সিরিজ জয়ের পর শেষ ম্যাচে আরও ১০ পয়েন্টের জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নামার কথা বলেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু পারফরম্যান্সে পড়ল না সেই প্রচেষ্টার প্রতিফলন। বাংলাদেশকে স্রেফ উড়িয়ে সেই ১০ পয়েন্ট নিয়ে গেল আফগানিস্তান।
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের জয় ৭ উইকেটে। টস জয়ী বাংলাদেশকে ১৯২ রানে গুটিয়ে দিয়ে আফগানরা জিতে যায় ৫৯ বল বাকি রাখে।
আফগানদের দাপুটে পারফরম্যান্সের প্রতীকি বলা যায় রহমানউল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরিকে। ছোট রান তাড়া আরও সহজ হয়ে যায় তার অপরাজিত ১০৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে। ২০ বছর বয়সী ওপেনার ক্যারিয়ারের প্রথম ৯ ওয়ানডেতে তিনবার পঞ্চাশ ছুঁয়ে প্রতিটিকেই রূপ দিলেন শতরানে।
এই গুরবাজকেই ৬০ রানে জীবন দেন মুশফিকুর রহিম, ৬১ রানে আরও সহজ ক্যাচ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। দুবারই দুর্ভাগা বোলার শরিফুল ইসলাম।
লিটন কুমার দাসের আরেকটি দারুণ ইনিংস ছাড়া এই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি আর কিছু পাওয়া যাবে না আতশ কাঁচ দিয়ে খুঁজলেও। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন এবার করেন ৮৬।
অপ্রাপ্তির এই ম্যাচের শুরুটায় চাওয়া আর পাওয়া এগিয়ে যাচ্ছিল হাত ধরাধরি করেই। উইকেটে আগের ম্যাচগুলোর মতোই ছিল ঘাস। এরকম উইকেটেই আগের ম্যাচে আগে ব্যাট করে তিনশ ছাড়ায় বাংলাদেশ। এবারও টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেন, প্রথম ৮-১০ ওভার সাবধানে খেলে পার করে দিলেই আর সমস্যা হবে না।
প্রাথমিক সেই লক্ষ্য পূরণও হয়ে যায় তামিম ও লিটনের সতর্ক ব্যাটিংয়ে। প্রথম ৭ ওভারে রান আসে ১৯। পরের তিন ওভারে লিটনের চার বাউন্ডারিতে রানের গতি বাড়ে একটু। ১০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪৩।
কাঙ্ক্ষিত ভিত পাওয়ার পর সৌধ গড়ে তোলার পালা। কিন্তু অধিনায়ক সেই অভিযানে থাকতে পারেননি দিশারী হয়ে। আগের দুই ম্যাচে এলবিডব্লিউ করার পর ফজলহক ফারুকি এবার বোল্ড করে দেন তামিমকে। অন সাইডে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বাংলাদেশ অধিনায়ক ফেরেন ২৫ বলে ১১ রানে।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এই প্রথম এক সিরিজের সব ম্যাচে একই বোলারের বলে আউট হলেন দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান।
ইনিংস গড়ে ওঠা তাতে ব্যাঘাত ঘটেনি। ফারুকিকে প্রথম বলেই বাউন্ডারিতে শুরু করেন সাকিব। থিতুও হয়ে যান দ্রুতই। লিটনের সঙ্গে তার জুটি জমে ওঠে।
অনায়াস ব্যাটিংয়ে জুটির ফিফটি আসে ৬০ বলে। লিটন পঞ্চাশে পা রাখেন ৬৩ বল খেলে। দল একশ পেরিয়ে যায় ২১ ওভারে।
এরপরই পথ হারানোর শুরু। আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বাড়তি লাফানো বলে সাকিব সফট হ্যান্ডে ডিফেন্স করলেও বল গিয়ে লাগে স্টাম্পে। তিনি আউট হন ৩৬ বলে ৩০ করে। পরের আর কোনো ব্যাটসম্যান পারেননি ৩০ ছুঁতে।
