নারাইনের ব্যাটিং তাণ্ডবে ফাইনালে কুমিল্লা

প্রথম ইনিংসে কতবার বদল হলো লাগাম। কখনও চট্টগ্রাম, কখনও আবার কুমিল্লা বসল শক্ত অবস্থানে। পরের ইনিংসে ব‍্যাটন বদল হলো না একবারও, কিন্তু ম‍্যাচ হয়ে উঠল আরও প্রাণবন্ত। সেটা সম্ভব হলো সুনিল নারাইনের জন‍্য। খুনে ইনিংসে বিপিএলে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়ে ফয়সালা করে দিলেন ম‍্যাচের ভাগ্য। তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠল কুমিল্লা।  

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2022, 01:45 PM
Updated : 16 Feb 2022, 03:57 PM

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ৭ উইকেটে জিতেছে ইমরুল কায়েসের দল। ১৪৯ রানের লক্ষ‍্য ছুঁয়ে ফেলেছে ৪৩ বল বাকি থাকতে।

১৬ বলে ছয় ছক্কা ও পাঁচ চারে ৫৭ রানের খুনে ইনিংসে চট্টগ্রামকে লড়াইও করতে দেননি নারাইন। তার ৫৬ রানই আসে বাউন্ডারি থেকে।

নারাইনের দেখানো পথ ধরেই যেন ঝড় তোলেন মইন আলি। বাঁহাতি এই ইংলিশ অলরাউন্ডার ১৩ বলে করেন ৩০ রান। এর আগে বোলিংয়ে ২০ রানে নেন ৩ উইকেট। প্রথম ২ ওভারে স্রেফ ৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেওয়ার পর শেষ ওভারে তিনি ১৬ রান দিয়ে বসেন। তাতে বোলিং ফিগারটা হয়ে যায় একটু ‘খরুচে’ ৩-১-২০-৩।

ব‍্যাটিংয়ে ভালো করা মেহেদী হাসান মিরাজের পরের অংশ একদমই ভালো কাটেনি। বোলিংয়ে এক ওভারেই দেন ২৩ রান। পরে ছাড়েন একটি ক‍্যাচ। কুমিল্লার ব‍্যাটসম‍্যানদের তাণ্ডবের মধ‍্যেও নাসুম ৪ ওভারে দেন কেবল ৩০ রান।

শেষটা ভীষণ বিবর্ণ হলেও টস জিতে ব‍্যাটিংয়ে নেমে আলো ঝলমলে শুরু পেয়েছিল চট্টগ্রাম। নাহিদুল ইসলামের জায়গায় একাদশে আসা আবু হায়দারের প্রথম বলটি ছিল খুবই বাজে। লেগ স্টাম্পের বাইরে হাফ ভলি অনায়াসে বাউন্ডারিতে পাঠান অসুস্থতা কাটিয়ে এক ম‍্যাচ পর দলে ফেরা উইল জ‍্যাকস। আগের ম‍্যাচে গোল্ডেন ডাক পাওয়া জাকিরও শুরু করেন চার দিয়ে।

তৃতীয় ওভারে নারাইনকে চার মেরে স্বাগত জানান জ‍্যাকস। পরে মারেন ছক্কা। তবে পূর্বাভাসেই তার ঝড় থামিয়ে দেন শহিদুল ইসলাম। লেংথ বল লেগে ঘুরানোর চেষ্টায় ব‍্যাটের ওপরের কানায় লেগে কাভারে ধরা পড়েন ইংলিশ ওপেনার।

বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামকে সুইপ করে বাউন্ডারি মারেন জাকির। সেই ওভারেই আগের ম‍্যাচের নায়ক চাডউইক ওয়ালটনকে এলবিডব্লিউ করে দেন তানভির।

দুই ওপেনারের মতো অধিনায়ক আফিফ হোসেনও রানের খাতা খোলেন মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে চার মেরে। লেগ স্টাম্পের বল চমৎকারভাবে গাইড করে ফাইন লেগ দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠান তিনি।

পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ৬ জন ভিন্ন বোলারকে আনেন ইমরুল কায়েস। শেষ ওভারটি করতে এসে বড় সাফল‍্য পান মইন। পরপর দুই বলে বিদায় করেন জাকির ও শামীম হোসেনকে। পিছিয়ে গিয়ে লেগ দিয়ে তুলে মারার চেষ্টায় মিড অনে ধরা পড়েন বাঁ হাতি ওপেনার। প্রথম বলেই বেরিয়ে এসে চড়াও হওয়ার চেষ্টায় স্টাম্পড হন শামীম।

মইনের হ‍্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া মিরাজ টানেন দলকে। মইনের পরের ওভারে আফিফের চমৎকার ক্যাচ নেন তানভির। আগের চার ইনিংসে তেমন কিছু করতে না পারা আকবর তাকে দেন সঙ্গ।

প্রথম ৫ বল ডট খেলার পর সিঙ্গেল নিয়ে রানের খাতা খোলেন মিরাজ। পরে টানা দুই ওভারে তানভির ও শহিদুলকে চার মেরে শুরু করেন লড়াই। মইনকে স্লগ সুইপ করে ছক্কায় ডানা মেলেন আকবর। দুটি ডাবলসের পর মারেন চার।

