লাল বলে ৭০৮ টেস্ট উইকেটের ৩২৫টিই এই দুই দলের বিপক্ষে।

১৯৯৩ অ্যাশেজে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মাইক গ্যাটিংকে বোল্ড করা তার সেই জাদুকরি ডেলিভারি ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্থায়ী জায়গা পেয়ে গেছে ‘বল অব দা সেঞ্চুরি’ নামে।

‘ওয়ার্নি’ নামে পরিচিত এই ক্রিকেটার কোনো প্রশ্ন ছাড়াই বিশ্ব ক্রিকেটের সত্যিকারের আইকনদের একজন। গত শতকের নম্বইয়ের দশকের শুরুতে প্রায় এককভাবে লেগ স্পিন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন তিনি।

পাকিস্তানের আব্দুল কাদিরের মতো গ্রেটরা যদিও লেগ স্পিন শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, ওয়ার্ন সেখানে যোগ করেছিলেন নতুন গ্ল্যামার ও আক্রমণাত্মক মনোভাব। স্বর্ণকেশী চুলের সঙ্গে প্রখর কৌশলী মস্তিষ্ক তাকে পরিচিত করে তুলেছিল আলাদাভাবে।

টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকটা যদিও তার মনে রাখার মতো ছিল না। ১৫০ রানে পেয়েছিলেন কেবল একটি উইকেট। তৃতীয় টেস্টেই রাখেন সম্ভাবনার ছাপ। কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলের ১৬ রানের নাটকীয় জয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৩ উইকেট।

অভিষেক বছরের শেষ মাসে নিজের পঞ্চম টেস্টে উপহার দেন ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স। মেলবোর্নে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ৭ উইকেট। জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। আর পরের বছর অ্যাশেজের পারফরম্যান্স দিয়ে কিংবদন্তিদের কাতারে ওঠার যাত্রা শুরু তার।

ওয়ার্নের ক্যারিয়ারে বিতর্কও কম ছিল না। ১৯৯৫ সালে শ্রীলঙ্কা সফরের আগের বছর এক ভারতীয় বুকিকে তথ্য দেওয়ায় তাকে ও তার সতীর্থ মার্ক ওয়াহকে জরিমানা করা হয় ১৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার।   

২০০৩ বিশ্বকাপের আগে মাদক পরীক্ষায় ধরা পড়েন ওয়ার্ন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হন এক বছরের জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া ও জিম্বাবুয়েতে হওয়া সেই আসর শুরুর আগেই দেশে ফিরতে হয় তাকে। যে মাদকের জন্য তিনি নিষিদ্ধ হয়েছিলেন, সেটি নাকি ওজন কমানোর জন্য দিয়েছিলেন তার মা, দাবি করেছিলেন ওয়ার্ন।

পরে আবার তিনি ফেরেন ক্রিকেটে, উপহার দেন অনেক ম্যাচ জেতানো পারফম্যান্স। হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি। ২০০৬-০৭ অ্যাশেজে বিদায় বলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। ইংল্যান্ডকে ৫-০ তে হোয়াইটওয়াশ করার পর মাঠ ছাড়েন তার দীর্ঘদিনের সতীর্থ গ্লেন ম্যাকগ্রার হাত ধরে। ওই ম্যাচ দিয়ে পেসার ম্যাকগ্রা ইতি টানেন টেস্ট ক্যারিয়ারের।

সেই সিরিজে ওয়ার্নের প্রাপ্তি ছিল ২৩ উইকেট। যার মধ্যে ছিল তার শেষ ও ৩৭তম পাঁচ উইকেট, মেলবোর্নে প্রথম ইনিংসে।  

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার পর তিনি আইপিএলে খেলেছেন ৩৭ বছর বয়সে। ২০০৮ সালে প্রথম আসরে তার নেতৃত্বেই শিরোপা জিতেছিল রাজস্থান রয়্যালস। একই সঙ্গে দলটির কোচও ছিলেন তিনি। পরে কোচিং করিয়েছেন ইংল্যান্ডের একশ বলের টুর্নামেন্ট দা হানড্রেডে, ছিলেন লন্ডন স্পিরিটের প্রধান কোচ।

কিছুদিন আগে স্কাই স্পোর্টসের পডকাস্টে ইংল্যান্ডের কোচ হওয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেছিলেন ওয়ার্ন। কিন্তু, নিভে গেল তার জীবন প্রদীপ।