দু প্লেসিকে আড়াল করে খুলনাকে প্লে-অফে নিলেন ফ্লেচার-মেহেদি

প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচের আগে বিপিএলের এবারের আসরে মিরপুরে সেঞ্চুরি ছিল না একটিও। সেই শূন্যতা মুছে এক ম্যাচেই হলো দুটি। প্রথমে চমৎকার সেঞ্চুরিতে দলকে টানলেন ফাফ দু প্লেসি। জবাবে টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকতা খুঁজে ফেরা আন্দ্রে ফ্লেচারের ব্যাট জ্বলে উঠল সময়মতো। তার সেঞ্চুরি ও মেহেদি হাসানের ঝকঝকে ইনিংসে কুমিল্লাকে হারিয়ে প্লে অফে জায়গা করে নিল খুলনা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2022, 03:08 PM
Updated : 12 Feb 2022, 04:07 PM

শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ উইকেটে জিতেছে প্রিমিয়ার ব্যাংক খুলনা টাইগার্স। ১৮৩ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলেছে ৮ বল বাকি থাকতে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের এই হারে প্রাথমিক পর্ব থেকেই বিদাল নিল মিনিস্টার ঢাকা।

আগেই সেরা দুইয়ে থাকা নিশ্চিত করা কুমিল্লা খেলতে নামে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস, কিপার-ব‍্যাটসম‍্যান লিটন দাস ও বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে ছাড়া। ইমরুলের জায়গায় অধিনায়কত্ব পেয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন দু প্লেসি।

কুমিল্লার ইনিংসটিকে এককথায় বলা যায় দু প্লেসিময়। ৫৪ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কায় ১০১ রানের ইনিংসে দলকে প্রায় একাই ১৮২ রানের সংগ্রহ এনে দেন তিনি। খুলনার জয়ের পথে ফ্লেচারের যোগ্য সঙ্গী ছিলেন মেহেদি। দুই জনে আসরের সর্বোচ্চ জুটি গড়ে দলকে নেন শেষ চারে।

ছয়টি করে ছক্কা ও চারে ৬২ বলে ১০১ রানের ইনিংসে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন ফ্লেচার। দুই দলের রান সমতা থাকা অবস্থায় বিদায় নেন মেহেদি। ৪৯ বলে ছয় ছক্কা ও চারটি চারে তিনি করেন ৭৪। এর আগে আঁটসাঁট বোলিংয়ে তিনি ২৯ রানে নেন ১ উইকেট।

টস জিতে ব‍্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি কুমিল্লার। বিপিএল অভিষেকে ভালো করতে পারেননি পারভেজ হোসেন ইমন। মেহেদিকে ছক্কায় উড়িয়ে এক বল পরেই শরীরের খুব কাছের বল কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন তরুণ ওপেনার।

একাদশে ফিরে একটি চার মেরে শুরুটা ভালো করেন মুমিনুল হক। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ দুই রান নেওয়ার চেষ্টায় তিনি বিদায় নেন রান আউট হয়ে।

চার ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া কুমিল্লা এরপর এগিয়ে যায় দু প্লেসির ব্যাটে। তাকে কিছুটা সঙ্গ দেন কেবল মাহমুদুল হাসান জয়।

ক্রিজে গিয়ে দ্বিতীয় বলেই নাবিল সামাদকে চার মেরে রানের খাতা খোলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব‍্যাটসম‍্যান। পরের ওভারে নাভিন উল হককে মারেন আরেকটি। এরপর নাবিলকে স্ট্রেট ড্রাইভে ছক্কা হাঁকিয়ে সব চাপ যেন সরিয়ে দেন দু প্লেসি।

তার সঙ্গে মাহমুদুলের জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন সৌম‍্য সরকার। লং অন থেকে ছুটে এসে সরাসরি থ্রোয়ে ডানহাতি ওপেনারকে রান আউট করে দেন তিনি। ৩০ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন দু প্লেসি।

আগের ম‍্যাচে ঝড় তোলা মইন আলি এবার টিকতে পারেননি খুব একটা। তাকে বোল্ড করে দেওয়া অলরাউন্ডার ফরহাদকে ছক্কা ও চার মারেন দু প্লেসি, ওভার থেকে আসে ১৫ রান। পরে নাভিনকে পরপর দুই বলে মারেন চার ও ছক্কা।

খালেদের বলে পরপর দুই চারের পর সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন দু প্লেসি। টি-টোয়েন্টিতে তার তৃতীয়, বিপিএলে প্রথম। এই ইনিংস খেলার পথে টি-টোয়েন্টিতে সাত হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।

এবারের আসরে আগের দুটি সেঞ্চুরি হয়েছিল চট্টগ্রামে। লেন্ডল সিমন্স করেন প্রথম সেঞ্চুরি, পরেরটি তামিম ইকবাল। এই দুই জনের দলই বাদ পড়েছে প্রাথমিক দল থেকে।

৫২ বলে তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পরপরই ফেরেন দু প্লেসি। নাভিনকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় লং অফে ধরা পড়েন সৌম‍্যর হাতে। পরের দুই বলে দুটি ছক্কা মারেন মাহিদুল। কিন্তু শেষ ওভারে তিনি মেটাতে পারেননি প্রত‍্যাশা। মেহেদির ওভার থেকে আসে কেবল ৩ রান। 

