শ্রেয়াসের ঝড়ো ব‍্যাটিংয়ে ভারতের টানা ১২

দলের বাজে শুরুর পর প্রায় একার চেষ্টায় দেড়শ রানের কাছে সংগ্রহ নিয়ে গেলেন দাসুন শানাকা। কিন্তু উইকেটে বেশ সহায়তা থাকলেও সেই রান নিয়ে খুব একটা লড়াই করতে পারলেন না শ্রীলঙ্কার বোলাররা। আরও একবার তাদের ওপর চড়াও হয়ে ব‍্যবধান গড়ে দিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। সিরিজে তার টানা তৃতীয় ফিফটিতে লঙ্কানদের হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ল ভারত।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2022, 05:07 PM
Updated : 27 Feb 2022, 05:51 PM

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রোহিত শর্মার সর্বোচ্চ ম‍্যাচ খেলার রেকর্ড গড়ার দিনে ৬ উইকেটে জিতেছে ভারত। তিন ম‍্যাচের সিরিজ ঘরে তুলেছে ৩-০ ব‍্যবধানে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউ জিল‍্যান্ডের বিপক্ষে হারার পর থেকে এই সংস্করণে ছুটছে ভারতের জয়রথ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে শেষ ম‍্যাচে পেয়েছে টানা দ্বাদশ জয়। টি-টোয়েন্টিতে টানা সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ডে তারা বসেছে আফগানিস্তান ও রোমানিয়ার পাশে।

ধর্মশালায় রোববার শ্রীলঙ্কার ১৪৬ রান ১৯ বল বাকি থাকতেই পেরিয়ে গেছে ভারত। দলের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা শ্রেয়াস অপরাজিত থাকেন ৭৩ রানে। তার ৪৫ বলের ঝড়ো ইনিংস গড়া ৯ চার ও ১ ছক্কায়।

এর আগে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক শানাকা ৩৮ বলে খেলেন অপরাজিত ৭৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস।

টসে দুই অধিনায়কেরই চাওয়া পূরণ হয়। রোহিত চেয়েছিলেন বোলিং, টস জিতে শানাকা নেন ব‍্যাটিং। তবে লঙ্কান অধিনায়ক যেমন ব‍্যাটিং চেয়েছিলেন সেটি করতে পারেননি সতীর্থরা।

আভেশ খান ও মোহাম্মদ সিরাজের চমৎকার বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে সফরকারীরা ৩ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে কেবল ১৮ রান। আভেশের বোলিং ফিগার দুর্দান্ত, ৩-১-৪-২। সিরাজ ৯ রানে নেন ১ উইকেট।

আভেশ ও সিরাজের বোলিং এমন ছিল যে, প্রথম ৬ ওভারে বোলিংয়ে কোনো পরিবর্তন আনেনি ভারত অধিনায়ক।

সবুজ ঘাস থাকা উইকেটে প্রথম ওভারেই বিপজ্জনক দানুশকা গুনাথিলাকাকে বিদায় করেন সিরাজ। ‘ক‍্যারিবিয়ান পুল’ করার চেষ্টায় বল স্টাম্পে টেনে এনে লঙ্কান বাঁহাতি ওপেনার পান গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ।

পরের ওভারে ফেরেন আরেক ওপেনার পাথুম নিসানকা। তেড়েফুড়ে আভেশকে মারতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন আগের ম‍্যাচে ফিফটি করা ডানহাতি এই ব‍্যাটসম‍্যান। মিড অফ থেকে একটু সরে গিয়ে বল মুঠোয় জমান ভেঙ্কটেশ আইয়ার।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট নেওয়া আভেশ পরের ওভারে পান আরেকটি। জায়গায় দাঁড়িয়ে লেগে বল ঘুরানোর চেষ্টায় অনেক উঁচুতে তুলে দেন চারিথ আসালঙ্কা। অনেক সময় পাওয়া কিপার সাঞ্জু স‍্যামসন নেন ক‍্যাচ।

সফরকারীদের বিপদ বাড়তে পারতে আরও, কিন্তু ফিল্ডারের থ্রো স্টাম্পে না লাগায় রান আউট থেকে বেঁচে যান দিনেশ চান্দিমাল। শূন‍্য রানে বেঁচে যাওয়া ব‍্যাটসম‍্যান পরে একটি জুটি গড়েন শানাকার সঙ্গে। এর আগে দারুণ গুগলিতে জানিথ লিয়ানাগের ভোগান্তির সমাপ্তি টানেন রবি বিষ্ণই।

নবম ওভারে ২৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কা কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে চান্দিমাল ও শানাকার ব‍্যাটে। দুই চারে ২৭ বলে ২২ রান করা চান্দিমালকে ফিরিয়ে ৩১ রানের জুটি ভাঙেন হার্শাল প‍্যাটেল।

