দুর্দান্ত বোলিংয়ে কুমিল্লাকে হারিয়ে ফাইনালে সাকিবরা

৯ ওভারে রান ১ উইকেটে ৮৪, সেই দল ২০ ওভারে ছুঁতে পারল না দেড়শও। তখনও কে জানত, ম্যাচ শেষে তারাই মাঠ ছাড়বে বীরের বেশে! ব্যাটিং ধসের ধাক্কা সামলে বোলিংয়ে দারুণভাবে নিজেদের মেলে ধরলেন বরিশালের বোলাররা। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেল সাকিব আল হাসানের দল।

আবু হোসেন পরাগবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2022, 03:31 PM
Updated : 14 Feb 2022, 04:13 PM

বিপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ারে ফরচুন বরিশালের জয় ১০ রানে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার ১৪৩ রান তাড়ায় ৬২ রানের উদ্বোধনী জুটির পরও কুমিল্লা থমকে যায় ১৩৩ রানে।

বরিশালের বড় শক্তি তাদের বোলিং। প্রাথমিক পর্বে তিনটি ম্যাচে তারা জিতেছিল দেড়শর কম পুঁজি নিয়ে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়েও সেই বোলিং সামর্থ্য আর বৈচিত্রের প্রদর্শনী তারা মেলে ধরল আরেকবার।

ফাইনালে যাওয়ার আরেকটি সুযোগ অবশ্য পাচ্ছে কুমিল্লা। এলিমিনেটরে জয়ী চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলবে তারা।

বরিশালের জয়ের নায়ক এমন একজন, প্রথম ১০ ওভারে যিনি বলই হাতে পাননি! সেই বাঁহাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা আক্রমণে এসে ভাঙেন শুরুর জুটি। পরে শেষ ২ ওভারে যখন কুমিল্লার দরকার ২২, মাত্র ৪ রান দিয়ে তিনি নেন ফাফ দু প্লেসির গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।

মেহেদি রানা নায়ক হলে পার্শ্বনায়ক আরেক বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলাম। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে তার প্রাপ্তি ২টি। ব্যাটিংয়ে মুনিম শাহরিয়ার তার ভয়ডরহীন যাত্রা ধরে রেখেছেন এই ম্যাচেও। তার ৪৪ ছাড়া বলার মতো কিছু করতে পারেননি বরিশালের আর কেউ।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বরিশালের শুরুটা দারুণ হয় মূলত মুনিমের ব্যাটেই। এবারের বিপিএলে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে নজর কাড়া এই ব্যাটসম্যান প্রথম ওভারে নাহিদুল ইসলামকে দুটি ছক্কা হাঁকান হাঁটু গেড়ে। শেষ বলে মারেন চার।

পরের ওভারে তিনি চোখধাঁধানো এক পুল শটে ছক্কায় ওড়ান মুস্তাফিজুর রহমানকেও। একটু পর জেগে ওঠেন ক্রিস গেইল। চতুর্থ ওভারে বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামকে চারটি চার মারেন ক্যারিবিয়ান মহাতারকা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বরিশালের রান ছিল বিনা উইকেটে ৫৭।

গেইলের বিদায়েই ভাঙে জুটি। পেসার শহিদুল ইসলামের বলে মিড অফে ক্যাচ দেন তিনি (১৯ বলে ২২)।

নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গী করে দলকে এগিয়ে নেন মুনিম। মইন আলিকে বেরিয়ে এসে চার মারার পর বিশাল ছক্কায় ওড়ান তিনি। ৯ ওভার শেষে বরিশালের রান ছিল ১ উইকেটে ৮৪

আক্রমণে ফিরে মুনিমকে এলবিডব্লিউ করে থামান বাঁহাতি স্পিনার তানভির। বরিশালের পথ হারানোর শুরুও সেখানেই।

ওই ওভারেই রান আউটে বিদায় নেন সাকিব। পরের ওভারে মইনের বলে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শান্ত। পরে টিকতে পারেননি তৌহিদ হৃদয়ও। অভিজ্ঞ জিয়াউর রহমান দুটি চার ও একটি ছক্কা মেরে স্টাম্পড হয়ে যান সুনিল নারাইনের বলে।

১ উইকেটে ৮৪ থেকে বরিশালের স্কোর তখন ৬ উইকেটে ১১০!

সেখান থেকে ডোয়াইন ব্রাভো (১৭) ও নুরুল হাসান সোহানের (১১) সৌজন্যে কোনোমতে ১৪৩ পর্যন্ত যেতে পারে তারা।

২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে কুমিল্লার সফলতম বোলার শহিদুল ইসলাম। মইনের আলির প্রাপ্তি দুটি। আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকার মুস্তাফিজ এ দিন ২৮ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য।

রান তাড়ায় মাহমুদুল হাসান ও লিটন দাস বেছে নেন সাবধানী ব্যাটিংয়ে ভিত গড়ার পথ। লিটন আউট হতে পারতেন যদিও ১৩ রানে, পয়েন্টে ক্যাচ ফেলেন মুনিম।

সতর্ক ব্যাটিংয়ে ১০ ওভার তারা নিরাপদে কাটিয়ে দিতে পারেন বটে, তবে প্রয়োজনীয় রান রেট বেড়ে যায় অনেকটা।

একাদশ ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসে ৬২ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদি রানা। বাঁহাতি পেসারের বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন মাহমুদুল (৩০ বলে ২০)।

পরের ওভারে আরও দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে হঠাৎ চাপে পড়ে যায় কুমিল্লা। শফিকুলের বলে শর্ট থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ দেন ইমরুল কায়েস। লিটন বোল্ড হন স্লোয়ার বল ব্যাটের কানায় লেগে। ৩৫ বলে ৪টি চারে গড়া তার ৩৮ রানের ইনিংস।

কুমিল্লার রানের থমকে যাওয়া গতি বাড়ে মইনের ব্যাটে। প্রতিপক্ষর সেরা দুই বোলার মুজিব ও সাকিবকে ছক্কা মারেন তিনি। শান্তর বল হাওয়ায় ভাসিয়ে সীমানার বাইরে ফেলেন ফাফ দু প্লেসি।

শেষ ৩০ বলে কুমিল্লার দরকার ছিল ৪৬ রানে, হাতে ৭ উইকেট। পরের ওভারের প্রথম বলে ব্রাভোকে ছক্কা মেরে ম্যাচ প্রায় মুঠোয় আনেন মইন। পরের বলেই তাকে বোল্ড করে আবার বরিশালের আশা জাগিয়ে তোলেন ব্রাভো। 

৪ ওভারে যখন দরকার ৩৫, মেহেদি রানা দেন কেবল ৩ রান। বেঁধে রাখেন দু প্লেসি ও নারাইনের মতো আগ্রাসী ব্যাটসম্যানকে। 

শেষের আগের ওভারে দু প্লেসিকে ফিরিয়ে বরিশালের বড় বাধা সরান মেহেদি রানা। আগের বলে তিনি পেতে পারতেন নারাইনের উইকেটও। লং অফে সহজ ক্যাচ ফেলেন ব্রাভো।

শেষ ওভারে ১৮ রানের প্রয়োজনেও জমে ওঠে লড়াই। মুজিব উর রহমানের প্রথম বলে স্টাম্পড হয়ে যান মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। তৃতীয় বলে ছক্কায় ওড়ান নারাইন।

৩ বলে চাই তখন ১১। তবে আর একটি রানও দেননি মুজিব। আফগান অফ স্পিনার মাঝে তুলে নেন নারাইনের উইকেটও। দারুণ জয়ে ফাইনালে ওঠার উল্লাসে মাতে বরিশাল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৪৩/৮ (মুনিম ৪৪, গেইল ২২, শান্ত ১৩, সাকিব ১, জিয়াউর ১৭, হৃদয় ১, ব্রাভো ১৭, নুরুল ১১, মুজিব ৬*, মেহেদি রানা ০*; নাহিদুল ১-০-১৬-০, মুস্তাফিজ ৪-০-২৮-০, নারাইন ৪-১-১৬-১, তানভির ৪-০-৩৩-১, মইন ৪-০-২৩-২, শহিদুল ৩-০-২৫-৩) 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৩৩/৭ (লিটন ৩৮, মাহমুদুল ২০, ইমরুল ৫, দু প্লেসি ২১, মইন ২২, নারাইন ১৭, মাহিদুল ১, নাহিদুল ১*, শহিদুল ০; মুজিব ৪-০-৩৩-২, শফিকুল ৪-০-১৬-২, সাকিব ৪-০-২৭-০, ব্রাভো ৪-০-২৬-১, মেহেদি রানা ৩-০-১৫-২, শান্ত ১-০-১৩-০)

ফল: ফরচুন বরিশাল ১০ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদি হাসান রানা।