তামিম-মুশফিকের ভাবনা থেকে চট্টগ্রামে গোটা সিরিজ ও ঘাসের উইকেট

দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোয় যেখানে মিরপুরের বাইরে একাধিক ম্যাচ কখনোই খুব একটা রাখা হয় না, এবার সেখানে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের সব ম্যাচই চট্টগ্রামে। প্রথম দুই ম্যাচে দেখা গেল, এই মাঠের চেনা উইকেটের চেয়েও কিছুটা ভিন্ন উইকেট। সিরিজ জয়ের পর তামিম ইকবাল খোলাসা করলেন, কয়েক মাস আগেই হয় এই সিদ্ধান্ত। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথোপকথনে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক শোনালেন এই সিরিজের জন্য তাদের বিশেষ পরিকল্পনার নানা দিক। কথা বললেন দল সংশ্লিষ্ট আরও অনেক কিছু নিয়ে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2022, 01:28 PM
Updated : 26 Feb 2022, 01:28 PM

‘ট্রিকি’ প্রতিপক্ষ হিসেবে আফগানিস্তানকে নিয়ে একটু টেনশনে ছিলেন নিশ্চয়ই। প্রথম দুই ম্যাচে সিরিজ জয় নিশ্চিত করার স্বস্তি কতটা?

তামিম ইকবাল: অনেকটাই। কারণ প্রথম লক্ষ্য তো এটাই থাকে যে কোনো সিরিজে। টেনশন কিছু হয়নি, এটা বলব না তবে আত্মবিশ্বাস সবসময়ই ছিল জয়ের। কাজ এখনও শেষ হয়নি। প্রথম দুই ম্যাচ জিততে যতটা মরিয়া ছিলাম, শেষ ম্যাচেও সেভাবেই মাঠে নামব।

এমনিতেও আমরা কখনও হারার জন্য মাঠে নামি না। এখন তো সুপার লিগের ১০ পয়েন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। সামনে দক্ষিণ আফ্রিকায়, আয়ারল্যান্ডে খেলতে হবে আমাদের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজও আছে। যত বেশি সম্ভব পয়েন্ট নিয়ে রাখতে চাই। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে হেরে গিয়েছিলাম আমরা। তেমন কিছু এবার চাই না। 

প্রথম ম্যাচে আফিফ ও মিরাজের ব্যাটিং দেখে মাইকেল বেভানকে মনে পড়েছে তামিমের।

সিরিজ জয়ের এই স্বস্তিতে আপনার নিজ শহরে খেলা হওয়ার অবদানও স্পষ্ট অনেকটাই। সিরিজের সব ম্যাচ চট্টগ্রামে সাধারণত হয় না কখনোই। আফগান স্পিনারদের কথা ভেবেই নিশ্চয় মিরপুরে খেলা রাখা হয়নি?

তামিম: দেখুন, যাদের বিপক্ষে আমাদের এই সিরিজ, আমাদের মনে হয়েছে যে, তাদের বিপক্ষে চট্টগ্রাম আমাদের জন্য বেশি উপযুক্ত। চট্টগ্রামের উইকেট এই সিরিজে আমাদের জন্য বেশি উপযোগী। সুপার লিগের খেলা এখানে, অবশ্যই আমাদের চাওয়া ছিল ঝুঁকি যতটা সম্ভব কমানো।

কিন্তু এবার তো চট্টগ্রামের প্রথাগত উইকেটের চেয়েও একটু আলাদা। হালকা ঘাস রাখা হয়েছে দুই ম্যাচের উইকেটেই…

তামিম: হ্যাঁ, চট্টগ্রামের নরম্যাল উইকেটের চেয়ে আলাদা। তবে এরকম উইকেট চট্টগ্রামেই সম্ভব। নরম্যালি আমরা দেশের মাঠে ঘাসের উইকেটে কখনও খেলি না। হতে পারে, প্রথমবার এরকম উইকেটে খেলছি। আমরা জানতাম যে এই ধরনের উইকেটের কিছু সুবিধা থাকবে, কিছু অসুবিধা থাকবে।

অসুবিধা হলো যে, প্রথম ১০ ওভারে ব্যাটসম্যানদের জন্য একটু বেশি চ্যালেঞ্জিং অন্যান্য সময়ের চেয়ে। প্রথম তিন-চার ব্যাটসম্যানকে শুরুর সেই সময়টা সাবধানে থাকতে হবে, প্রায় টেস্টের মানসিকতায় ব্যাটিং করতে হবে। লিটন কালকে যা খুব ভালো পেরেছে। 