বিস্ময়করভাবে পরের ৭.৫ ওভারে কোনো উইকেট হারায়নি শ্রীলঙ্কা। এক প্রান্ত আগলে রাখেন চামিকা করুনারত্নে। আরেক প্রান্তে ঝড় তোলেন শানাকা। শেষ ১০ ওভারে লঙ্কানদের ১০৩ রান তুলতে পারায় সবচেয়ে বড় অবদান তারই।  

আগের ম‍্যাচেও ঝড় তোলা শানাকা এই ইনিংসের শুরুতে ছিলেন কিছুটা সাবধানী। প্রথম ১৬ বলে করেন ১৯ রান। এরপর বাড়াতে থাকেন রান। জোড়া বাউন্ডারি মারেন সিরাজ ও বিষ্ণইকে। আভেশকে দুই চারের পর ওড়ান ছক্কায়।

শেষ ৫ ওভারে আসে ৬৮ রান। ২৯ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন লঙ্কান অধিনায়ক। তার ৩৮ বলের ইনিংস গড়া দুই ছক্কা ও ৯ চারে। তার সঙ্গে ৪৭ বলে গড়া ৮৬ রানের জুটিতে চামিকার অবদান ১৯ বলে ১২।

পাকিস্তানের শোয়েব মালিককে (১২৪) ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ ম‍্যাচ খেলার দিনে ব‍্যাট হাতে ভালো করতে পারেননি রোহিত। শুরু থেকে ছটফট করতে থাকা ভারত অধিনায়ক দুশমন্থ চামিরার বাড়তি বাউন্সে ব‍্যাট চালিয়ে দিয়ে ধরা পড়েন চামিকার হাতে।

দ্বিতীয় ওভারে রোহিতকে হারালেও এর কোনো প্রভাব পড়তে দেননি স‍্যামসন ও শ্রেয়াশ। তাদের আক্রমণাত্মক ব‍্যাটিংয়ে দ্রুত এগোতে থাকে দল। উদ্বোধনী জুটিতে রোহিতের সঙ্গীদের অনুপস্থিতিতে ওপেন করতে নেমে অবশ‍্য বেশিদূর যেতে পারেননি স‍্যামসন। তিন চারে ১২ বলে করেন ১৮ রান। ভাঙে ২৮ বলে গড়া ৪৫ রানের জুটি।

চারে নামা দিপক হুডার সঙ্গে ৩৮ রানের আরেকটি জুটি গড়েন শ্রেয়াস। একটি করে ছক্কা ও চারে ২১ রান করা হুডাকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন লাহিরু কুমারা। চার মেরে শুরু করা ভেঙ্কটেশ থেমে যান ওই রানেই।

রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে বাকিটা শেষ করেন শ্রেয়াস। ছক্কা মেরে ২৯ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে শেষ পর্যন্ত ৭৩ রানের ইনিংসে ডানহাতি এই ব‍্যাটসম‍্যান ফেরেন দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে। তার সঙ্গে ২৭ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়া জাদেজা তিন চারে করেন ২২।

সিরিজে একবারও শ্রেয়াসকে আউট করতে পারেনি সফরকারীরা। আগের দুই ম‍্যাচে তিনি খেলেন ৫৭ ও ক‍্যারিয়ার সেরা ৭৪ রানের ইনিংস। সিরিজে একবারও আউট না হয়ে শ্রেয়াসের ২০৪ রানের চেয়ে বেশি আছে কেবল ডেভিড ওয়ার্নারের। ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১৯ রান করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি এই ওপেনার।

এই পারফরম‍্যান্সের জন‍্য শ্রেয়াস জেতেন ম‍্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৪৬/৫ (নিসানকা ১, গুনাথিলাকা ০, আসালঙ্কা ৪, লিয়ানাগে ৯, চান্দিমাল ২২, শানাকা ৭৪*, চামিকা ১২*, সিরাজ ৪-০-২২-১, আভেশ ৪-১-২৩-২, হার্শাল ৪-০-২৯-১, কুলদিপ ৪-০-২২-০, বিষ্ণই ৪-০-৩২-১)

ভারত: ১৬.৫ ওভার ১৪৮/৪ (স‍্যামসন ১৮, রোহিত ৫, শ্রেয়াস ৭৩*, হুডা ২১, ভেঙ্কটেশ ৫, জাদেজা ২২*; বিনুরা ৪-০-৩৫-০, চামিরা ৩-০-১৯-১, কুমারা ৩.৫-০-৩৯-২, চামিকা ৩.৪-০-৩১-১, ভ‍্যান্ডারসে ২.২-০-২৪-০)

ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম‍্যাচের সিরিজে ৩-০ ব‍্যবধানে জয়ী ভারত

ম‍্যান অব দা ম‍্যাচ: শ্রেয়াস আইয়ার

ম‍্যান অব দা সিরিজ: শ্রেয়াস আইয়ার।