বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফটের আগে থেকেই যারা ছিল সবচেয়ে সক্রিয়, বিদেশি ক্রিকেটার সংগ্রহে যারা ছিল এগিয়ে, ড্রাফটেও পরিকল্পনার ছাপ রেখে যে দুই দল গড়েছিল সবচেয়ে গোছানো স্কোয়াড, টুর্নামেন্টের নানা বাঁক পেরিয়ে তারাই আজ লড়বে ট্রফি ছোঁয়ার শেষ ধাপে। বিপিএলের অষ্টম আসরের ফাইনালে মুখোমুখি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুন বরিশাল।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচটি শুরু বিকেল সাড়ে ৫টায়।
কুমিল্লার সামনে আজ তৃতীয় ট্রফির হাতছানি, বরিশালের সামনে প্রথম। যদিও বিপিএলে এই হিসেব রাখা খুব গোলমেলে। ফ্র্যাঞ্চাইজির ধারাবাহিকতাই যে নেই!
শহর অনেক সময় ঠিক থাকলেও একেক আসরে বদলে যায় মালিকানা, সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজির নামও। তবে তৃতীয় আসর থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স মোটামুটি নিয়মিত দল। এবার তাদের সামনে সুযোগ রেকর্ড তৃতীয় শিরোপার।
বরিশালের ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম আগের আসরগুলোয় কখনও ছিল বার্নার্স, কখনও বুলস। ট্রফি কখনও ছুঁয়ে দেখা হয়নি কোনো দলেরই। এবার ফরচুন জিতলে তাই প্রথমবার বিপিএল ট্রফি যাবে বরিশালে।
কাগজে-কলমে দুই দলের কোনো একটিকে এগিয়ে রাখা কঠিন। তেমনি মাঠের ক্রিকেটেও সবচেয়ে ধারাবাহিক দল ছিল এই দুটিই। এমনকি, মুখোমুখি লড়াইয়েও প্রাথমিক পর্বে ছিল ১-১ সমতা। তবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে দুর্দান্ত বোলিং আর সাকিবের অধিনায়কত্বের স্কিলে কুমিল্লাকে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখে বরিশাল। ফাইনালের আগে তাই বাড়তি বিশ্রামও পেয়েছে তারা। কুমিল্লা পরে ফাইনালে উঠেছে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জিতে।
বোলিংটাই বরিশালের মূল শক্তি। সাকিব আর আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমান দুর্দান্ত বোলিং করে চলেছেন। সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সফলতম বোলার ডোয়াইন ব্রাভো তো আছেনই। এমনকি দেশের দুই বাঁহাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা ও শফিকুল ইসলামও প্রয়োজনের সময় মেলে ধরছেন নিজেদের।
ব্যাটিং তাদের খুব ভালো হয়নি টুর্নামেন্টজুড়েই। সবশেষ কয়েক ম্যাচে মুনিম শাহরিয়ার দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিলেও ক্রিস গেইলের ব্যাট এখনও নিশ্চুপ প্রায়। পরের দিকে সাকিব আল হাসান ছাড়া ধারাবাহিক নন কেউই। মূলত বোলিং দিয়েই তারা একের পর এক ম্যাচ জিতে এখন শিরোপার কাছাকাছি।
এখন আর স্রেফ একটি ম্যাচ। খুব গবেষণা কিংবা ভাবাভাবির অবকাশ নেই। ফাইনালের আগের দিন কোচ খালেদ মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে বললেন, তাদের ভাবনাজুড়ে কেবল শিরোপাই আছে।
“ফাইনাল তো ফাইনালই, এর ওপরে কিছু নাই। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলে এখানে এসেছি। এখানে দ্বিতীয় হওয়ার কোনো মূল্যায়ন থাকে না। টার্গেট অবশ্যই এক নম্বর হওয়ার। আমরা আত্মবিশ্বাসী। দল ভালো শেপে আছে, ভালো খেলছে। দলের মধ্যে একটা প্রেরণা আছে।”
কুমিল্লার মূল চালিকাশক্তি তাদের তিন বিদেশি ফাফ দু প্লেসি, সুনিল নারাইন ও মইন আলি। প্রতি ম্যাচেই পারফর্ম করেছেন বিদেশির কেউ না কেউ। সঙ্গে দেশিদের টুকটাক অবদানে এগিয়ে গেছে দল। বোলিংয়ে মুস্তাফিজুর রহমান যথারীতি দুর্দান্ত ধারাবাহিকতায় ফাইনালের আগ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
ফাইনালের আগের দিন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস বললেন, ট্রফি জয়ে আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই তাদের।
ফাইনালের দুই প্রতিপক্ষের একটা বড় পার্থক্য, বরিশালের সেরা পারফরমার এখনও পর্যন্ত দেশেরই একজন এবং তাদের অধিনায়ক। বল হাতে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ধারাবাহিক ছিলেন সাকিব। ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো না হলেও পরে জ্বলে ওঠেন। কোয়ালিফায়ার ম্যাচের আগে অবিশ্বাস্যভাবে টানা ৫ খেলায় ম্যাচ-সেরা হওয়ার বিশ্বরেকর্ডও গড়েন।
ব্যাট-বলের পারফরম্যান্সের মতো সাকিবের কৌশলি নেতৃত্বও গড়ে দিচ্ছে ব্যবধান। কোচ খালেদ মাহমুদ বললেন, অধিনায়কের ভেলাতেই ভেসে চলেছে তাদের দল।
“অধিনায়ক যখন ভালো খেলে, সবকিছু সহজ হয় আসলে। সাকিব সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সবসময় যেটা বলছিলাম, ওর তাগিদটা বেশি। ও যখন ভালো খেলে, সব ব্যাপারগুলো সহজ হয়ে যায়। মাঠ খুব ভালো চালাচ্ছে ও।”
অধিনায়ক হিসেবে ইমরুলের তেমন কোনো পরিচিত বা খ্যাতি, নেই তেমন কিছুই। তবে একটা জায়গায় তিনি ফাইনাল ম্যাচটি শুরু করবেন সাকিবের পাশাপাশি থেকেই। দুজনই অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন একটি করে বিপিএল ট্রফি। আরেকটি শিরোপার এত কাছে এসে তিনি হারিয়ে যেতে দিতে চান না।
“কুমিল্লাকে একবার চ্যাম্পিয়ন করেছি, আরেকবার যদি করতে পারি, নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করব।”
ফাইনালের মতো ম্যাচে ভাগ্যটাকে পাশে পাওয়া দরকার বটে অনেক সময়। তেমনি স্কিলের প্রদর্শনীতে নিজের ভাগ্য গড়ে নেওয়াও জরুরি। তবে সবচেয়ে বেশি জরুরি, স্নায়ুর লড়াইয়ে জয়। বড় ম্যাচ মানেই বড় চাপ!