সুবিধা হলো, ওদের যেটা মূল শক্তির জায়গা, সেটাকে আমরা দুর্বল করে দিতে পারব। ওরা তো স্পিনের ওপর প্রচণ্ডভাবে নির্ভর করে। বিশ্বমানের স্পিনারও ওদের আছে। উইকেটে ঘাস থাকলে স্পিনারদের কাজটা একটু কঠিন হয়ে যায়। এই তো।

এমন যদি হতো যে সিরিজ ইংল্যান্ড বা নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে, তাহলে আমরা তিনটা ওয়ানডেই হয়তো মিরপুরে খেলতাম বা খেলতে পছন্দ করতাম। ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়ার অংশ এটা।

আপনার মাথায় এই ভাবনা কখন এসেছিল যে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘাসের উইকেটে খেলা উচিত?

তামিম: কয়েক মাস আগে সম্ভবত। মুশফিকের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল আফগানিস্তান সিরিজ নিয়ে। আমাদের দুজনেরই মনে হলো, এই সিরিজ চট্টগ্রামে খেলা উচিত। তারপর টিম ম্যানেজমেন্টের যারা আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি একা তো সিদ্ধান্ত নেই না। তবে সবাই একমত হয়েছে এই পরিকল্পনায়। পরে বোর্ডের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারাও আমাদের পরিকল্পনাকে সাপোর্ট করেছেন।

সত্যি কথা বলতে, খুব বেশি আলোচনার দরকারই হয়নি। কারণ, কারও এটা না বোঝার কারণ নেই। মিরপুরের উইকেট ধীরগতির এবং স্পিনাররা সহায়তা পাবেই সেখানে। চট্টগ্রামে বরাবরই ব্যাটিং সহায়ক উইকেট। তারপরও স্পিনারদের হালকা যে সহায়তা থাকার কথা, সেটাও কমানোর জন্য উইকেটে ঘাস রাখার ব্যাপারটা এসেছে।

এখানে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও সুজন ভাইয়ের (টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ) কথাও বলতে হবে। আমি ভাবনাটা জানিয়েছি। তারপর তারাই সব দেখভাল করেছেন। উইকেট বা এসব নিয়ে আমি আসলে খুব সম্পৃক্ত হতে চাই না বা মাথা ঘামাতে চাই না। শেষপর্যন্ত আমাদের চাওয়ামতো উইকেট নাও হতে পারত। তখনও আমাদের খেলতে হতো এবং জয়ের কথাই ভাবতাম।

আমরা শুধু বলে দিয়েছি, ঘাসের উইকেট থাকলে সুবিধা হয়। কতটুকু ঘাস থাকবে বা থাকবে না, কোচ ও সুজন ভাইরাই মূলত এসব খেয়াল রেখেছেন।

সবচেয়ে ভালো ব্যাপার ছিল যেটা আগে বললাম, সবাই একমত ছিল ঘাসের উইকেটের ব্যাপারে। বোর্ড, টিম ম্যানেজমেন্ট বা সিনিয়র ক্রিকেটারদের কারও কোনো দ্বিমত ছিল না।

সেই উইকেটে প্রথম ম্যাচে যখন ভয়াবহ ব্যাটিং ধস হলো, ফজলহক ফারুকি প্রথম স্পেলে ৪ উইকেট নিলেন, তখন কি একটু হলেও মনে হয়েছে যে সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে গেল?

তামিম: এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি। কারণ, আমাদের পরিকল্পনায় ভুল ছিল না। আমরা ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি, সেটা অন্য কথা। তবে পরিকল্পনায় তো শক্ত যুক্তি ছিল।

ম্যাচ যদি হেরে যেতাম বা সিরিজ, তাহলে কী অবস্থা হতো বা দায় দেওয়া হতো কিনা, তা অবশ্য জানি না (হাসি)।

সেদিনের উইকেটগুলো যদি, ফারুকির সব উইকেটই ছিল বেশ ভালো ডেলিভারিতে। নতুন বলে একজন সুইং বোলার ভালো বল করলে কখনও কখনও এরকম হতে পারে।

আমরা যদি মনে করতাম যে পরিকল্পনা ভুল বা ব্যাকফায়ার করছে, তাহলে তো দ্বিতীয় ম্যাচের উইকেট ভিন্নরকম হতো। কিন্তু একই ধরনের উইকেটে খেলেছি আমরা।

আফগান ক্রিকেটারদের অনেকের সঙ্গে তো আপনাদের ভালো সম্পর্ক আছে। মাঠে বা আড্ডায় ওরা উইকেট নিয়ে কিছু বলেনি?

