প্রিয় সংস্করণে অস্বস্তির প্রতিপক্ষের সামনে বাংলাদেশ

হাসি, মজা, পরস্পর নানা খুনসুটি চলল সমানে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং ঝালাই করে নেওয়ার পালা তো ছিলই, বাংলাদেশের অনুশীলনে মঙ্গলবার বয়ে গেল যেন আনন্দের নহরও। এক মাস ধরে বিপিএল খেলার ধকল এখনও রয়ে যাওয়ার কথা। তবে ক্রিকেটারদের দেখে মনে হলো দারুণ চনমনে। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর প্রিয় কিছুকে সামনে পেলে মনে যেমন আনন্দের নাচন খেলে যাওয়ার কথা!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2022, 05:16 PM
Updated : 22 Feb 2022, 05:16 PM

সাত মাস পর ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। যে সংস্করণে সাফল্য তাদের সবচেয়ে বেশি, যেখানে মাঠে নামার সময় আত্মবিশ্বাসও থাকে উত্তুঙ্গ। এতদিন পর ওয়ানডে ক্রিকেটকে সামনে পেয়ে তাই দুহাত বাড়িয়েই বরণ করে নেওয়ার কথা।

তবে অনুশীলনের ছবিটা যতই উজ্জ্বল হোক, এবার প্রিয় সংস্করণকে আলিঙ্গনে একটু অস্বস্তির ছোঁয়াও থাকার কথা। প্রতিপক্ষ যে আফগানিস্তান! যাদের সঙ্গে সিরিজ জিতলে বা হোয়াইটওয়াশ করলেও কৃতিত্ব খুব বেশি মিলবে না। তবে হেরে গেলে ‘সব গেল’ রব পড়ে যেতে পারে।

চ্যালেঞ্জিং এই সিরিজ দিয়েই বুধবার ওয়ানডে ক্রিকেটে বিরতি শেষ হচ্ছে বাংলাদেশের। চট্টগ্রামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি শুরু সকাল ১১টায়।

বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল অবশ্য সিরিজ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে কণ্ঠে জোর নিয়েই বললেন, খুব বেশি চ্যালেঞ্জ তিনি দেখছেন না।

“চ্যালেঞ্জের কিছু না। কমবেশি সবাই-ই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। যদিও আমরা টি-টোয়েন্টি খেলেছি সম্প্রতি (বিপিএলে)। তবে আমার মনে হয় ওদের সঙ্গে ওয়ানডে দিয়ে শুরু করাটা ঠিক সিদ্ধান্ত। ওয়ানডেতে অবশ্যই আমরা ভালো দল। সবাই খেলার মধ্যে আছে, এটা ইতিবাচক। স্রেফ দল হিসেবে পারফর্ম করতে হবে।”

“এটা নিয়ে (আফগানদের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ) অনেক কথা হয়, আলোচনা হয়। তবে ওদের বিপক্ষে আমরা সবসময়ই ভালো করেছি। কোনো সন্দেহ নেই যে ওরা ভালো দল, মানসম্পন্ন বোলিং আক্রমণ আছে। তবে তাদের বিপক্ষে আমরা ভালো করেছি।”

অধিনায়ক আত্মবিশ্বাসী হলেও চ্যালেঞ্জটা যে সহজ নয়, এটা বলবে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইও। এখনও পর্যন্ত ৮ ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ৫টি, হেরে গেছে ৩ ম্যাচে!

তবে প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবার চেয়ে নিজেদের প্রিয় সংস্করণে ফেরার চ্যালেঞ্জই বেশি ছুঁয়ে যাচ্ছে দলকে, বললেন অধিনায়ক।

“গত জুলাইয়ে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিলাম। ৬-৭ মাস পর এসেছি। তবে সবাই রোমাঞ্চিত। কোনো সংশয় নেই যে, এটা আমাদের প্রিয় সংস্করণ। এ বছর বেশ কয়েকটা ওয়ানডে আছে। গত বছর এতটা ছিল না। কালকের জন্য মুখিয়ে আছি। আশা করছি ভালো শুরু পাব।”

ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে ভালো দল, এটার স্বাক্ষ্য দেবে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকাও। বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব হিসেবে চালু হওয়া এই টুর্নামেন্টে ৮০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ আছে এখন দুইয়ে। শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ড ১৫ পয়েন্ট এগিয়ে আছে বাংলাদেশের চেয়ে ৩ ম্যাচ বেশি খেলে। আফগানদের বিপক্ষে সিরিজে দুটি ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশ উঠে যাবে এক নম্বরে।