আগের ম্যাচে লিটনের সঙ্গে দুইশ রানের জুটি গড়া মুশফিকুর রহিম এবার রশিদ খানের অফ স্টাম্প ঘেঁষা ডেলিভারিতে আউট ৭ রানেই। একটু পর ইয়াসির আলিকে ফিরিয়ে রশিদ পূর্ণ করেন ১৫০ ওয়ানডে উইকেট।
৮০ ম্যাচে ১৫০ উইকেট হলো তার, ওয়ানডে ইতিহাসে যা তৃতীয় দ্রুততম।
এরপর লিটন দাসের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর জুটি জমে উঠতে শুরু করেছিল। কিন্তু লিটনের বিদায়ে শেষ হয় সেই আশাও। মোহাম্মদ নবিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শেষ হয় ১১৩ বলে লিটনের ৮৬ রানের ইনিংস।
নবিকে তুলে মারতে গিয়েই আউট হয়ে যান প্রথম ম্যাচের নায়ক আফিফ হোসেন। সেই ম্যাচের আরেক নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ কাটা পড়েন রান আউটে।
মাহমুদউল্লাহ টিকে থাকলেও পারেননি লোয়ার অর্ডারদের আগলে রাখতে। ৫৩ বল খেলে কোনো বাউন্ডারি তিনি মারতে পারেননি। ক্রিজে থেকেই তিনি দেখেন আরেক প্রান্ত তিন ব্যাটসম্যানের রান আউট। নিজে অপরাজিত থেকে যান ২৯ রান করে, কিন্তু দল গুটিয়ে যায় ১৯ বল বাকি থাকতে। ৩৯ রানের মধ্যে পড়ে শেষ ৬ উইকেট।
৩৫ রান করে রিয়াজ স্টাম্পড হন সাকিবের বলে। কিন্তু বাংলাদেশ এরপর পারেনি নাটকীয় কিছু করতে। গুরবাজ ও রহমত শাহ দ্বিতীয় উইকেটে ১০০ রানের জুটিতে দলকে নিয়ে যান লক্ষ্যের দিকে।
জয়ের কাছে গিয়ে মিরাজের বলে রহতম স্টাম্পড হন ৪৭ রানে। এই অফ স্পিনার একটু পর ফিরিয়ে দেন আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদিকেও। তাতে স্রেফ আনুষ্ঠানিক ব্যবধান একটু কমে, আফগানদের দাপট মুছে যায়নি মোটেও।
৭ চার ও ২ ছক্কায় ১১০ বলে ১০৬ রানে অপরাজিত থেকে মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়েন গুরবাজ।
মাথা নীচু হয়ে যাচ্ছে না বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও। তবে সিরিজ জয়ের স্বস্তির পর শেষের এমন পরাজয়ে অস্বস্তির কাঁটায় বিদ্ধ হওয়ার কথা তাদের। এজন্যই হয়তো জয়ী দল হিসেবে ফটোসেশনের সময়টুকু স্বতস্ফূর্ত হলো না। মুখে হাসি থাকলেও তাতে প্রাণের ছোঁয়া পাওয়া গেল না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৬.৫ ওভারে ১৯২ (তামিম ১১, লিটন ৮৬, সাকিব ৩০, মুশফিক ৭, ইয়াসির ১, মাহমুদউল্লাহ ২৯*, আফিফ ৫, মিরাজ ৬, তাসকিন ০, শরিফুল ৭, মুস্তাফিজ ১: ফারুকি ৭.৫-০-৩৩-১, মুজিব ৮-০-৩৭-০, ওমরজাই ৬-০-২৯-১, নাইব ৫-০-২৫-০, রশিদ ১০-০-৩৭-৩, নবি ১০-০-২৯-২)।
আফগানিস্তান: ৪০.১ ওভারে ১৯৩/৩ (গুরবাজ ১০৬*, রিয়াজ ৩৫, রহমত ৪৭, শাহিদি ২, নাজিবউল্লাহ ১*; শরিফুল ৭-১-৪১-০, তাসকিন ৬-০-৩৪-০, সাকিব ১০-০-৪৭-১, মুস্তাফিজ ৬-০-২৪-০, মিরাজ ৮.১-১-৩৭-২, আফিফ ২-০-৮-০, ইয়াসির ১-০-২-০)।
ফল: আফগানিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: রহমানউল্লাহ গুরবাজ
ম্যান অব দা সিরিজ: লিটন কুমার দাস