শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে স্বাগতিকদের রান ৬ উইকেটে ৩৫৭। এই নিয়ে ১৪ বার টেস্টের প্রথম দিন সাড়ে তিনশর বেশি রান করল ভারত, যার ছয়টিই লঙ্কানদের বিপক্ষে।
পান্ত টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পাননি মাত্র ৪ রানের জন্য। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর ঝড় তুলে এই কিপার-ব্যাটসম্যান আউট হন ৯৬ রানে। ৯৭ বলের ইনিংসে ৯টি চারের পাশে ছক্কা ৪টি।
ফিফটি এসেছে আরেক জনের ব্যাট থেকে। বাজে ফর্মে দল থেকে বাদ পড়া চেতেশ্বর পুজারার জায়গায় তিন নম্বরে সুযোগ পেয়ে হনুমা বিহারি করেন ৫৮ রান।
কোহলি থামেন ফিফটির কাছে গিয়ে, ৪৫। এই রান করার পথেই সাবেক ভারত অধিনায়ক স্পর্শ করেন ৮ হাজার টেস্ট রানের মাইলফলক। দিন শেষে ঠিক একই স্কোরে অপরাজিত রবীন্দ্র জাদেজা।
পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের উইকেটে পেসারদের জন্য নেই তেমন সহায়তা। প্রথমে দিনে স্পিনারদের জন্য অবশ্য টার্ন কিছুটা মিলেছে। কিন্তু ভারতের একাদশে যেখানে তিন স্পিনার, সেখানে নিজেদের ৩০০তম টেস্টে শ্রীলঙ্কা বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়েছে মাত্র একজন- লাসিথ এম্বুলদেনিয়া। ২ উইকেট নিয়ে দিনের সফলতম বোলার তিনিই।
বিরাট কোহলির শততম টেস্টে তার হাতে বিশেষ ক্যাপ তুলে দেন ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ছবি: বিসিসিআই
আরেক ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল শুরুতে সময় নেন কিছুটা। ১১ বলে রানের খাতা খোলেন বিশ্ব ফার্নান্দোকে পরপর দুই চার মেরে। তবে তিনিও টেনে নিতে পারেননি ইনিংস। বাঁহাতি স্পিনার এম্বুলদেনিয়ার বল ডিফেন্স করার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান (৪৯ বলে ৩৩)।
ভারতের একাদশ ক্রিকেটার হিসেবে কোহলি শততম টেস্ট খেলতে নেমে দ্বিতীয় বলেই খেলেন হাওয়ায় ভাসিয়ে। কোনো বিপদ অবশ্য হয়নি, পেয়ে যান দুই রান। বিহারি ততক্ষণে উইকেটে থিতু। কোহলির সঙ্গে জমে ওঠে তার জুটি।
লাঞ্চ বিরতিতে ভারতের রান ছিল ২ উইকেটে ১০৯। পরের এক ঘণ্টায় কোনো উইকেট না হারিয়ে স্কোর ছাড়িয়ে যায় দেড়শ। বিহারি ফিফটি পূর্ণ করেন ৯৩ বলে।
সিঙ্গেল নিয়ে ৩৮ রানে পৌঁছে কোহলির পূর্ণ হয়ে যায় ৮ হাজার। পঞ্চম দ্রুততম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি, ১৬৯ ইনিংস।
এরপর আর বেশিক্ষণ টেকেননি কোহলি। এম্বুলদেনিয়ার ফুল লেংথ বল সোজা ব্যাটে খেলতে চেয়েছিলেন, শেষ মুহূর্তে বল বাঁক নিয়ে আঘাত করে অফ স্টাম্পে। ৭৬ বলে খেলা ৪৫ রানের ইনিংসটি গড়া ৫টি চারে। তৃতীয় উইকেট জুটি ১৫৫ বলে ৯০ রানের।
৫৬ রানে পয়েন্টে বিহারির ক্যাচ ফেলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। যদিও বিশ্ব ফার্নান্দোর বলটা ছিল ‘নো’। পরে বাঁহাতি এই পেসারই ফেরান বিহারিকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন ২৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ১২৮ বলে ৫টি চারে সাজানো তার ৫৮ রানের ইনিংস।
৯৬ রানের ইনিংসের পথে রিশাভ পান্তের একটি শট। ছবি: বিসিসিআই
জাদেজাকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন পান্ত। ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি ৭৩ বলে। এরপর তোলেন ঝড়। পরের ১৫ বলে করে ফেলেন ৪২! এম্বুলদেনিয়াকে টানা দুই ছক্কার পর মারেন চার, শেষ বলে আরেকটি চার। ওই ওভার থেকে আসে ২২ রান। পরের ওভারে ধনঞ্জয়াকে ওড়ান চার-ছক্কায়। জুটির রান একশ স্পর্শ করে ১০৮ বলে।
পান্তের সেঞ্চুরি তখন মনে হচ্ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু দ্বিতীয় নতুন বলে প্রথম ওভারেই তাকে থামিয়ে দেন সুরঙ্গা লাকমাল। এই সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলতে যাওয়া পেসারের বল আয়েশি ভঙ্গিতে ডিফেন্স করার চেষ্টায় বোল্ড হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে পাঁচবার নব্বইয়ের ঘরে আউট হলেন চারটি সেঞ্চুরি করা পান্ত। আগের টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কেপ টাউনে চতুর্থ ইনিংসে খেলেছিলেন অপরাজিত ১০০ রানের দারুণ ইনিংস।
তার বিদায়ের পর রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে নিয়ে দিনের বাকিটা পার করে দেন জাদেজা। বাঁহাতি এই স্পিনিং অলরাউন্ডার ৮২ বলে ৫ চারে ৪৫ রানে খেলছেন। ১০ রানে অপরাজিত আছেন অশ্বিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৮৫ ওভারে ৩৫৭/৬ (মায়াঙ্ক ৩৩, রোহিত ২৯, বিহারি ৫৮, কোহলি ৪৫, পান্ত ৯৬, শ্রেয়াস ২৭, জাদেজা ৪৫*, অশ্বিন ১০*; লাকমল ১৬-১-৬৩-১, ফার্নান্দো ১৬-১-৬৯-১, এম্বুলদেনিয়া ২৮-২-১০৭-২, ধনঞ্জয়া ১১-১-৪৭-১, আসালাঙ্কা ৩.১-০-১৪-০)