তানভিরকে স্লগ সুইপে ছক্কায় ওড়ান মিরাজ। সেই ওভারেই কাভারের ওপর দিয়ে আকবরের ছক্কায় ৩০ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করে জুটির রান। আবু হায়দারকে চার মারার পর ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় আকাশে তুলে দেন আকবর। নিজেই বল মুঠোয় জমান বোলার।

ছক্কার চেষ্টায় মিরাজ ফিরে যান ক‍্যাচ দিয়ে। শেষ দিকে দুই ছক্কায় দলকে দেড়শর কাছে নিয়ে যান মৃত‍্যুঞ্জয় চৌধুরি।

রান তাড়ায় প্রথম বলেই লিটন দাসকে হারায় কুমিল্লা। শরিফুল ইসলামের বাড়তি লাফানো বলে চমৎকার ডাইভিং ক‍্যাচ নেন আকবর।

আরেক ওপেনার নারাইন হয়ে ওঠেন বোলারদের জন‍্য দুঃস্বপ্ন। ছক্কায় শুরুর পর শরিফুলের সেই ওভারে মারেন আরও দুটি চার। মিরাজের পরের ওভারে তিন ছক্কার সঙ্গে হাঁকান একটি চার। প্রথম ২ ওভার থেকে আসে ৪৩ রান! বিপিএলের ইতিহাসেই প্রথম দুই ওভারে যা সর্বোচ্চ।

ইমরুল কায়েসকে ১ রানে ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন মিরাজ। আফিফের বলে কুমিল্লা অধিনায়কের ক‍্যাচ কাভারে নিতে পারেননি তিনি। শেষ বলে সিঙ্গেল নেওয়া ইমরুল পরের ওভারে নাসুমকে ছক্কার পর মারেন চার।

দুই ওভার পর স্ট্রাইক পেয়ে আফিফকে চারের পর ছক্কা মারেন নারাইন। ১১ বলে তার রান হয়ে যায় ৪৬। সম্ভাবনা জাগে টি-টোয়েন্টিতে ১২ বলে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড স্পর্শ করার। কিন্তু পরের বলে নিতে পারেন কেবল এক রান।

মৃত‍্যুঞ্জয়কে ছক্কায় উড়িয়ে ১৩ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে এই আসর তো বটেই, বিপিএলের ইতিহাসেই দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন নারাইন। সেই প্রথম আসরে ১৬ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে এতদিন রেকর্ডটি ছিল বরিশাল বার্নার্সের পাকিস্তানী ওপেনার আহমেদ শেহজাদের।

টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে এর চেয়ে কম বলে ফিফটি আছে কেবল যুবরাজ সিং, ক্রিস গেইল ও হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের। তিন জনই পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ১২ বলে।

এরপর একটি চার মেরেই ফিরে যান নারাইন। মৃত‍্যুঞ্জয়কে ক‍্যাচ দিয়ে শেষ হয় ৫৭ রানের ইনিংস। ভাঙে ৩৩ বলে গড়া ৭৯ রানের জুটি। যেখানে ইমরুলের অবদান ১৭ বলে ১৬।

অনেকটা সময় ক্রিজে থাকলেও ততটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না ইমরুল। বেনি হাওয়েলকে স্লগ সুইপ করে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ক‍্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ইনিংস। কুমিল্লা অধিনায়ক তিন চার ও এক ছক্কায় ২৪ বলে করেন ২২।

বাকিটা অনায়াসে শেষ করেন ফাফ দু প্লেসি ও মইন। মাঝে মিনিট পাঁচেক আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ থাকলেও নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারেনি চট্টগ্রাম। শরিফুলকে দুই ছক্কায় ম‍্যাচ শেষ করে দেন মইন। তার সঙ্গে স্রেফ ২৭ বলে ৫৪ রানের ইনিংস গড়া দু প্লেসি অপরাজিত থাকেন ২৩ বলে ৩০ রানে।

আগামী শুক্রবার শিরোপা লড়াইয়ে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চট্টগ্রাম চ‍্যালেঞ্জার্স: ১৯.১ ওভারে ১৪৮ (জ‍্যাকস ১৬, জাকির ২০, ওয়ালটন ২, আফিফ ১০, শামীম ০, মিরাজ ৪৪, আকবার ৩৩, হাওয়েল ৩, মৃত‍্যুঞ্জয় ১৫, শরিফুল ০*, নাসুম ০; আবু হায়দার ২-০-২১-১, মুস্তাফিজ ৩.১-০-১৩-১, নারাইন ৪-০-২৪-০, শহিদুল ৩-০-৩৩-৩, তানভির ৪-০-৩৩-১, মইন ৩-১-২০-৩)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১২.৫ ওভারে ১৪৯/৩ (লিটন ০, নারাইন ৫৭, ইমরুল ২২, দু প্লেসি ৩০*, মইন ৩০*;  শরিফুল ১.৫-০-৩১-১, মিরাজ ১-০-২৩-০, আফিফ ২-০-১৬-০, নাসুম ৪-০-৩০-০, মৃত‍্যুঞ্জয় ২-০-৩২-১, হাওয়েল ২-০-১১-১)

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৭ উইকেটে জয়ী

ম‍্যান অব দা ম‍্যাচ: সুনিল নারাইন