ভারতে টি-টোয়েন্টিতেও হোয়াইটওয়াশড উইন্ডিজ

১৫ ওভারে দলের স্কোর স্পর্শ করেনি একশ। বাকি পাঁচ ওভারে পাল্টে গেল চিত্র। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ভারতকে বড় পুঁজি এনে দিলেন সূর্যকুমার যাদব ও ভেঙ্কাটেশ আইয়ার। নিকোলাস পুরান জবাব দিলেন ফিফটির হ্যাটট্রিক করে। সঙ্গে রোমারিও শেফার্ডের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাগাল আশা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারল না তারা জয় খরা কাটাতে। ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হোয়াইটওয়াশড হলো ক্যারিবিয়ানরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2022, 05:37 PM
Updated : 20 Feb 2022, 06:45 PM

কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে রোববার তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ভারতের জয় ১৭ রানে। ১৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেতে পারে ১৬৭ পর্যন্ত।

সফরে দুই সংস্করণ মিলিয়ে ছয় ম্যাচের সবগুলোই হারল সফরকারীরা।

হারের ব্যবধান হয়তো ফুটিয়ে তুলছে না একটা সময় লড়াই কতটা জমে উঠেছিল। শুরুতে দুই ২ উইকেট হারালেও পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলে ফেলে ৬৮ রান। মাঝে বিপর্যয়ে পড়লেও পুরান ও শেফার্ডের দারুণ এক জুটিতে আবার ম্যাচে ফেরে তারা।

শেষ ১৮ বলে তাদের দরকার যখন ৩৭ রান তখন পুরান অপরাজিত ৬১ রান করে, ৩ ছক্কায় ২৩ রানে ব্যাটিংয়ে শেফার্ড। পরের ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন পুরান। ওয়েস্ট ইন্ডিজও হারিয়ে ফেলে পথ।    

ম্যাচের প্রথমভাগে দুর্দান্ত ইনিংসে ভারতের জয়ের নায়ক সূর্যকুমার। ৩১ বলে ৭ ছক্কা ও একটি চারে তিনি খেলেন ৬৫ রানের ইনিংস। ১৯ বলে অপরাজিত ৩৫ রান করেন ভেঙ্কাটেশ।   

দুই দলই একাদশে চারটি করে পরিবর্তন এনে খেলতে নামে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা ভালো হয়নি। একাদশে ফেরা রুতুরাজ গায়কোয়াড় বিদায় নেন ৪ রান করেই।

আরেক ওপেনার ইশান কিষান শুরুটা করেন দারুণ। এই কিপার-ব্যাটসম্যান চতুর্থ ওভারে শেফার্ডের চার বলের মধ্যে মারেন তিনটি চার।

২২ রানে একবার তিনি জীবন পান বোলার হেইডেন ওয়ালশ ফিরতি ক্যাচ নিতে না পারায়। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। তাকে (৩১ বলে ৩৪) বোল্ড করে দেন রোস্টন চেইস। এর আগের ওভারে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শ্রেয়াস আইয়ার (১৬ বলে ২৫)।

অধিনায়ক রোহিত শর্মা এদিন নামেন চার নম্বরে। দুই অঙ্কেই যেতে পারেননি তিনি। ৭ রান করতে খেলেন ১৫ বল।

সূর্যকুমার তৃতীয় বলেই ছক্কা মারেন ওয়ালশকে। সেই ধারা অব্যাহত রাখেন তিনি ইনিংসের শেষ পর্যন্ত। শেষ ওভারে শেফার্ডকে ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন ২৭ বলে। চতুর্থ ও পঞ্চম বলও হাওয়ায় ভাসিয়ে বাইরে পাঠিয়ে আউট হন শেষ বলে।

পঞ্চম উইকেটে ভেঙ্কাটেশের সঙ্গে সূর্যকুমারের জুটিতে ৩৭ বলে আসে ৯১ রান। শেষ ৫ ওভারে ভারত তোলে ৮৬ রান। টি-টোয়েন্টিতে এই সময়ে যা তাদের সর্বোচ্চ। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ডারবানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮০ রান ছিল আগের রেকর্ড।