তামিম: অনেক কিছুই বলেছে মজা করে। সবকিছু বলছি না। তবে এটুকু বলতে পারি, ওরা চমকে গেছে। উইকেট দেখে খুবই বিস্মিত হয়েছে।

রশিদ-মুজিবের জন্য উইকেটে ঘাস রাখা হলেও, তারা তো সব ধরনের উইকেটেই কার্যকর হতে পারেন। ব্যাটসম্যানদেরও কৃতিত্বও নিশ্চয়ই আছে যে তারা খুব ভালো সামলাচ্ছেন?

তামিম: অবশ্যই, ওদের কৃতিত্বই বেশি। প্রথম ম্যাচে আফিফ-মিরাজ, কালকে লিটন-মুশফিক তো দুর্দান্ত খেলেছে ওদের স্পিনে।

দেখেন, উইকেট আমাদের সহায়তা করেছে। তবে উইকেটের কারণেই কিন্তু সবকিছু হয়ে যায়নি! উইকেটের ব্যাপারটি ছিল, স্রেফ ওদের স্পিনারদের কার্যকারিতা বা হুমকি যেন কিছুটা কমানো যায়। আমাদের দেশে এসে যেন ওরা বাড়তি সুবিধা না পায়। ওদের শক্তির জায়গায় যেন আমরা আরও সহায়তা না করি। 

কিন্তু এটাও আমরা জানতাম যে ওরা সব উইকেটে ভালো বল করতে পারে। রশিদ-মুজিবরা বিগ ব্যাশেও দারুণ বোলিং করেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে, পিএসএলে করেন। ওরা অনেক কোয়ালিটি বোলার।

আমাদের ব্যাটসম্যানরা ওদের খুব ভালোভাবে সামলেছে। প্রথম ম্যাচে দেখুন, এত চাপের মধ্যেও মিরাজ ও আফিফ কোনো চান্সই দেয়নি ওদের। কালকে লিটন ও মুশফিকের ব্যাটিংয়ের স্কিল যদি দেখেন, রশিদ ও মুজিবকে উল্টো চাপে রেখেছে ওরা। এই মানের বোলারদের বিপক্ষে রান করতে হলে সব উইকেটে সব জায়গায় ভালো খেলতে হবে। কাজেই আমাদের ব্যাটসম্যানদের কৃতিত্বই বেশি।

লিটন দাস নিজের খেলা এখনও আরও ভালো বোঝে, বলছেন তামিম ইকবাল।

লিটন-মুশফিকের ভালো করাটা তো প্রত্যাশিতই। প্রথম ম্যাচে আফিফ-মিরাজ যেভাবে ব্যাট করেছে, এতে কি চমকে গেছেন? আপনি ম্যাচ শেষে বলছিলেন যে জয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই দুজন এত পরিণত ব্যাটিং করেছেন …

তামিম: ওদের ব্যাটিং দেখে আমার মাইকেল বেভানকে মনে পড়েছে। ছোটবেলায় টিভিতে দেখতাম বেভানের ব্যাটিং, এভাবেই ক্যালকুলেটিভ খেলে ম্যাচ শেষ করতেন। এবার দেখলাম চোখের সামনে।

৪৫ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর কম্পিউটার অ্যানালিস্টকে জিজ্ঞেস করছিলাম, আমাদের সর্বনিম্ন স্কোর কত। আমার ধারণা, আপনারাও তখন ঘাটাঘাটি করা শুরু করেছিলেন এমন কিছু। ওই অবস্থায় আসলে জয়ের কথা খুব কম জনেরই ভাবার কথা।

তবে ওরা যেভাবে শুরু করে এগোচ্ছিল, তাতে আস্তে আস্তে বিশ্বাসটা ফিরে পেতে শুরু করেছিলাম। সত্যিকার জয়ের আশা দেখলাম যখন রান দরকার পঞ্চাশের কম। ওই সময়টায় আমি মনে মনে বলছিলাম, “আল্লাহ, এতদূর এসে যেন না হারি। ৭০-৮০ রানে হেরে জেতাম, সেটা অন্য ব্যাপার। কাছে গিয়ে আমরা এত হেরেছি, আর হারতে চাই না এভাবে।”

ওদের দুজনের ব্যাটিং নিয়ে যত বেশিই বলি না কেন, যথেষ্ট হবে না। অন্য পর্যায়ের ব্যাটিং করেছে ওরা সেদিন। এত ধীরস্থির থেকে, এত নিয়ন্ত্রণ, এত সাহস আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলেছে, অবিশ্বাস্য…। এসব ঘটনা আপনি হরহামেশা দেখতে পাবেন না। এরকম ইনিংস অনেকের এক জীবনে খেলা হয় না।

এরকম অবস্থা থেকে জয়ের পর দলেও তো আত্মবিশ্বাস আরও প্রবল হওয়ার কথা যে, এই দল যে কোনো জায়গা থেকে জিততে পারে!

