মিঠুন-মোসাদ্দেক থেকে পাঁচের লড়াইয়ে এবার ইয়াসির-জয়

নেটে বেশ ভালো বোলিং করছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার অনুশীলনে এই অফস্পিনার বেশ অস্বস্তিতে ফেললেন তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও আফিফ হোসেনদের। কিন্তু ইয়াসির আলি চৌধুরি ওই নেটে যেতেই বদলে গেল চিত্র। দারুণ সব ড্রাইভের পাশাপাশি সুইপ, স্লগ সুইপে বল ফেলার জায়গাই দিচ্ছিলেন না তিনি মিরাজকে। একেকটি শটে যেন মিশে ছিল বার্তা, স্পিনকে খুব একটা তোয়াক্কা তিনি করেন না।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2022, 01:00 PM
Updated : 22 Feb 2022, 01:00 PM

প্রথমবার অবশ্য নয়, অনুশীলনে-ম্যাচে নানা সময়েই স্পিন সামলানোয় সামর্থ্যের ছাপ রেখেছেন ইয়াসির। নজর এড়ায়নি তা বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের। স্পিন খেলায় দারুণ স্কিল দেখিয়ে যেমন নজর কেড়েছেন তরুণ ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয়ও। অধিনায়ক তামিম ইকবাল জানালেন, স্পিনে দক্ষতার জন্য এই দুজনকে এখন ওয়ানডের পাঁচ নম্বর পজিশনে ভাবছে দল।

ওয়ানডেতে এই পজিশনে বাংলাদেশের সঙ্কট তৈরি হয়েছে মূলত সাকিব আল হাসান তিনে ওঠার পর থেকে। দীর্ঘদিন এই পজিশনই ছিল তার নীড়। ক্যারিয়ারের ২০৩ ইনিংসের ১২৫টিতেই তিনি ব্যাট করেছেন পাঁচে। সাফল্যও পেয়েছেন যথেষ্ট। এই পজিশনে তার রান ৩ হাজার ৮৫২, সেঞ্চুরি ৫টি। দুটিই এই পজিশনে ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা।

কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে সাকিব নিয়মিত তিনে উঠে এসে দারুণ পারফর্ম করে জায়গাটা নিজের করে নেন। তাতে শূণ্যতা তৈরি হয় পাঁচ নম্বরে। এখনও কেউ পারেননি জায়গাটা নিজের করে নিতে।

মোহাম্মদ মিঠুন অবশ্য চেষ্টা কম করেননি। পারফরম্যান্সও খুব খারাপ নয়। সাকিব তিনে ওঠার পর পাঁচে সবচেয়ে বেশি সুযোগ পেয়েছেন মিঠুনই। ১৯ ইনিংস খেলে তার ফিফটি ৫টি, রান ৩২.২৫ গড়ে ৫১৬। বাংলাদেশের বাস্তবতায় খুব খারাপ নয়। তবে ফিফটিগুলোকে বড় ইনিংসে রূপ দিয়ে নিজের দাবিটা শক্ত করে জানাতে পারেননি তিনি। পাশাপাশি ধারাবাহিকতার অভাব ও ফিফটির ফাঁকে কিছু ছোট স্কোর মিলিয়ে নড়বড়ে হয়ে পড়ে তার জায়গা। এখন তিনি দলেরই বাইরে।

বাংলাদেশের সবশেষ পাঁচ ওয়ানডের চারটিতেই পাঁচে খেলার সুযোগ পান মোসাদ্দেক। তিন ইনিংসে তিনি আউট হন ১০, ৫ ও ৫ করে। আরেকটিতে দলের বিপর্যয়ে নেমে ফিফটি করতে পারেন। কিন্তু পর্যাপ্ত সময় থাকার পরও বড় করতে পারেননি ইনিংসটি (৭২ বলে ৫১)।

একটা সমাধান হতে পারত মাহমুদউল্লাহর পাঁচে খেলা। কিন্তু তাকে ছয় নম্বরে ফিনিশারের ভূমিকায় বেশি প্রয়োজন দলের। মুশফিকুর রহিম পাঁচে খেলেছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৪ ইনিংসে। এই পজিশনের দাবি মেটানোর সামর্থ্য তার আছে। তবে তিনি থিতু চার নম্বরে।

একসময় লিটন দাস, সৌম্য সরকারকেও পাঁচে চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাদের মূল জায়গা তো টপ অর্ডার। সব মিলিয়ে পাঁচ নম্বর পজিশন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে আছে এখন।

