নাফিস-তামিমের ‘পেশাদারিত্ব আগে, সম্পর্ক পরে’

দুই ভাই এগিয়ে এলেন একসঙ্গেই। সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কের নির্ধারিত চেয়ারে বসলেন ছোট ভাই। পাশে দাঁড়িয়ে বড় ভাই সঞ্চালকের ভূমিকায়। তাদের বাসায় এই দৃশ্য কল্পনা করা হয়তো কঠিন। কিন্তু মাঠে এখন এটিই বাস্তবতা। তামিম ইকবাল যেমন বললেন, জাতীয় দলের দায়িত্ব পালনের সময় পেশাদারিত্বই তাদের কাছে সবকিছুর আগে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2022, 09:34 AM
Updated : 22 Feb 2022, 10:04 AM

খেলোয়াড়ী জীবনের পাট চুকিয়ে নাফিস এখন বিসিবির চাকুরে। জাতীয় দলে তার ভূমিকা লজিস্টিকস ম্যানেজারের। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশের মাঠে পাকিস্তান সিরিজ ও ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ড সফরে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। চোটের কারণে ওই দুই সিরিজের একটিতেও ছিলেন না তামিম। জাতীয় দলে দুই ভাইয়ের দেখা হলো এবার আফগানিস্তান সিরিজ দিয়েই।

যদিও জাতীয় দলে দুই ভাইয়ের বন্ধন নিয়ে তাদের পরিবারের আশা ছিল একসময় ভিন্ন। তাদের বাবা ইকবাল খানের স্বপ্ন ছিল, তার দুই ছেলে একসঙ্গে জাতীয় দলে খেলবে। সেই স্বপ্ন বুকে লালন করেই বেড়ে ওঠেন তামিম। মনের কোনে একই তাড়না নিয়ে ক্রিকেটের আঙিনায় বিচরণ করেন নাফিস। কিন্তু গোটা পরিবারের চাওয়া আর পাওয়া মেলেনি একবিন্দুতে।

তামিম যখন জাতীয় দলে পা রাখলেন, নাফিস তখন দলের বাইরে। বাংলাদেশের হয়ে সবশেষ ম্যাচটি নাফিস খেলেন ২০০৬ সালের মার্চে। তামিমের আন্তর্জাতিক অভিষেক এর ১১ মাস পর।

ছোট ভাই যখন বাংলাদেশ দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন, নাফিস তখন ঘরোয়া ক্রিকেটে চেষ্টা করছেন নিজেকে ফিরে পেতে। কিন্তু তার সেরা সময়টি আর ফেরেনি। জাতীয় দলের দুয়ারেও আর কখনও আসা হয়নি তার। ঘরোয়া ক্রিকেটে একসঙ্গে খেললেও দেশের হয়ে চট্টগ্রামের দুই ভাইকে একসঙ্গে আর দেখা যায়নি।

সেই অপূর্ণতা এবার কিছুটা হলেও ঘুচল ভিন্ন ভূমিকায়। সেটিও নিজেদের শেকড়ে। একই ড্রেসিং রুমে দুই ভাই, নিজেদের উঠোনে অনুশীলনে দুজন পাশাপাশি। এমনকি নেটে তামিমকে থ্রো ডাউনও করছেন নাফিস। মঙ্গলবার সিরিজ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও দুই ভাই পাশাপাশি। নিজেদের দায়িত্বের খাতিরেই।

খানিকটা আবেগের দোলাও অনুভব করার কথা নয় দুজনের? একসঙ্গে দেশের জার্সিতে খেলতে না পারার দীর্ঘশ্বাস এতদিনে হাওয়ায় হারিয়ে যাওয়ার কথা। বরং নতুন প্রাপ্তির রোমাঞ্চটুকুই থাকতে পারে তরতাজা। কোনোভাবে তো বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম একসঙ্গে ঠাঁই হলো দুজনের!

তামিম অবশ্য আবেগের কপাট বন্ধ রেখে পেশাদারিত্বের দাবিটাকেই তুলে ধরলেন সংবাদ সম্মেলনে।

“দেখুন, এটা একটা এমন জায়গা, আমাদেরকে খুব খুব বেশি পেশাদার হতে হবে। হ্যাঁ, তিনি আমার ভাই। আমাদের সম্পর্ক আছে। তবে জাতীয় দলে দায়িত্ব পালন করার সময় ম্যানেজার হিসেবে তাকে আমার সম্মান করতে হবে, তারও আমাকে সম্মান করতে হবে খেলোয়াড় হিসেবে। এটা পেশাদার জায়গা যেখানে সম্পর্ক আসে পরে, পেশাদারিত্ব প্রথমে।”

তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথোপকথনে নাফিসের অনুভূতির প্রকাশে আবেগ আর পেশাদারিত্বের দুই স্রোতই বয়ে চলল পাশাপাশি।

“অবশ্যই রোমাঞ্চকর ব্যাপার… আবেগের জায়গা থেকে যদি ভাবেন, খুবই গর্বের ব্যাপার যে একসঙ্গে দুই ভাই আছি ড্রেসিং রুমে। জাতীয় দলের দায়িত্ব পালন করছি। একসঙ্গে খেলার স্বপ্নটা পূণ হয়নি, তবে এভাবে হওয়াটাও তো কম নয়। আমি রোমাঞ্চিত ও কৃতজ্ঞ এই সুযোগটার জন্য।”

“তবে দিনশেষে, দায়িত্বটাই আগে। দুজনই জাতীয় দায়িত্ব পালন করছি, এখানে পারিবারিক সম্পর্কের জায়গা পরে। তামিম যেমন বলল, পেশাদারিত্বের আগে কোনো কিছু নয়। দায়িত্বের জায়গায় আমি ওকে অধিনায়ক বা খেলোয়াড় হিসেবেই দেখব। ম্যানেজার হিসেবেও চাইব ওর কাছ থেকে সেই সম্মানের জায়গাটা অর্জন করে নিতে। আর এটাকে যেহেতু ক্যারিয়ার হিসেবে দেখছি, চাইব দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করে জায়গাটা ধরে রাখতে।”

জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমে পেশাদারিত্বের আবরণ থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে বাসায় তো আর সেই দায় নেই। তাদের পরিবারের সবাই দারুণ উচ্ছ্বসিত, জানালেন নাফিস।

“সবাই খুশি যে আমরা একসঙ্গে আছি এখানে। বাবা বেঁচে থাকলে আজ অনেক খুশি হতেন। তিনি সবসময় চাইতেন আমাদেরকে একসঙ্গে জাতীয় দলে দেখতে। খেলোয়াড় হিসেবে না হলেও তো আজ আমরা একসঙ্গে আছি! আম্মুও দারুণ খুশি। উনারও স্বপ্ন ও ইচ্ছা ছিল অনেক, আমরা জাতীয় দলে খেলব একসঙ্গে। এখন অন্যভাবে একসঙ্গে আছি, লম্বা সময় যেন থাকতে পারি, এই দোয়া করছেন। আমিও সবার কাছে দোয়া চাই।”