বিশ্বকাপ অভিষেক জয়ে রাঙানোর স্বপ্ন বাংলাদেশের

১৯৯৯ থেকে ২০২২। ইংল্যান্ড থেকে নিউ জিল্যান্ড। প্রায় ২৩ বছর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছিল চেমসফোর্ডের কাউন্টি গ্রাউন্ডে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশে ছেলেদের। এবার ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভাল মাঠে সূচনা হচ্ছে নতুন আরেকটি পথচলার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াই দিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে নামছে বাংলাদেশের মেয়েরা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2022, 09:47 AM
Updated : 4 March 2022, 10:19 AM

কন্ডিশন বিরুদ্ধ, প্রতিপক্ষ কঠিন, চ্যালেঞ্জ আরও অনেক। তবে স্বপ্ন আকাশছোঁয়া। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির কণ্ঠে আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ, জয় দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করতে চান। দারুণ কিছু উপহার দিয়ে স্মরণীয় করে রাখতে চান তারা আবির্ভাবের আসর।

বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর চারটায় শুরু এই ম্যাচ।

ছেলেদের বিশ্বকাপ অভিষেকের সঙ্গে মেয়েদের একটু পার্থক্য আছে বটে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ ছিল সব মিলিয়েই বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের প্রথম পদক্ষেপের পালা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অস্তিত্বই তখন ছিল না। মেয়েদের দল চারটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ফেলেছে এর মধ্যেই। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের মর্যাদা, ওজন, গুরুত্ব, সবই অনেক বেশি। অনেক অপেক্ষার পর, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই মিলেছে অভিজাত এই টুর্নামেন্টে খেলার টিকেট। ক্রিকেটারদের ভালোলাগার পরিধিও তাই অনেক বেশি।

স্রেফ মাঠে নেমেই সেই রোমাঞ্চের সমাপ্তি চায় না বাংলাদেশ দল। মাঠ ছাড়তে চান তারা বিজয়ীর বেশে। এমনিতে ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ খুব বেশি পায় না এই দল। ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার ১১ বছরে সব মিলিয়ে ম্যাচ খেলতে পেরেছে দলটি ৪২টি। সবচেয়ে বেশি ম্যাচের প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপেও প্রথম প্রতিপক্ষ তারাই।

প্রোটিয়া মেয়েদের সঙ্গে এই ১৭ ম্যাচে যদিও জয় স্রেফ ২টি। তবু চেনা প্রতিপক্ষ বলেই আত্মবিশ্বাস বেশি, ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার।

“আমাদের জন্য এবং সবার জন্যই প্রথম ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টুর্নামেন্টে আমরা কীভাবে এগোবে, সেটা অনেকটা বোঝা যাবে। আমরা জয়ের জন্যই নামব। আমাদের জন্য এটা সুযোগ, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমরা ভালোভাবে জানি। জয় দিয়ে শুরু করার ভালো একটি সম্ভাবনা তাই আমাদের আছে।”

টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগের দিন স্বপ্নের কথা শোনাচ্ছেন নিগার সুলতানা।

“দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমরা অনেক খেলেছি। তাদের শক্তি সম্পর্কে তাই আমাদের জানা আছে। ওদের পেসারদেরও আমরা খেলেছি। কিছু ধারণা তাই আছে। কিছু হোমওয়ার্ক অবশ্যই করেছি আমরা। পরিকল্পনাগুলো আমরা ম্যাচে বাস্তবায়ন করতে চাই।”

কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ও নিবিড়ভাবে প্রস্তুতি সারতে বিশ্বকাপ শুরুর এক মাস আগে ঢাকা ছাড়ে নিগার সুলতানার দল। নিউ জিল্যান্ডে পৌঁছে অবশ্য কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয় দিন দশেক। এরপর অকল্যান্ড ও নেলসনে চলে অনুশীলন পর্ব। নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচের পর গত সোম ও বুধবার তারা আইসিসির দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে লিঙ্কনে।

সেই ম্যাচ দুটির ফল অবশ্য ভালো হয়নি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং-বোলিং কিছুই খুব ভালো হয়নি, ম্যাচ হারে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে। পাকিস্তানের বিপক্ষে বোলিং ভালো হলেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারতে হয় ৭ রানে।

তবে গা গরমের ম্যাচে ফলাফলের চেয়ে বেশি জরুরি প্রস্তুতি সেরে নেওয়া। সেদিক হেরে যাওয়ায় বরং ইতিবাচক কিছু দেখছেন নিগার।

“আমার মনে হয়, গা গরমের ম্যাচে আমাদের প্রস্তুতি ভালোই হয়েছে। হয়তো ফল আমাদের পক্ষে আসেনি। তবে ইতিবাচক অনেক কিছুই আমরা পেয়েছি। প্রস্তুতি ম্যাচের সেই প্রাপ্তিগুলোকেই মূল টুর্নামেন্টে কাজে লাগাতে চাই আমরা।

“প্রস্তুতি ম্যাচ দুটি জিতলে হয়তো ঘাটতিগুলো আমাদের চোখে পড়ত না। সেদিক থেকে আমি খুশিই। জিতলে অনেক ভুল আড়াল হয়ে যায়। ঘাটতিগুলো ঢাকা পড়ে যায়। সেদিক থেকে আমাদের জন্য ভালো ব্যাপার ছিল যে ঘাটতিগুলো নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের দলের জন্য অনেক ভালো হয়েছে এটা।”

ঘাটতিগুলোয় কোথায় ছিল, কোন দিকগুলো নিয়ে কাজ করেছেন এবং কোথায় উন্নতি করতে চান তারা, সেসবও তুলে ধরলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

“পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দুটিতে অনেক ব্যাটার ভালো শুরু করেছে, শেষ করতে পারেনি। এভাবে সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে যে কী করলে ইনিংস লম্বা করা যায়। বোলারদের ক্ষেত্রে অনেকে ভালো শুরু করেছে নতুন বলে, অনেক পারেনি। ডেথ ওভারে ভালো করেছে। অলরাউন্ডারদের অনেকে হয়তো বোলিংয়ে অবদান রাখছে, ব্যাটিংয়ে নয়। ভালো শুরু করেও শেষ করতে পারেনি।”

“সেগুলো নিয়ে এর মধ্যেই মিটিংয়ে আলোচনা করেছি আমরা। কোচিং স্টাফরা কাজ করছেন এবং আমরা চেষ্টা করছি একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলে অনুপ্রাণিত করার যে, দল হিসেবে পারফর্ম করতে পারলে ভিন্ন কিছু হতে পারে আমাদের।”

দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথমটিতে ৮১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন শারমিন আক্তার, পরেরটিতে ৭১ রান আসে ফারজানা হকের ব্যাট থেকে। কিন্তু তাদেরকে লম্বা সময় সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। তাই ভুগতে হয় দলকেও। মূল আসরে তাই জুটি গড়ায় মনোযোগ দেওয়ার কথা বললেন নিগার।

বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশ দল। ছবি: বিসিবি।

“আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি, এই কন্ডিশনে কীভাবে খেলতে হবে। জুটি গড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে শারমিন আক্তার সুপ্তা অসাধারণ ইনিংস খেলেছে। তাকে দু-একজন সাপোর্ট দিতে পারলে আমাদের রান দুইশ না হয়ে ২৫০-২৬০ রানের কাছে যেতে পারতাম। আমাদের প্রস্তুতির জন্য ভালো হতো।”

“পরের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে পিংকি (ফারজানা) দারুণ খেলেছেন, শামিমা সুলতানা দারুণ শুরু করেছে। সেখানে রুমানা আহমেদ আরেকটু টিকে থাকতে পারলে ভালো হতো। রিতু মনির ভালো অবদান ছিল। ব্যাটাররা যেহেতু ভালো শুরু পাচ্ছি, শেষটা করতে পারছি না, লক্ষ্য থাকবে তাই ভালো শুরু পেলে শেষ পর্যন্ত খেলার। জুটির প্রতি অবশ্যই মনোযোগ থাকবে।”

এই তাড়না আর আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করেই প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে দল। এই ম্যাচে ভালো করে পরের ম্যাচগুলোর জন্যও বিশ্বাসের রসদ জোগাতে চান নিগার।

“আমরা প্রতিটি ম্যাচ ধরে এগোতে চাই। আমাদের প্রথম বিশ্বকাপ এটি, স্মরণীয় করে রাখতে চাই। আমরা সবাই জানি, শুরুটা ভালো করা জরুরি। তাহলে টুর্নামেন্টের বাকিটুকুর জন্য আরও সাহস ও আত্মবিশ্বাস পাব আমরা। মেয়েদেরকে আমি সেই বিশ্বাসই দেওয়ার চেষ্টা করছি যে, আমরা প্রতিপক্ষর নাম দেখব না, দক্ষিণ আফ্রিকা হোক বা যে কোনো দল, আমরা নিজেদের শক্তির জায়গা দেখাব, দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

“বড় দলগুলির বিপক্ষে যে ম্যাচগুলি আমরা জিতেছি, সেসবে তাকালে দেখা যাবে, আমরা দল হিসেবে খেলেছি। সবার অবদান ছিল, বোলিং ও ব্যাটিং ইউনিটের। এবারও তেমন কিছু করতে চাই আমরা। আমাদের ভালো সুযোগ আছে বিশ্বকাপে ভালো করার। দল হিসেবে আমরা অনেক কষ্ট করেছি এখানে আসার জন্য, ভালো কিছু করার জন্য এবং আমাদের অনেক ভালো সুযোগ আছে এখানে।”