এখানেই আপাতত দাওয়াই ভাবা হচ্ছে ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ইয়াসির ও প্রথমবার ওয়ানডে স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া জয়কে।

সিরিজ শুরুর আগের দিন অধিনায়ক তামিম নিশ্চিত করে দিলেন, তিন নম্বরে সাকিবই খেলছেন। পাশাপাশি জানালেন পাঁচ নম্বর নিয়ে দলের ভাবনা।

“গত ৬ ওয়ানডেতে একজনই তিন নম্বরে ব্যাট করেছে। এই পজিশন নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই। পাঁচ নম্বর নিয়ে একটা ভাবনার জায়গা অবশ্যই ছিল, এখানে কাউকে এখনও আমরা পাকা করতে পারিনি। ইয়াসিরকে নেওয়া হয়েছে, জয়কেও নেওয়া হয়েছে। আমাদের হাতে অপশন আছে।”

“এখানে উপযুক্ত কাউকে পেলে আমাদের জন্য খুবই ভালো। কারণ খুব গুরুত্বপূর্ণ পজিশন পাঁচ নম্বর। কখনও দ্রুত রান তুলতে হতে পারে, কখনও শুরুতে উইকেট পড়ে গেলে পুরো ইনিংস ধরে রাখতে হতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি কাউকে বের করার। ঘরোয়া ক্রিকেটে যারা ভালো করছে, তাদের আমরা সুযোগ দিচ্ছি।”

ইয়াসির ঘরোয়া ক্রিকেটেও লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ব্যাট করেন মিডল অর্ডারে। তবে মাহমুদুল হাসান জয় লিষ্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ছোট্ট ক্যারিয়ারে পুরোটাই খেলেছেন টপ অর্ডারে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন ওপেনিংয়ে ও তিনে। গত মার্চে বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের হয়ে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে ম্যান অব দা সিরিজ হওয়ার পথে চার ইনিংসে ব্যাট করেন তিনে, একটিতে ওপেনিংয়ে। জাতীয় দলে পাঁচে ব্যাট করানো হলে তার জন্য হবে তাই নতুন অভিজ্ঞতা।

তবে ২১ বছর বয়সী এই তরুণের সামর্থ্যে দারুণ আস্থা টিম ম্যানেজমেন্ট ও অধিনায়কের।

“জয়কে আমি যতটুকু দেখেছি, ৫০ ওভারের খেলায় সে মিডল অর্ডারে ব্যাট করেছে (আসলে টপ অর্ডারে)। তিন-চারে ব্যাট করেছে, আবার শীর্ষ তিনেও ব্যাট করতে পারে। টিম ম্যানেজমেন্ট বা আমরা যদি মনে করি যে তাকে শীর্ষ তিনে ব্যাট করতে হবে, তার সেই সামর্থ্য আছে। আবার আমাদের যদি মনে হয় যে তাকে পাঁচে খেলাতে হবে, সেটাও সে পারবে। ওর ক্যারিয়ারের বেশির ভাগটায় ওয়ানডে ক্রিকেটে খেলেছে ও তিন-চারের মধ্যেই। টেস্টে (বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে) খুব বেশি ওপেন সে করেনি, কিন্তু খুব ভালো শুরু পেয়েছে।”

জয়কে পাঁচ নম্বরের উপযুক্ত ভাবার পেছনে বড় কারণ হিসেবে অধিনায়ক বললেন স্পিনে দক্ষতার কথা। এখানে তিনি তুলে ধরলেন ইয়াসিরের কথাও।

“জয় এমন একজন, স্পিন যে খুব ভালো খেলে। এই জিনিস মাথায় রেখেই ওকে আমরা দলে নিয়েছি। কারণ তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে ও এমন একজন, যে স্পিন সত্যিই ভালো খেলে। রাব্বির (ইয়াসির) ক্ষেত্রেও তাই। গত কয়েক বছর ধরে সে ভালো খেলছে। ঘরোয়া ক্রিকেট বলেন বা যেখানেই যখন সুযোগ পেয়েছে, ভালো করেছে। দেখা যাক কে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করে। এই দুইজন থেকে কেউ খেললে সে পাঁচ নম্বরে খেলবে, এটুকু বলতে পারি।”

ম্যাচের আগের দিনের অনুশীলনের চিত্র বলছে, সেই একজন ইয়াসির হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ দিন নেটে অনেকটা সময় ব্যাট করতে দেখা গেছে চট্টগ্রামেরই সন্তান ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানকে।