আইপিএল নিলামের প্রথম দিন বাজিমাত করলেন যারা

চার বছর পর ফিরল আইপিএলের মেগা নিলাম, ১০ দলের আসরে প্রথমবার। সঞ্চালকের হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়া, কারও আকাশ ছোঁয়া দাম, কারও রেকর্ড গড়া, আবার বড় কিছু তারকার দল না পাওয়া-বেঙ্গালোরে দুই দিনব্যাপী নিলামের প্রথম দিন ঘটনার অভাব থাকল না।  

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2022, 06:13 PM
Updated : 12 Feb 2022, 07:13 PM

তেমনই উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি ভারতীয় ক্রিকেটার কিষান

ভিত্তিমূল্য ছিল ২ কোটি রুপি। নিলামে চার দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অঙ্কটা বাড়ল তরতর করে। শেষ পর্যন্ত সোয়া ১৫ কোটি রুপিতে ইশান কিষানকে পেয়ে গেল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।

আইপিএলের ইতিহাসে নিলামে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি ভারতীয় ক্রিকেটার এখন তিনিই। এই কিপার-ব্যাটসম্যানের ওপরে আছেন যুবরাজ সিং। ২০১৫ সালে ১৬ কোটি রুপিতে এই অলরাউন্ডারকে কিনেছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলস।   

দেশি ও বিদেশি ক্রিকেটার মিলিয়ে নিলামে চতুর্থ সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড় কিষান। গত আসরের নিলামে ৭৫ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্যের ক্রিস মরিসকে রেকর্ড ১৬ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে দলে নিয়েছিল রাজস্থান রয়্যালস।

গত আসরে কিষান খেলেছিলেন মুম্বাইয়ের হয়েই। যদিও তেমন ভালো করতে পারেননি। ১০ ম্যাচে ২ ফিফটিতে রান ছিল ২৪১। এবার নিলামের আগে তাকে ছেড়ে দিয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। আবার পুরনো ঠিকানাতেই ফিরলেন ২৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।

রেকর্ড গড়ে বেঙ্গালুরুতে হাসারাঙ্গা

এক কোটি রুপি ভিত্তিমূল্যের ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি চলল পাঞ্জাব কিংস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর। সেই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হলো বেঙ্গালুরুর। পৌনে ১১ কোটি রুপিতে শ্রীলঙ্কান লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডারকে কিনে নিল তারা।

তাকে দলে নিতে যখন লড়াই চলছিল দুই দলের। তুমুল উত্তেজনার মাঝে হঠাৎ লুটিয়ে পড়েন নিলামের সঞ্চালক হিউ এডমিডস! স্থগিত হয়ে যায় নিলামের কার্যক্রম। কিছুক্ষণ পর জানানো হয় সুস্থ আছেন তিনি। এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর পুনরায় শুরু হয় নিলাম। 

আইপিএলের নিলামে এখন সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার হাসারাঙ্গা। তিনি পেছনে ফেলেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে। ২০১৫ সালে সাড়ে ৭ কোটি রুপিতে এই অলরাউন্ডারকে কিনেছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলস।

গতবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে পুনরায় আইপিএল শুরু হলে অ্যাডাম জ্যাম্পার বদলি হিসেবে হাসারাঙ্গাকে দলে নিয়েছিল বেঙ্গালুরু। যদিও দুই ম্যাচ খেলে ৬ ওভারে ৬০ রান দিয়ে তিনি ছিলেন উইকেটশূন্য।

তবে আইপিএলের পর আরব আমিরাতেই হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আলো ছড়ান তিনি। শ্রীলঙ্কার প্রথম বোলার হিসেবে এই সংস্করণের বিশ্বকাপে করেন হ্যাটট্রিক। ৮ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে তিনি ছিলেন আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ২০ ওভারের বিশ্বকাপে এক আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ডও এটি।

২০ ম্যাচে ৩৬ উইকেট নিয়ে গত বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাবরাইজ শামসির সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও ছিলেন তিনি।