রান তাড়ায় প্রথম ওভারেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারায় কাইল মেয়ার্সকে। ভারত উইকেটটা পায় রিভিউ নিয়ে। দুটি চার মেরে দিপক চাহারের পরের ওভারে বিদায় নেন শেই হোপও। আর চাহার মাঠ ছাড়েন চোট নিয়ে।

রানের চাকা সচল রাখেন পুরান ও রোভম্যান পাওয়েল। দ্বিতীয় বলেই পাওয়েল ছক্কায় ওড়ান ভেঙ্কাটেশকে। শার্দুল ঠাকুরের একই ওভারে মারেন দুটি চার ও একটি ছক্কা।

আইপিএল নিলামে ঝড় তুলে ১০ কোটি রুপিতে বিক্রি হওয়া আভেশ খান আন্তর্জাতিক অভিষেকে প্রথম দুই ওভারে দিয়ে ফেলেন ২০ রান।

সপ্তম ওভারে প্রথম আক্রমণে এসে পাওয়েলকে (১৪ বলে ২৫) বিদায় করেন হার্শাল প্যাটেল। ফাইন লেগে দারুণ ক্যাচ নেন শার্দুল।

এরপর টিকতে পারেননি অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড, জেসন হোল্ডার ও চেইস। ১২ ওভারের মধ্যে ১০০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

এরপরই পুরান ও শেফার্ডের ওই জুটি। শেফার্ড ছক্কা মারেন আভেশ ও রবি বিষ্ণইকে। ওই ওভারেই ১৩ রানে তার ক্যাচ ফেলেন ভেঙ্কাটেশ।

পুরান পূর্ণ করেন সিরিজে টানা তৃতীয় ফিফটি, ৩৯ বলে। ১৭তম ওভারের শেষ বলে শেফার্ড যখন আভেশকে আরেকটি ছক্কা মারলেন, ম্যাচে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল ভালোভাবেই।

পরের ওভারে শার্দুলের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান পুরান। ৪৭ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় তিনি সাজান ৬১ রানের ইনিংস। পরের বলে চার মারেন শেফার্ড। এরপর অবশ্য আর কিছু করতে পারেননি তিনি। পরের ওভারেই আউট হয়ে যান হার্শালের বল আকাশে তুলে (২১ বলে ২৯)।

শেষ ওভারে ২৩ রানের প্রয়োজনে শার্দুল দেন কেবল ৫ রান, সঙ্গে নেন একটি উইকেটও। ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার অবশ্য হার্শাল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ১৮৪/৫ (রুতুরাজ ৪, কিষান ৩৪, শ্রেয়াস ২৫, রোহিত ৭, সূর্যকুমার ৬৫, ভেঙ্কাটেশ ৩৫*; হোল্ডার ৪-০-২৯-১, শেফার্ড ৪-০-৫০-১, চেইস ৪-০-২৩-১, ওয়ালশ ৪-০-৩০-১ ড্রেকস ৩-০-৩৭-১, অ্যালেন ১-০-৫-০)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৭/৯ (মেয়ার্স ৬, হোপ ৮, পুরান ৬১, পাওয়েল ২৫, পোলার্ড ৫, হোল্ডার ২, চেইস ১২, শেফার্ড ২৯, অ্যালেন ৫*, ড্রেকস ৪, ওয়ালশ ০*; চাহার ১.৫-০-১৫-২, আভেশ ৪-০-৪২-০, ভেঙ্কাটেশ ২.১-০-২৩-২, শার্দুল ৪-০-৩৩-২, বিষ্ণই ৪-০-২৯-০, হার্শাল ৪-০-২২-৩)

ফল: ভারত ১৭ রানে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ তে জয়ী ভারত

ম্যান অব দা ম্যাচ: সূর্যকুমার যাদব

ম্যান অব দা সিরিজ: সূর্যকুমার যাদব।