তামিম: আত্মবিশ্বাস তো বাড়েই। তবে আমি বিশ্বাস করি, বাস্তবতায় থাকা ভালো। একবার মিরাকল হয়েছে বলে যে বারবার হবে, এই আশা করা ভুল। আবার, এরকম কিছু আর হবে না, সেটা ভাবাও ভুল। ক্রিকেটে সবই হতে পারে।

আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা মনে হয়েছে, আফিফ ও মিরাজের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে এতে। আশা করি, এই ম্যাচ ওদের ব্যাটিংকে পরের ধাপে নিতে সহায়তা করবে। দল জিতেছে, এই খুশির সঙ্গে ওদের দুজনের জন্যও খুশি হয়েছি।

লিটন দ্বিতীয় ম্যাচে অসাধারণ একটা ইনিংস খেললেন। গত ১৬ ওয়ানডে ইনিংসে ৪টি সেঞ্চুরি হলো তার। টেস্টে তো দুর্দান্ত করছেন। তার আন্তর্জাতিক অভিষেকের আগে থেকেই আপনি, সাকিব, মাশরাফিসহ অনেকেই তাকে নিয়ে আশার কথা বলেছিলেন। হতাশাময় বেশ কিছু সময়ের পর অবশেষে তিনি ধারাবাহিক হতে শুরু করেছেন। আগের চেয়ে এখন তার কোন বদলটি আপনার চোখে পড়েছে?

তামিম: লিটন এখন নিজের খেলাটা আগের চেয়ে ভালো বোঝে। ওর একটা ভালো ব্যাপার হলো, সেট হয়ে গেলে ও অসাধারণ। যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই এটা ভালো অভ্যাস যে ইনিংস বড় করা। ওর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ইনিংসের শুরুটায় আর বড় ইনিংসগুলো আরেকটু ধারাবাহিকভাবে খেলার। আশা করি সেটা পারবে, খুব ভালোভাবেই এই সামর্থ্য তার আছে।

ওর অভিজ্ঞতাও বাড়ছে। পরের ম্যাচে ৫০ ওয়ানডে হয়ে যাবে। আগের চেয়ে নিজেকে ভালো বোঝে ও এখন।

লিটন যখন এরকম খেলে, ওর মতো সুন্দর দেখায়, এমন ব্যাটসম্যান গোটা বিশ্বেই কম আছে। তবে শুধু সুন্দর দেখা বলেই নয়, কোয়ালিটি ইনিংস এসব। অনেকে বলতে পারে যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। কিন্তু ওদের বোলিং আক্রমণ কিন্তু ভালো। টপ কোয়ালিটি সেঞ্চুরি এটি।

লিটনের একটা ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের দ্রুততম হিসেবে ওয়ানডেতে ৫ সেঞ্চুরি করলেন বটে। তবে ক্যারিয়ারের ৪৯ ইনিংসের ২০টিতে আউট হয়েছেন ১০ রানের কমে, ৭টিতেই শূন্য রানে। শুরুর দিকের সমস্যাটা কি টেকনিকাল নাকি মনস্তাত্ত্বিক মনে হয়?

তামিম: টেকনিকাল না, লিটন যথেষ্ট কম্পোজড। কখনও বল সিলেকশনের কারণে হয়, কখনও ভালো ডেলিভারি পেয়ে গেলে… শুরুর দিকে আউট অনেকে অনেক সময় হয়ে যায়। যেটা বললাম, নিজের খেলা আস্তে আস্তে বুঝতে শিখছে ও। এখন অবশ্যই এই সমস্যাও কমতে থাকবে।

টেস্টে দেখুন, গত ১-২ বছরে লিটন বিশ্বের সেরা ১০ জনের মধ্যে থাকবে মনে হয়। কারণ, টেস্টের ব্যাটিংটা ও বুঝে গেছে। নিজেকে সময়টা দিচ্ছে। ওয়ানডেতেও এটা করতে পারলে এর চেয়ে ভালো কিছু আর হয় না। কালকে যেমন, শুরুতে সময় নিয়ে দারুণভাবে ইনিংসটা গড়েছে। নিজের খেলা যখন আরও বুঝবে, আরও ভালো করবে। অনেকদূর যাবে ও।