তবে শুধু দুটি জয়ই নয়, এই সিরিজটি গুরুত্বপূর্ণ সামনের দিকে তাকিয়েও। সুপার লিগে বাংলাদেশের দুটি সিরিজ এখনও আছে দেশের বাইরে। একটি সিরিজ দক্ষিণ আফ্রিকায়, যেখানে কখনোই কোনো ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পায়নি বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে সিরিজে পূর্ণ পয়েন্ট পেলে তাই ভবিষ্যতের জন্য অনেকটাই নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে।

তামিম অবশ্য ৩-০ নিয়ে এখনই ভাবতে নারাজ। তিনি একটি করে ধাপ পেরিয়ে এগিয়ে যেতে চান সামনে।

“৩-০ এখনও অনেক দুরের ব্যাপার। আমরা কালকের ম্যাচ কীভাবে শুরু করি এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কে চাইবে না ৩-০ না করতে? ওরাও চাইবে। তবে দূরেরটা চিন্তা না করে আমরা আগে কাল শুরু করি।”

এই শুরুর পথে বাংলাদেশ অধিনায়কের জন্য বড় স্বস্তির ব্যাপার, সম্ভাব্য সেরা দলটিই পাচ্ছেন তিনি। চোট-বিশ্রাম, ছুটি, পারিবারিক সমস্যা, সবকিছু মিলিয়ে অনেকদিন ধরে পূর্ণ শক্তির দল কোনো সংস্করণেই সেভাবে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এবার শুধু চোটে পড়া মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ছাড়া সবাই আছেন দলে। তামিম স্বাভাবিকভাবেই দারুণ স্বস্তি নিয়ে শুরু করতে পারছেন সিরিজ।

“চোট বলুন বা ছুটির কারণে, আমরা পুরো দল খেলতে পারিনি। এটা সৌভাগ্য যে এই সিরিজে পুরো দল পাব। অধিনায়ক হিসেবে এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। সবাই ভালো অবস্থায় আছে, মানসিক দিক বা পারফরম্যান্সের দিক থেকে। আমরা সবাই জানি এই সিরিজ আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”

এই ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে পথচলা শুরু হতে পারে ইয়াসির আলি চৌধুরির। ব্যাটিং অর্ডারের ৫ নম্বর পজিশন তিনি পেতে পারেন। এছাড়া ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গে লিটন দাস, তিনে সাকিব আল হাসান, চারে মুশফিক, ছয়-সাতে মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন একদম নিশ্চিতই। বোলিং লাইন আপে মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে দেখা যেতে পারে তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামকে।

বাংলাদেশের মতো সুপার লিগে শুরুটা দারুণ করেছে আফগানিস্তানও। এখনও পর্যন্ত ৬ ম্যাচের সবকটি জিতেছে তারা। প্রতিপক্ষ যদিও ছিল গত বছর আয়ারল্যান্ড ও গত মাসে নেদারল্যান্ডস। তাদের সত্যিকার অর্থে প্রথম বড় পরীক্ষা এই সিরিজই।

বাংলাদেশে আসার আগে কাতারে ক্যাম্প করেছে তারা। এখানেও আগেভাগে এসে এক সপ্তাহের ক্যাম্প করেছে সিলেটে। এমনিতেই তারা মাঠে বরাবরই আত্মবিশ্বাসী। এবার প্রস্তুতিরও কোনো ঘাটতি দেখছেন না অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি।

“সিলেটে ক্যাম্পের আগে কাতারে প্রস্তুতিটা খুব ভালো নিয়েছি আমরা। কোনো ফাঁক রাখিনি। সিলেটের ক্যাম্পও দারুণ হয়েছে। সব মিলিয়ে খুব ভালোভাবে প্রস্তুত আমরা। কালকের ম্যাচ জয়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

আফগানদের বড় শক্তি তাদের বোলিং আক্রমণ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে স্পিন আক্রমণ। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবিকে নিয়ে গড়া স্পিন আক্রমণ শক্ত পরীক্ষা নেবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।

কন্ডিশনও আফগানদের জন্য বড় কোনো বাধা নয়। চট্টগ্রামের উইকেট অবশ্য বরাবরই ব্যাটিং সহায়ক। তবে রশিদ-মুজিবরা কার্যকর হতে পারেন সব উইকেটেই।

সিরিজ শুরুর আগে সমীকরণে বাংলাদেশ তাই একটু এগিয়ে থাকলেও আফগানরা ছেড়ে কথা বলবে না নিশ্চিতভাবেই।