রান তাড়ায় প্রথম ওভারে শান্ত ছিলেন খুলনার দুই ব‍্যাটসম‍্যান। এরপরই ফ্লেচার ও মেহেদি যেন ঝড় বইয়ে দেন বোলারদের ওপর। দ্বিতীয় ওভারে আবু হায়দারকে চার মারার পর ছক্কায় ওড়ান ফ্লেচার। মাঝে ওয়াইড ডেলিভারি থেকে আসে ৫ রান।

নাহিদুল ইসলামকে ক‍্যারিবিয়ান ওপেনার ফ্লেচার ওড়ান দুই ছক্কায়। রনি তালুকদারের অনুপস্থিতিতে ওপেনিংয়ে নামা মেহেদির ব‍্যাট থেকে সেই ওভারেই আসে প্রথম বাউন্ডারি। বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামের ওভারে দুই ব‍্যাটসম‍্যান মারেন একটি করে ছক্কা। বোলাররা যেন ভেবে পাচ্ছিলেন না বল ফেলবেন কোথায়।

২৩ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে এগিয়ে যেতে থাকে ফ্লেচার-মেহেদির বিস্ফোরক জুটি। সুনিল নারাইনকে তার ক‍্যারিবিয়ান সতীর্থ চার মারার পর শহিদুল ইসলামকে ছক্কায় ওড়ান মেহেদি।

পাওয়ার প্লেতে ৬৯ রান তুলে ফেলা খুলনার দুই ওপেনারের ঝড় থামেনি এরপরেও।

সপ্তম ওভারে তানভিরকে দুই চার মারার পর ডাবলস নিয়ে ক‍্যারিয়ারের ৩০তম ফিফটি স্পর্শ করেন ফ্লেচার, ২৫ বলে। পরের ওভারে শহিদুলকে মারেন দুই চার।

তাকে স্রেফ সঙ্গ দিচ্ছিলেন না মেহেদি। নিজের জোনে বল পেলে চড়াও হচ্ছিলেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারও। তানভিরকে লং অন দিয়ে ছক্কায় ওড়ানোর পর তিনি চার মারেন নারাইনের বলে।

দ্বাদশ ওভারে আক্রমণে এসে জুটি ভাঙার আশা জাগান মইন আলি। তবে এলবিডিব্লিউ হওয়ার পর ‘এডিআরএস’ এর সহায়তায় বেঁচে যাওয়া ফ্লেচার পরের বলে মারেন ছক্কা। একটু পর সিঙ্গেল নিয়ে ক‍্যারিয়ারের ষষ্ঠ পঞ্চাশ স্পর্শ করেন মেহেদি, ৩১ বলে।

সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে একটু শান্ত হন ফ্লেচার। সে সময় বোলারদের ওপর চড়াও হন মেহেদি। আবু হায়দারের বলে চমৎকার সব শটে তিন চারের সঙ্গে মারেন এক ছক্কা। 

শহিদুলকে ছক্কা মারার পর দুটি সিঙ্গেল নিয়ে ক‍্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ফ্লেচার, ৫৯ বলে।

শুরুর জুটিই ম‍্যাচ শেষ করে দিচ্ছিল, স্রেফ এক রান প্রয়োজন ছিল। মইনকে ছক্কায় উড়িয়ে ম‍্যাচ শেষ করার আশায় দু প্লেসিকে ক‍্যাচ দিয়ে থামেন মেহেদি। ভাঙে ১৮২ রানের জুটি। বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে এটি দ্বিতীয় সেরা উদ্বোধনী জুটি। ২০১৩ আসরে শাহরিয়ার নাফীস ও লু ভিনসেন্টের অবিচ্ছিন্ন ১৯৭ এখনও এই টুর্নামেন্টে সেরা শুরুর জুটি। 

পরের বলেই প্লে অফের ঠিকানায় পৌঁছে যায় খুলনা। সোমবার এলিমিনেটর ম‍্যাচে তারা মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম চ‍্যালেঞ্জার্সের। সেদিনই ফাইনালে যাওয়ার প্রথম লড়াইয়ে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে খেলবে কুমিল্লা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৮২/৫ (মাহমুদুল ৩১, পারভেজ ৭, মুমিনুল ৭, দু প্লেসি ১০১, মইন ৮, মাহিদুল ২০*, নারাইন ১*; নাভিন ৪-০-৪৮-১, মেহেদি ৪-০-২৯-১, খালেদ ৪-০-৩৪-০, নাবিল ৪-০-৩২-০, ফরহাদ ৩-০-৩০-১, থিসারা ১-০-৯-০)

প্রিমিয়ার ব‍্যাংক খুলনা টাইগার্স: ১৮.৪ ওভারে ১৮৩/১ (ফ্লেচার ১০১*, মেহেদি ৭৪, সৌম‍্য ১*; নাহিদুল ২-০-২১-০, আবু হায়দার ৩-০-৪২-০, তানভির ৪-০-৪৩-০, নারাইন ৪-০-২২-০, শহিদুল ৪-০-৪০-০, মইন ১.৪-০-১৩-১)

ফল: প্রিমিয়ার ব‍্যাংক খুলনা টাইগার্স ৯ উইকেটে জয়ী

ম‍্যান অব দা ম‍্যাচ: আন্দ্রে ফ্লেচার