একদম শুরু থেকে সবাই ওকে সাপোর্ট করেছে, কারণ ওর মধ্যে কিছু একটা আছে। সবাই ওর মধ্যে কিছু না কিছু দেখতে পায় বলেই সবসময় পাশে থেকেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় ওকে নিয়ে ভালো কথাই বলে আসছি সব জায়গায়, তা বলেও যাব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো-খারাপ সময় আসেই। কখনও টানা রান পাবে না, কখনও টানা পাবে। সবার সঙ্গেই এটা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কারও ওপর বিশ্বাসটা রাখা। লিটনের ওপর সেই বিশ্বাস আমাদের আছে।

ইয়াসির আলি চৌধুরিকে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হবে, বললেন ওয়ানডে অধিনায়ক।

ইয়াসির আলি চৌধুরিকে এই সিরিজে পাঁচ নম্বরে খেলানো হচ্ছে। কোন কোন কারণে আপনাদের মনে হয়েছে, তাকে পাঁচে খেলানো যায়? প্রথম ম্যাচে তিনি শূন্য রানে ফিরেছেন, পরেরটিতে ব্যাটিংই পাননি। যথেষ্ট সময় ও সুযোগ কি তাকে দেওয়া হবে?

তামিম: প্রথম কথা বলি, ওয়ানডে দলে রাব্বির (ইয়াসির) জায়গা খুবই প্রাপ্য ছিল। ভেরি ডিজার্ভিং, কারণ বাংলাদেশে সে ব্যতিক্রমী ক্রিকেটারদের একজন, যাকে তাড়াহুড়ো করে দলে আনা হয়নি। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক দিন পারফর্ম করেছে, ‘এ’ দল, এইচপি-ইমার্জিং দলে খেলেছে, সব জায়গায় পারফর্ম করে তবেই এসেছে। আমার বিশ্বাস, ওয়ানডে দলেও সে ভালো করবে। বিশ্বাস আছে বলেই তাকে নেওয়া হয়েছে এবং অবশ্যই চেষ্টা থাকবে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়ার।

সুযোগের কিন্তু ধরন আছে। এমনও হতে পারে কখনও টিম কম্বিনেশনের কারণে কিংবা চার-পাঁচ ম্যাচ খারাপ করলে তাকে একাদশের বাইরে রাখা হলো। তার মানে এই নয় যে সে বাদ পড়ল। স্কোয়াডেই রাখা হবে। প্রয়োজনে কয়েক ম্যাচ পর আবার সুযোগ যাবে। তাকে লম্বা সময় প্রক্রিয়ায় রাখা হবে, এটুকু বলতে পারি।

একটা মাত্র ইনিংস খেলল ছেলেটা, ভালো একটি ডেলিভারিতে আউট হয়েছে। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে খুব বড় ইনিংস না খেললেও গুরুত্বপূর্ণ দু-একটি ইনিংস খেলেছে। অবশ্যই চেষ্টা থাকবে ‘ডিসেন্ট’ সুযোগ তাকে দেওয়ার।

সবকিছু আমার একার হাতেও নেই। দল বা একাদশ নির্বাচনে আরও অনেকে থাকেন। আমি আমার দিক থেকে আমারটুকু করার চেষ্টা করব।

তাহলে ইয়াসির-মাহমুদউল্লাহ-আফিফ পাঁচ-ছয়-সাতেই আপাতত থাকছেন কিছুদিন?

তামিম: রিয়াদ ভাইকে (মাহমুদউল্লাহ) আমি ছয়েই রাখতে চাই। টিম ম্যানেজমেন্টের অন্যদের ভাবনাও একই। উনি পাঁচেও ভালো করতে পারেন। তবে আমাদের দলের জন্যই ছয়ে তাকে দরকার। কাজটা খুব কঠিন, তবে তার অভিজ্ঞতা আছে। এজন্যই ভরসা রাখছি।

পাঁচে ভালো কাউকে পেলে আমাদের ব্যাটিং লাইন আপ একদম সেটেলড হয়ে যাবে এখন। বেশ কজনকে আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু জায়গাটা ফাঁকা আছে। আপাতত ইয়াসিরকেই সেখানে ভাবা হচ্ছে।

তবে একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার, কন্ডিশন-প্রতিপক্ষ বুঝে ব্যাটিং অর্ডার বদলানোও হতে পারে। ধরুন, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে দেখা গেল তিন-চার থেকে কাউকে একটু নিচে নামানো হলো বা নিচ থেকে ওপরে। কোন দেশে, কোন মাঠে, কেমন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে খেলা, এসব বুঝে ব্যাটিং অর্ডার ফ্লেক্সিবল রাখাও উচিত, এটা আমার ভাবনা। টিম ম্যানেজমেন্টও এভাবে ভাবে বা ভাববে বলে আশাবাদী আমি।