কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে শুক্রবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ভারতের জয় ৮ রানে। টানা দুই জয়ে ওয়ানডে পর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতে নিল স্বাগতিকরা।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে এদিন নিজেদের মেলে ধরেন দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই। বিরাট কোহলির ৪১ বলে ৫২, রিশাভ পান্তের ২৮ বলে অপরাজিত ৫২ এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ১৮ বলে ৩৩ রানের ক্যামিওতে ভারত তোলে ৫ উইকেটে ১৮৬ রান।
লক্ষ্য তাড়ায় তৃতীয় উইকেটে নিকোলাস পুরান ও পাওয়েলের ৬০ বলে ১০০ রানের জুটিতে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ দুই ওভারে তাদের দরকার ছিল ২৯ রান, ক্যারিবিয়ানদের ব্যাটিং সামর্থ্যে যেটা অসম্ভব নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হারের হতাশাই সঙ্গী হয় তাদের।
৬২ রান করে ফিরেন পুরান। ৬৮ রানে অপরাজিত থেকেও একরাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন পাওয়েল।
ভারতের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারে হারায় ইশান কিষানকে। নিজের পরের ওভারে শেলডন কটরেল পেতে পারতেন রোহিত শর্মার উইকেটও। কিন্তু ২ রানে থাকা ভারত অধিনায়কের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি পয়েন্টে থাকা ব্র্যান্ডন কিং।
মাঠে নেমেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন কোহলি। আকিল হোসেনকে মারেন ওভারে দুই চার। পরে দলে ফেরা জেসন হোল্ডারকে মারেন আরও দুটি। রোমারিও শেফার্ডকে টানা দুই চার হাঁকান কোহলি, ছক্কায় ওড়ান রোহিত। তাদের দারুণ ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ভারত পায় ৪৯ রান।
এরপর রোহিত অবশ্য যেতে পারেননি বেশিদূর। যার হাতে জীবন পেয়েছিলেন রোহিত, রোস্টন চেইসের বলে এবার সেই কিংই ধরেন ক্যাচ। চেইস নিজের পরের ওভারে দ্রুত ফিরিয়ে দেন সূর্যকুমার যাদবকে।
ক্যারিবিয়ান অফ স্পিনারের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই চার মেরে রানের খাতা খোলেন পান্ত। এরপর কেবল প্রতিপক্ষ বোলারের ওপর ছড়ি ঘোরান তিনি। আরেক প্রান্তে কোহলিও বাড়াতে থাকেন দ্রুত রান। চেইসকে ছক্কায় উড়িয়ে ক্যারিয়ারের ৩০তম পঞ্চাশে পা রাখেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ নয় ইনিংসে এটি তার পঞ্চম ফিফটি।
দুই বল পরই কোহলিকে বোল্ড করে দেন চেইস। শেষ হয় সাবেক অধিনায়কের এক ছক্কা ও ৭ চারের ইনিংস। পান্তের মতো চেইসকে প্রথম বলেই চার মেরে রানের খাতা খোলেন ভেঙ্কটেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা কাইরন পোলার্ডকে ওভারে তিন চার মারেন পান্ত।২৭ বলে ফিফটি তুলে নিয়ে এই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৭ চার ও এক ছক্কায় ৫২ করে। ৪ চার ও এক ছক্কায় ভেঙ্কটেশ করেন ৩৩।
রান তাড়ায় যেমন শুরুর প্রয়োজন ছিল তা ক্যারিবিয়ানদের এনে দিতে পারেননি কিং ও কাইল মেয়ার্স। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে যুজবেন্দ্র চেহেলকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মেয়ার্স। আক্রমণে এসেই কিংয়ের অস্বস্তি থামান রবি বিষ্ণই।
নবম ওভারে ৫৯ রানে দুই ওপেনার হারানো দলকে টানেন পুরান ও পাওয়েল। এই ম্যাচেও বিষ্ণইয়ের হাতে জীবন পান পুরান। আগের ম্যাচে ক্যাচ ধরে ছক্কা দিলেও এবার বলই মুঠোয় জমাতে পারেননি বিষ্ণই। ২১ রানে বেঁচে গিয়ে পুরান পরের বলেই ছক্কায় ওড়ান চেহেলকে।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তাকে সঙ্গ দেওয়া পাওয়েল মিডউইকেট দিয়ে ওড়ান দিপক চাহারকে। পরে বিষ্ণইকে মারেন আরেকটি। ৩৮ রানে থাকা পাওয়েলের ক্যাচ নিজের বলেই ছাড়েন ভুবনেশ্বর কুমার। পরে ২৮ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন পাওয়েল, পুরানের ফিফটি আসে ৩৪ বলে।
৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৬২ করে শেষ দিকের দ্বিতীয় ওভারে পুরান আউট হলে জয়ের সুবাস পেতে থাকে ভারত। কিন্তু শেষ ওভারে পাওয়েল ওই দুই ছক্কায় কিছু উত্তেজনা ছড়িয়ে আবার মিইয়ে যান।
আগামী রোববার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৮৬/৫ (রোহিত ১৯, কিষান ২, কোহলি ৫২, সূর্যকুমার ৮, পান্ত ৫২*, ভেঙ্কাটেশ ৩৩, হার্শাল ১*; আকিল ৪-০-৩০-০, কটরেল ৩-১-২০-১, হোল্ডার ৪-০-৪৫-০, শেফার্ড ৩-০-৩৪-১, চেইস ৪-০-২৫-৩, স্মিথ ১-০-১০-০, পোলার্ড ১-০-১৪-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৭৮/৩ (কিং ২২, মেয়ার্স ৯, পুরান ৬২, পাওয়েল ৬৮*, পোলার্ড ৩*; ভুবনেশ্বর ৪-০-২৯-১, চাহার ৪-০-৪০-০, চেহেল ৪-০-৩১-১, হার্শাল ৪-০-৪৬-০, বিষ্ণই ৪-০-৩০-১)
ফল: ভারত ৮ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে স্বাগতিকরা
ম্যান অব দা ম্যাচ: রিশাভ পান্ত