সাকিবের গুরুর দুর্ভাবনা যখন ‘সাকিবের মাথা’

২২ গজের লড়াই যতটা ব্যাট-বলের, ততটাই মস্তিষ্কের। কৌশলের সেই খেলা শুরু হয়ে যায় মাঠের লড়াইয়ের বেশ আগে থেকেই, চলতে থাকে ম্যাচ জুড়ে। এখানেই সাকিব আল হাসানকে সবচেয়ে বেশি সমীহ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের। সাকিবকে খুব ভালো করে চেনেন বলেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ জানেন, বিপিএল ফাইনালের মূল লড়াইটা হবে সাকিবের ক্ষুরধার মস্তিষ্কের সঙ্গে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2022, 12:38 PM
Updated : 17 Feb 2022, 03:41 PM

স্রেফ খেলোয়াড় ও কোচের সীমানা ছাড়িয়ে দুজনের সম্পর্কটা আরও গভীরে পৌঁছে গেছে অনেক আগেই। ক্রিকেটার ও মানুষ সাকিবকে সম্ভবত সালাউদ্দিনের চেয়ে ভালো বোঝেন খুব কম জনই। সাকিবের কাছেও তেমনি যে কোনো সংকটে বরাবরের আস্থা প্রিয় এই কোচ। এবারের বিপিএল ফাইনাল শুক্রবার এই দুজনকে দাঁড় করাচ্ছে মুখোমুখি।

সালাউদ্দিনের কোচিংয়ে দুইবার বিপিএল শিরোপার স্বাদ পেয়ে গেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। হাতছানি এবার তৃতীয় ট্রফির। সেখানেই শেষ বাধা সাকিবরা। ব্যাট-বলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে তো বটেই, সঙ্গে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েও ফরচুন বরিশালকে ফাইনালে তোলায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা সাকিবের।

পেশাদার জগতে সম্পর্কগুলোকে এক পাশে সরিয়ে রেখেই লড়তে হয় মাঠে। সালাউদ্দিন যেমন ফাইনালের আগের দিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানালেন, এমনিতে নিত্য দুজনের যোগাযোগ হলেও বিপিএল শুরুর পর থেকে সাকিবের সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি তার!

ফাইনালে সাকিবের ক্রিকেটীয় কৌশলই যে তাদের মূল বাধা, এটি প্রকাশেও অকপট কুমিল্লা কোচ।

“বরিশালের যে শক্তি আছে, সেটা হলো সাকিব আল হাসান। সাকিবের মাথার সঙ্গে আমাদের খেলতে হবে। খুব ভালো অধিনায়কত্ব করছে সে এবং তার যতটুকু সম্পদ আছে, সেগুলোর খুব ভালো ব্যবহার করছে। বিশেষ করে তার বোলিং বিভাগ নিয়ে। চার-পাঁচটি ম্যাচে তারা খুব কম রান ডিফেন্ড করেছে, বোঝাই যায় যে পরিকল্পনা করে এগোচ্ছে।”

“এটাই আমি বলব যে সাকিবের মাথার সঙ্গে আমাদের খেলতে হবে। কারণ, অনেক সময় ও অনেক ট্রিকস করে, যা ব্যাটসম্যানরা বুঝতে পারে না। সেটা যদি আমরা ওভারকাম করতে পারি, তাহলে জয়ের সম্ভাবনা থাকবে।”

ফাইনালের আগে দুই দলের তিন দফায় দেখা হয়ে গেছে। তাতে গুরুর দলের সঙ্গে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে শিষ্যর দল। তবে একটা জায়গায় গুরু অসহায়। তিনি দলকে কেবল বাইরে থেকে তৈরি করে দিতে পারেন, মাঠের ভেতরে তার নিয়ন্ত্রণের কিছু নেই। সাকিব সেখানে মাঠেও নিজের মতো করতে পারেন অনেক কিছু। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে বদলে ফেলতে পারেন ছক। এবারের বিপিএলে সেই নমুনা দেখাও গেছে নানা ম্যাচে।

সালাউদ্দিন এই সত্যটি মেনে নিয়েই ভরসা রাখছেন তার দলের অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের ওপর।

“সাকিব মাঠে খেলবে, আমি বাইরে থাকব। মাঠের ভেতরে আমাদের ছেলেরা যদি বুঝতে পারে, সেটা অনেক কাজে লাগবে।”

“ইমরুলও খুব ভালো অধিনায়কত্ব করছে। ইমরুল যদি ঠিকমতো তার মাথা ঠাণ্ডা রাখে, আমার মনে হয় আমাদেরও ভালো করার সুযোগ থাকবে। গতকালকেও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেও খুব মাথা দিয়ে খেলেছে। আস্তে আস্তে সে খুব ভালো অধিনায়ক হবে, আমার মনে হচ্ছে। আগামীকালও নার্ভ ধরে রাখতে পারলে ভালো করার সুযোগ থাকবে। চেষ্টা থাকবে বরিশাল যে কৌশল নেবে, আমরা যেন ওভারকাম করতে পারি।”

বাংলাদেশ ক্রিকেটের বাস্তবতায় বরিশাল দলের ‘থিংক ট্যাংক’ দারুণ সমৃদ্ধ। সাকিবের সঙ্গে আছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল কোচ খালেদ মাহমুদ, ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন দেশের ক্রিকেটের আরেক খ্যাতিমান কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

কুমিল্লা দলেও তেমনি দেশের সেরা কোচ বলে বিবেচিত সালাউদ্দিনের সঙ্গে পরামর্শক হিসেবে আছেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ স্টিভ রোডস, ঘরোয়া ক্রিকেটের আরেক পরিচিত কোচ সোহেল ইসলাম। মাঠের বাইরে কৌশলের লড়াইয়ে তাই কোনো দলকেই পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই।

সালাউদ্দিনের মতে, মস্তিষ্ক আর স্নায়ুর লড়াইয়েই গড়া হবে ম্যাচের ভাগ্য।

“একে তো এটা নার্ভের লড়াই, এর সঙ্গে কার মাথা কতটা কাজ করছে এবং উইকেট অনুযায়ী কারা কীভাবে খেলছে, এটার ওপরে নির্ভর করবে ফলাফল।”

“বড় ম্যাচে মাথাটা গুরুত্বপূর্ণ। এসব ম্যাচে মাথা দিয়ে যত খেলতে পারবেন, ততই এগিয়ে থাকবেন। তাদের যেমন আছে, আমাদেরও অনেক বড় বড় মাথা আছে। এটা একটা সুবিধা যে, আমাদের দলে অনেকেই আছেন অনেক বড় পর্যায়ে খেলেছে। তাদেরও মাথা ভালো আছে। আসলে বোঝা যাবে, কালকে কারা নার্ভ ধরে রাখতে পারে।”