শ্রেয়াস ও শার্দুলকে নিয়ে কাড়াকাড়ি

শ্রেয়াস আইয়ারের ভিত্তিমূল্য ছিল ২ কোটি রুপি। প্রথম তাকে বিড করে বেঙ্গালুরু। পরে সেখানে যোগ দেয় দিল্লি ক্যাপিটালস ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস। দাম উঠে যায় ৬ কোটি রুপি। কলকাতা নাইট রাইডার্স সেটি ছাড়িয়ে ডাকে ৯ কোটি। প্রথম দিনের নিলামে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেটি দুই অঙ্কে স্পর্শ করে গুজরাট টাইটান্সের ডাকে। শেষ পর্যন্ত সোয়া ১২ কোটি রুপিতে তাকে পেয়ে যায় কলকাতা। আসছে আসরে হয়তো দলটির অধিনায়ক হিসেবেও দেখা যাবে এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে।   

শ্রেয়াসের মতো নিলামে বেশ কয়েকটি দলের তুমুল লড়াই হয়েছে শার্দুল ঠাকুরকে নিয়েও। ২ কোটি রুপি ভিত্তি মূল্যের এই পেসারকে প্রথমে বিড করে পাঞ্জাব কিংস। ৩ কোটি রুপিতে ডেকে সেখানে যোগ দেয় গুজরাট। দিল্লি ক্যাপিটালস বাড়িয়ে দেয় আরও ১ কোটি। হাল ছাড়েনি পাঞ্জাব, ৪ কোটি ৬০ লাখ। এরপর সেখানে যোগ দেয় চেন্নাইও। চলতে থাকে বাকিদের লড়াই। ৫ কোটি, ৬ কোটি, সোয়া ৭ কোটি, সাড়ে ৭ কোটি, ৮ কোটি, ৯ কোটি থেকে বেড়ে যায় ১০ কোটির ঘরে। জমজমাট লড়াই শেষে ১০ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে তাকে পেয়ে যায় দিল্লি।  

গত আসরে শার্দুল খেলেছিলেন শিরোপা জয়ী চেন্নাইয়ের হয়ে। ১৬ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে তিনি ছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।

১৪ কোটিতে চাহারের রেকর্ড

পেসার দিপক চাহারকে নিয়েও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে নিলামে। তাকে দলে নেওয়ার লড়াইয়ে যোগ দেয় দিল্লি, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু ও চেন্নাই। ২ কোটি ভিত্তিমূল্য থেকে দাম বাড়তে থাকে তরতর করে। শেষ পর্যন্ত তাকে ১৪ কোটি রুপিতে কেনে চেন্নাই। 

সব আসর মিলিয়ে নিলামে কেনা চেন্নাইয়ের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার এখন চাহার। ২০১২ সালে তারা ৯ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে দলে টেনেছিল রবীন্দ্র জাদেজাকে।

আইপিএলের ইতিহাসে নিলামে সবচেয়ে দামি ভারতীয় বোলারও তিনিই। গত আসরেও চেন্নাইয়ে খেলেছিলেন চাহার।

শাহরুখ খানের দাম এবার ৯ কোটি

গত আইপিএলের নিলামে ২০ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্যে নাম লিখিয়েছিলেন শাহরুখ খান। পাঞ্জাব কিংস তাকে দলে নেয় ৫ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে। এবার নিজেকে আরও ছাড়িয়ে গেলেন এই বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান।

এবারের ৪০ লাখ ভিত্তিমূল্যের শাহরুখকে দলে নেওয়ার লড়াইয়ে ছিল চেন্নাই, কলকাতা ও পাঞ্জাব। জমজমাট লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত তার আগের দলই তাকে কিনে নেয় ৯ কোটি রুপিতে।   

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ আলোচিত নাম শাহরুখ খান। নজর কেড়েছেন ইনিংসের শেষ সময়ে একের পর এক ছক্কা আর স্নায়ুর চাপ সামলে দারুণ ফিনিশিং দেখিয়ে। গত আইপিএলে অবশ্য তার ঝড় খুব একটা দেখা যায়নি। ১১ ম্যাচে ১৫৩ রান করতে পারেন কেবল ২১.৮৫ গড়ে। স্ট্রাইক রেট অবশ্য খারাপ ছিল না (১৩৪.২১)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজের দলে অপেক্ষমান হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ভারতীয় দলে করোনাভাইরাসের ছোবলে পরে সুযোগ পেয়ে যান মূল স্কোয়াডেও। ম্যাচ খেলার সুযোগ যদিও হয়নি।

২০ লাখের আভেশ খান ১০ কোটিতে

নিলামের শেষ দিকে যেন ঝড় বয়ে যায় আভেশ খান নিকে। ২০ লাখ ভিত্তিমূল্যের এই পেসারকে শুরুতে ডাকে চেন্নাই। পরে সেখানে যোগ দেয় লক্ষ্ণৌ ও মুম্বাই। দুই দলের লড়াইয়ে দাম উঠে যায় ৯ কোটি। সেখানে ঢুকে পড়ে পৌনে ১০ কোটি ডাক দিয়ে বসে হায়দরাবাদ। হাল ছাড়েনি দুই নতুন ফ্রাঞ্চাইজির একটি লক্ষ্ণৌ। শেষ পর্যন্ত ১০ কোটি রুপিতে আভেশকে কিনে নেয় তারা।  

গত আইপিএলে দারুণ পারফরম্যান্সে আলো ছড়িয়েছিলেন আভেশ। দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ১৬ ম্যাচে নিয়েছিলেন ২৪ উইকেট, আসরে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেটিরই প্রতিফলন পড়ল এবারের নিলামে।

শার্দুল, চাহার ও আভেশ ছাড়া প্রথম দিনের নিলামে ১০ কোটি রুপি স্পর্শ করেছেন আরও দুই জন ফাস্ট বোলার। ভারতের প্রসিধ কৃষ্ণা ও নিউ জিল্যান্ডের লকি ফার্গুসনকে দলে নিয়েছে যথাক্রমে রাজস্থান রয়্যালস ও গুজরাট টাইটান্স। দুই জনেরই মূল্য ১০ কোটি রুপি।

মুম্বাইয়ে ‘বেবি এবি’

প্রথম দিনের নিলামে আরেক চমক ডেওয়াল্ড ব্রেভিস। চেন্নাই, পাঞ্জাব ও মুম্বাইয়ের ত্রিমুখী লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ৩ কোটি রুপিতে তরুণ দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানকে দলে টানে মুম্বাই।

ব্যাটিংয়ের ধরনে এবি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে অবিশ্বাস্য মিলের কারণে তাকে ডাকা হয় ‘বেবি এবি’ নামে। তবে সে কারণে নয়, পারফরম‍্যান্সের জন‍্যই যে তাকে মনে রাখতে হবে তার জোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।

কদিন আগে শেষ হওয়া যুব বিশ্বকাপে আসরে রানের রেকর্ড গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার তুমুল প্রতিভাবান এই ১৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ৬ ইনিংসে ৮৪.৩৩ গড়ে ৫০৬ রান করে পেছনে ফেলেন ২০০৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ানের ৮৪.১৬ গড়ে করা ৫০৫ রানের আগের রেকর্ড।

ব‍্যাটিংয়ে রেকর্ড গড়া ব্রেভিস ভালো করেন বোলিংয়েও। লেগ স্পিনে ২৮.৫৭ গড়ে নেন ৭ উইকেট।

অবিক্রিত রইলেন যারা

নিলামের প্রথম দিনে দল পাননি অনেক তারকা ক্রিকেটার। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম সাকিব আল হাসান, স্টিভেন স্মিথ, মুজিব-উর-রহমান, মোহাম্মদ নবি, ডেভিড মিলার, সুরেশ রায়না।

প্রথম দিন নিলামে ওঠার কথা ছিল ১৬১ জন ক্রিকেটারের। তবে ডাক পড়ে কেবল ৯৭ জনের। এর মধ্যে দল পান ৭৪ জন। রোববার একই সময় হবে দ্বিতীয় দিনের নিলাম।