কিউইদের ব্যাট-বলের দাপটে কোণঠাসা দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে অলআউট ৯৫ রানে। নিউ জিল্যান্ডের শেষ জুটিতেই রান ৯৪! ম্যাচের চিত্র অনেকটা ফুটে ওঠে স্রেফ এইটুকুতেই! সঙ্গে হেনরি নিকোলসের সেঞ্চুরি, টম ব্লান্ডেলের ‘প্রায়’ সেঞ্চুরি আর শেষ ব্যাটসম্যান ম্যাট হেনরির ফিফটি তো আছেই। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে ফিরে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের ভোগান্তিও। সবমিলিয়ে ম্যাচের ভাগ্যও এখন মোটামুটি পরিষ্কার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2022, 06:48 AM
Updated : 18 Feb 2022, 08:26 AM

২০০৪ সালের মার্চের পর টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোনো জয় নেই নিউ জিল্যান্ডের। দেড় যুগের সেই খরা ঘোচানোর মঞ্চ কিউইরা তৈরি করে ফেলেছে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের স্রেফ ২ দিনেই। প্রথম ইনিংসে ৩৮৭ রানের লিডের পর তারা দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ উইকেট নিয়েছে দ্রুতই।

টেস্টের স্কোরকার্ড দেখলে যে কেউ ভাবতে পারেন, খেলা হচ্ছে বুঝি ভিন্ন দুটি উইকেটে! দক্ষিণ আফ্রিকা যেখানে অলআউট ৯৫ রানে, সেখানেই নিউ জিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে করেছে ৪৮২। দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ৩৪ রান নিয়ে।

নিকোলসের সেঞ্চুরি, নাইটওয়াচম্যান নিল ওয়্যাগনারের ঝড়ো ব্যাটিং, বল হাতে ৭ উইকেট নেওয়া হেনরি ব্যাটিংয়ে শেষে নেমে ফিফটি, এমন অনেক কিছু পাওয়ার দিনে নিউ জিল্যান্ডের জন্য খানিকটা আক্ষেপ কেবল ব্লান্ডেলের সেঞ্চুরিটা হাতছানি দিয়েও মিলিয়ে যাওয়া। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কিপার-ব্যাটসম্যান আউট হন ৯৬ রানে।

হ্যাগলি ওভালে শুক্রবার সকালেই পাওয়া যায় গোটা দিনের পূর্বাভাস। নাইটওয়াচম্যান ওয়্যাগনার চার-ছক্কায় এলোমেলো করে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন বলের দুই ফাস্ট বোলারকে।

দিনের দ্বিতীয় ওভারেই রাবাদাকে টানা তিনটি চার মারেন তিনি। পরে রাবাদাকেই মারেন টানা দুটি বাউন্ডারি। আরেক প্রান্তে অভিষিক্ত পেসার গ্লেন্টন স্টুয়ারম্যানও ছাড় পাননি। তার এক ওভারে আসে দুই চার, এক ছক্কা। পরে স্টুয়ারম্যানকে আরেকটি ছক্কাতেও ওড়ান তিনি।

সকাল বেলার উইকেটে পেসারদের সহায়তা যেটুকু ছিল, ওয়্যাগনারের ব্যাটের তাণ্ডবে তা মিলিয়ে যায় বাতাসে। দিনের প্রথম ১২ ওভারেই ৭০ রান তুলে ফেলে নিউ জিল্যান্ড।

একটুর জন্য অবশ্য ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি পাননি তিনি। রাবাদার বলে সীমানায় ধরা পড়েন ৪৯ রানে। তার ৭ চার ও ২ ছক্কার সবকটিই আসে রাবাদা-স্টুয়ারম্যানের বলে।

৩৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা নিকোলস ততক্ষণে ফিফটি পেরিয়ে গেছেন নিজের মতোই ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে। লাঞ্চের পর সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি ১৫৬ বলে।

৪৫ টেস্টে এটি তার অষ্টম সেঞ্চুরি। রস টেইলর অবসর নেওয়ার পর তাকে চার নম্বরে নিয়মিত করতে চায় নিউ জিল্যান্ড। এই ইনিংসে জানান দিলেন, তিনি তৈরি।

প্রথম দিন দুইবার জীবন পাওয়া ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির পর আর টেকেননি বেশিক্ষণ। দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে তার ইনিংস থামে ১০৫ রানে। এর আগেই ড্যারিল মিচেলকে (১৫) ফিরিয়ে প্রথম উইকেটের স্বাদ পান স্টুয়ারম্যান।

দক্ষিণ আফ্রিকার ভোগান্তি তাতে শেষ হয়নি। একাদশে ফেরার টেস্টে ৪২ বলে ৪৫ রানের ক্যামিও খেলেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। সপ্তম উইকেটে ৭৬ রানের জুটি গড়েন তিনি ব্লান্ডেলের সঙ্গে।

লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে পরে দলকে আরও এগিয়ে নেন ব্লান্ডেল। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বড় হতাশা হয়ে আসে ব্লান্ডেল ও হেনরির জুটি। দশম উইকেটে দারুণ সব শট খেলে দ্রুত রান বাড়ান এই দুজন।

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের ম্যাচ হেনরি আরও স্মরণীয় করে রাখেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটিতে।

অভিষেক ও তৃতীয় টেস্টে সেঞ্চুরির পর ব্লান্ডেল ১৬তম টেস্টে এসে আরেকবার তিন অঙ্ক ছোঁয়ার সম্ভাবনা জাগান। কিন্তু থমকে যান স্রেফ একটি বাউন্ডারির দূরত্বে। ১২ চারে ১৩৮ বলে ৯৬ করে আউট হন বাঁহাতি পেসার মার্কো ইয়ানসেনের বলে।

শেষ জুটিতে আসে ৯৪ রান, এই দুই দেশের লড়াইয়ে যা রেকর্ড।

হেনরি অপরাজিত থেকে যান ৬৮ বলে ৫৮ রানে। ১১ নম্বরে নেমে নিউ জিল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যানের তৃতীয় ফিফটি এটি। ১৯৭৩ সালে রিচার্ড কলিঞ্জ করেছিলেন অপরাজিত ৬৮, ২০১৩ সালে ট্রেন্ট বোল্ট অপরাজিত ৫২।

প্রথম ইনিংসে বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমেই আবার বিপদে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই টিম সাউদির বলে এলবিডব্লিউ সারেল এরউইয়া। প্রথম ইনিংসে ১০ রানের পর অভিষিক্ত ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রাপ্তি শূন্য।

হেনরি একটু পর শূন্য রানে বিদায় করে দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগারকেও। পরে সাউদির বলে যখন স্লিপে ক্যাচ দিলেন এইডেন মারক্রাম, প্রোটিয়াদের রান ৩ উইকেটে ৪!

এরপর টেম্বা বাভুমা নেমে চেষ্টা করেন পাল্টা আক্রমণের। অপরাজিত থেকে যান ২০ বলে ২২ রান করে। এ দিন আর কোনো উইকেট হারায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ইনিংস পরাজয় এড়াতেই তাদের অপেক্ষায় এখনও ভীষণ বন্ধুর পথ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৯৫

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস:  ১১৭.৫ ওভারে ৪৮২ (আগের দিন ১১৬/৩) (নিকোলস ১০৫, ওয়্যাগনার ৪৯, মিচেল ১৬, ব্লান্ডেল ৯৬, ডি গ্র্যান্ডহোম ৪৫, জেমিসন ১৫, সাউদি ৪, হেনরি ৫৮*; রাবাদা ৩০-৬-১১৩-২, স্টুয়ারম্যান ২৯-৫-১২৪-১, ইয়ানসেন ২৯.৫-৩-৯৬-২, অলিভিয়ের ২১-১-১০০-৩, মারক্রাম ৮-০-২৭-২)।

দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৯ ওভারে ৩৪/৩ (এরউইয়া ০, এলগার ০, মারক্রাম ২, ফন ডার ডাসেন ৯*, বাভুমা ২২*; সাউদি ৫-১-২০-২, হেনরি ৪-১-১৩-১)।