নিউ জিল্যান্ডকে অপেক্ষায় রেখে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘প্রথম’

দুপুর বেলায় হঠাৎ প্রায় অন্ধকার চারপাশ। ক্রাইস্টচার্চের আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগ্যাকাশেও বলা যায় দুর্যোগের ঘনঘটা! টিপটিপ বৃষ্টি ক্রমেই রূপ নিল ভারী বর্ষণে। চা-বিরতি হয়ে গেল আগেভাগেই। জয় থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার দূরত্ব তখন স্রেফ ১ উইকেটের। কিন্তু দুরু দুরু বুকে তাদের অপেক্ষা, সেই সময়টা মিলবে তো! নিউ জিল্যান্ড তখন আশায় প্রকৃতির সহায়তায় ম্যাচ বাঁচানোর। শেষ পর্যন্ত খুব দীর্ঘায়িত হলো না বৃষ্টি। দক্ষিণ আফ্রিকাও পেয়ে গেল জয়ের ঠিকানা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2022, 06:43 AM
Updated : 1 March 2022, 07:12 AM

ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় টেস্টে নিউ জিল্যান্ডকে ১৯৮ রানে হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো সমতায়।

তবে প্রথম টেস্টে নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সবচেয়ে বাজে পরাজয়ের পর যেভাবে ঘুরে দাঁড়াল দক্ষিণ আফ্রিকা, ড্র সিরিজের শেষটায় তৃপ্তি তাদেরই বেশি থাকার কথা।

হেরে গিয়ে নিউ জিল্যান্ড হারাল আরেকটি সুযোগ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয় এখনও অধরাই রইল তাদের। বরং তাদেরকে অপেক্ষায় রেখে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিউইদের ঘাঁটি বলে পরিচিত হ্যাগলি ওভালে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েও এই প্রথম জিততে পারল কোনো দল।

শেষ ইনিংসে ৪২৬ রান তাড়ায় ৪ উইকেটে ৯৪ রান নিয়ে শেষ দিন শুরু করে নিউ জিল্যান্ড। উইকেট আঁকড়ে রেখে দিন পার করার চেষ্টা দেখা যায়নি দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ডেভন কনওয়ে ও টম ব্লান্ডেলের ব্যাটিংয়ে। বরং সহজাত ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যাওয়ার কৌশল বেছে নেন তারা। দিনের প্রথম ৮ ওভারে আসে ৩৩ রান।

পরে কাগিসো রাবাদা ও ভিয়ান মুল্ডার একটু চেপে ধরেন রানের গতি। সেটির সুফল পান লুথো সিপামলা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঙ্ক্ষিত উইকেট এনে দেন দলের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ বোলারই। কনওয়েকে ফিরিয়ে তিনি ভাঙেন ৮৫ রানের জুটি।

একটুর জন্য সপ্তম টেস্টে চতুর্থ সেঞ্চুরির স্বাদ পাননি কনওয়ে। যে দেশে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা, ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বড় অংশ যেখানে, সেই দেশের বিপক্ষে দারুণ খেলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান করেন ১৮৮ বলে ৯২।

ব্লান্ডেল ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম এরপর লাঞ্চ পর্যন্ত নিরাপদেই পার করেন। লাঞ্চের পর মার্কো ইয়ানসেনের দারুণ বোলিংয়ে আর কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। দুর্দান্ত এক স্পেলে বাঁহাতি এই পেসার ফেরান ব্লান্ডেল, ডি গ্র্যান্ডহোম ও কাইল জেমিসনকে।

কাগিসো রাবাদার আরেকটি উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার উল্লাস। ছবি: ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা।

দক্ষিণ আফ্রিকার জয় যখন সময়ের ব্যাপার, বৃষ্টি বয়ে আনে তখন আশা-নিরাশার দোলাচল। শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি প্রোটিয়াদেরই। ৪০ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারায় কিউইরা।

৮ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা রাবাদা। ২ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা ম্যাট হেনরি।

৬ ম্যাচে স্রেফ ২ জয় নিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এখন পয়েন্ট তালিকার ৬ নম্বরে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নিউ জিল্যান্ড। ৫ ম্যাচে ৩ জয়ে ৪ নম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস:  ৩৬৪

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৯৩

দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৩৫৪/৯ (ডি.)

নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪২৬, আগের দিন ৯৪/৪) ৯৩.৫ ওভারে ২২৭ (কনওয়ে ৯২, ব্লান্ডেল ৪৪, ডি গ্র্যান্ডহোম ১৮, জেমিসন ১২, সাউদি ১৭, ওয়্যাগনার ১০*, হেনরি ০; রাবাদা ১৯-৫-৪৬-৩, ইয়ানসেন ২৩-৬-৬৩-৩, মহারাজ ৩১.৫-৯-৭৫-৩, সিপামলা ১৪-৫-২৯-১, মুল্ডার ৬-১-১৩-০)।

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৮ রানে জয়ী।

সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজ ১-১ ড্র।

ম্যান অব দা ম্যাচ: কাগিসো রাবাদা।

ম্যান অব দা সিরিজ: ম্যাট হেনরি।