‘টেস্ট ব্যাটিং করে’ লিটনের ওয়ানডে সেঞ্চুরি

গায়ে রঙিন পোশাক। খেলা ৫০ ওভারের। বোলারের হাতে সাদা বল। কিন্তু ব্যাটসম্যান ঢুকে গেলেন অন্য এক জগতে। যেখানে তার গায়ের পোশাক সাদা। সামলাতে হবে চকচকে লাল বলের চ্যালেঞ্জ। রান ভুলে শুরুতে আঁকড়ে রাখতে হবে উইকেট। ভাবনার জগতে এভাবে ডুব দিয়েই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের সেঞ্চুরিটি করেছেন লিটন কুমার দাস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2022, 04:09 PM
Updated : 25 Feb 2022, 04:51 PM

১২৬ বলে ১৩৬ রানের ইনিংসকে এমনিতে টেস্ট ব্যাটিং বলা কঠিন। ঝড়ো সেঞ্চুরি টেস্ট ক্রিকেটেও কম হয় না। তবে সাধারণ বিবেচনায় টেস্ট ব্যাটিং মানে ভিন্ন কিছুই। কিন্তু চট্টগ্রামে শুক্রবার এই ম্যাচে সাফল্যের জন্য লিটন আপস করেছিলেন ওয়ানডের চেনা ঘরানার সঙ্গে।

এই পরিবর্তনের মূল কারণ, ফজলহক ফারুকি। প্রথম ম্যাচে আফগান এই পেসারের বলে লিটন আউট হন ১ রানে। সেখানেই না থেমে প্রথম স্পেলে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার বিধ্বস্ত করে দেন ২১ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ফারুকি শুরুতে বিদায় করে দেন তামিম ইকবালকে। লিটনও বুঝে নেন করণীয়। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানালেন, পরিস্থিতির দাবি মেটাতে তিনি আশ্রয় নেন টেস্টের পরিকল্পনার।

“আগের দিন তার বোলিং খুবই ভালো ছিল। আজকেও সে শুরুতে ভালো করেছে, উইকেট থেকে অনেক সহায়তা পাচ্ছিল। আমার মূলত চিন্তা ছিল, প্রথম ১০ ওভার নয়, ওর স্পেল যতক্ষণ আছে, ততক্ষণই টেস্ট ব্যাটিং মানসিকতায় খেলার।”

“আমার জানা ছিল, ১৫-১৬ ওভার যদি খেলে ফেলা যায়, তাহলে আবহ বদলে যায়, উইকেট ভালো হয়ে যায়, বোলারদের ভিন্ন মনে হয়। তখন জিনিসটা সামলাতে পারব। তো, প্রথম পরিকল্পনা ছিল টেস্ট ব্যাটিং করা। টেস্টে যেভাবে সাধারণত শুরু করি (সেভাবে সাবধানে খেলা)।”

সতর্ক ব্যাটিংয়ের সেই পথে হাঁটায় লিটনের ব্যাটিংয়ে শুরুতে দেখা যায়নি চেনা কল্লোল। তার ব্যাটে জাগেনি স্ট্রোকের হিল্লোল। প্রথম ১০ ওভারে তিনি করেন ২৩ বলে ১৯। পরের ১০ ওভারে ২৩ বলে ১৬। তার মতো একজন স্ট্রোকমেকারের নামের পাশে ২০ ওভার শেষে ৩৫ রান একটু বেমানানই!

তবু অস্থির হয়ে পড়েননি লিটন। নিজেকে তিনি খুব ভালো করে চেনেন এখন। নিজের সামর্থ্যে আস্থাও প্রবল। তার বিশ্বাস ছিল, টেস্ট ব্যাটিংয়ে শুরু করলেও পরে পুষিয়ে দিতে পারবেন ওয়ানডের গতিতে ছুটে।

“ওপেনার হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো রান করা, বড় ইনিংস খেলা। আমার প্রথম টার্গেট থাকে ৩৫ ওভার ব্যাটিং করা। আমার যে সামর্থ্য আছে, বিশ্বের যে কোনো দলের বিপক্ষে ৩৫ ওভার খেলতে পারলে অন্তত ৮০ রান করতে পারব। ওই জিনিসটাই আজকে... এভাবেই যাচ্ছিল।”

“যখন আমি আর মুশি ভাই খেলছিলাম, জুটিটা ভালো হচ্ছিল। যখন ৪০ ওভার পার করলাম, তখন আমরা চিন্তা করলাম, যতটা সম্ভব রানটা এগিয়ে নেওয়া যায়। কারণ, তখন আমরা দুজনই সেট। আমরা চেষ্টা করেছি তা কাজে লাগাতে।”

লড়াইটা ব্যাট-বলের হলেও মূল খেলাটা যে হয় মস্তিষ্কে, সেটিও এখন বুঝে গেছেন লিটন। একসময় হেলায় উইকেট হারাতে অনেকবারই দেখা গেছে তাকে। এখন নিজের উইকেটের মূল্য বুঝতে পারেন বলেই দাবি তার।

“জিনিসটা হচ্ছে, আপনি কীভাবে পরিকল্পনা করছেন। খেলাটা নিয়ে কীভাবে চিন্তা করতেছেন। আমি চাইলে হয়তো শুরুর দিকে ডাউন দা উইকেটে গিয়ে মেরে দিতে পারতাম। তাতে কি হতো? চার বা ছয়। কিন্তু সেটায় বড় ঝুঁকি থাকত, উইকেট চলে যেতে পারত। তখন উইকেট যাওয়া মানে তো দল চাপে।”

“আমার মনে হয় যে, এই জিনিসটা নিজে থেকে পরিবর্তন করা প্রত্যেক ব্যাটসম্যানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি এ জিনিসটা নিয়ে চিন্তা করছি, ভাবনা করছি যে আমার উইকেটের একটা মূল্য আছে। নিজের উইকেটের মূল্যটা দিচ্ছি। আশা করি, সামনেও দিতে পারব।”