দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে ক্রাইস্টচার্চে ৯৫ রানেই শেষ দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।
৯০ বছর পর টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে একশর নিচে গুটিয়ে গেল তারা।
উইকেটে হালকা ঘাসের ছোঁয়া আছে বটে। তবে সবুজের গালিচা নয়। হ্যাগলি ওভালে ওর চেয়েও সবুজ উইকেট থাকে অনেক সময়ই। তবে বাতাসে সুইং করেছে বল, উইকেটে মিলেছে সিম মুভমেন্ট। বাড়তি বাউন্স তো এখানে থাকেই। সবকিছুই কাজে লাগিয়ে প্রোটিয়া ব্যাটিংয়ের জন্য বিভীষিকা হয়ে ওঠেন হেনরি। স্কিলফুল বোলিংয়ের দারুণ প্রদর্শনীতে ৭ উইকেট নেন তিনি স্রেফ ২৩ রান দিয়ে।
টেস্টে তার ক্যারিয়ার সেরা তো বটেই, ১৫ টেস্টের ক্যারিয়ারে ইনিংসে ৫ উইকেটই পেলেন প্রথমবার। ৭৯ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারেও তার সেরা বোলিং এটি।
এই পারফরম্যান্সে তার নাম লেখা হয়ে যায় রেকর্ড বইয়েও। দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডে স্পর্শ করেন কিংবদন্তি স্যার রিচার্ড হ্যাডলিকে। ১৯৭৬ সালে ওয়েলিংটনে ভারতের বিপক্ষে ২৩ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন হ্যাডলি।
ব্যাটিংয়ে নেমে পরে নিউ জিল্যান্ডও খুব দাপট দেখাতে পারেনি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ঢের ভালো হয়েছে ব্যাটিং। লিডও নেওয়া হয়ে গেছে কিউইদের। দিন শেষ করেছে তারা ৩ উইকেটে ১১৬ রান নিয়ে।
নিউ জিল্যান্ডের জন্য এটি একটি পরীক্ষার ম্যাচ। ২০০৮ সালের পর প্রথমবার একইসঙ্গে তারা পাচ্ছে না রস টেইলর, কেন উইলিয়ামসন ও বোল্টকে। টেইলর এখন অবসরে, চোট নিয়ে বাইরে অধিনায়ক উইলিয়ামসন আর পিতৃত্বকালীন ছুটিতে বোল্ট। পরীক্ষার শুরুটা তাদের হলো বেশ ভালো।
টস দিয়ে শুরু তাদের ভালো দিনের। দক্ষিণ আফ্রিকাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যও কিউইরা পেয়ে যায় দ্রুত। গত জুন মাসে ইংল্যান্ডে টেস্ট খেলে দুই ইনিংসে ৩টি করে উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন হেনরি। এরপর আর সুযোগই পাচ্ছিলেন না। এবার ফিরেই উইকেট পান নিজের প্রথম আর ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে।
সেটিও প্রতিপক্ষ অধিনায়কের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। শরীর থেকে দূরে ড্রাইভ করে ডিন এলগার বিদায় নেন ১ রানে। তৃতীয় স্লিপে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন টিম সাউদি।
হেনরি পরে এক ওভারেই ফেরান এইডেন মারক্রাম ও রাসি ফন ডার ডাসেনকে। ৩৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার রানের গতিও যায় থমকে। লাঞ্চে যায় তারা ২৮ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৪ রান নিয়ে।
লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই আরেকটি বড় ধাক্কা। এবার আলগা শটে টিম সাউদিকে উইকেট দিয়ে ফেরেন টেম্বা বাভুমা।
ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি এরপরই পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সেটি স্রেফ ৩৩ রানের। ষষ্ঠ উইকেটে এই জুটি গড়েন জুবাইর হামজা ও কাইল ভেরেইনা।
৫ টেস্ট খেলার পর ক্যারিয়ার থমকে থাকা হামজা ২ বছর পর আবার টেস্টে নেমে করেন ইনিংসের সর্বোচ্চ ২৫ রান। তাকেও থামান হেনরি।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শেষের শুরু সেখানেই। হেনরি একটু পর এক ওভারেই নেন ৩ উইকেট!
১৮ রান করা ভেরেইনাকে ফিরিয়ে তিনি প্রথমবার পান টেস্টে ৫ উইকেটের স্বাদ। সেটি উদযাপন করেন ওই ওভারেই টানা দুই বলে কাগিসো রাবাদা ও গ্লেন্টন স্টুয়ারম্যানকে ফিরিয়ে।
পরে শেষ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ইনিংসের ইতি টানেন নিল ওয়্যাগনার। ১০ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
বোলিং সাফল্যের পর ব্যাটিংয়ের শুরুটা খুব সাবলিল করতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। তবে টম ল্যাথাম ও উইল ইয়াং প্রথম ১১ ওভার কাটিয়ে দেন নিরাপদে।
ল্যাথামকে ফিরিয়ে অবশ্য শুরুতেই সাফল্য পেতে পারতেন অভিষিক্ত পেসার স্টুয়ারম্যান। তবে গালিতে ক্যাচ নিতে পারেননি মার্কো ইয়ানসেন। বাঁহাতি এই পেসার পরে ইয়াংকে ফিরিয়ে ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি।
পরে ভেতরে ঢোকা দারুণ এক ডেলিভারিতে ডুয়ানে অলিভিয়ের বোল্ড করে দেন ল্যাথামকে।
তবে প্রোটিয়া বোলারদের খুব একটা সহায়তা করতে পারেননি ফিল্ডাররা। হেনরি নিকোলস জীবন পান দুই দফায়। এই সুযোগে জুটি গড়ে তোলেন তিনি ডেভন কনওয়ের সঙ্গে। এই জুটিতেই লিড পেয়ে একশ পেরিয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড।
৭৫ রানের এই জুটি থামান অলিভিয়ের। ৩৬ রান করে কনওয়ে বল টেনে আনেন স্টাম্পে। নিকোলস টিকে গিয়ে দিন শেষ করেন নাইটওয়াচম্যান ওয়্যাগনারকে নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৪৯.২ ওভারে ৯৫ (এলগার ১, এরউইয়া ১০, মারক্রাম ১৫, ফন ডার ডাসেন ৮, বাভুমা ৭, হামজা ২৫, ভেরেইনা ১৮, ইয়ানসেন ২*, রাবাদা ০, স্টুয়ারম্যান ০, অলিভিয়ের ১; সাউদি ১২-২-৩৩-১, হেনরি ১৫-৭-২৩-৭, জেমিসন ১১-৪-১৯-১, ওয়্যাগনার ৯.২-২-১১-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ২-১-১-০)।
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৯ ওভারে ১১৬/৩ (ল্যাথাম ১৫, ইয়াং ৮, কনওয়ে ৩৬, নিকোলস ৩৭*, ওয়্যাগনার ২*; রাবাদা ১২-৪-৩৪-০, স্টুয়ারম্যান ১১-৫-১৯-০, ইয়ানসেন ৮-৩-১১-১, অলিভিয়ের ৮-১-৩৬-২)।