অসাধারণ ইনিংসে চট্টগ্রামকে প্লে অফে নিলেন জ্যাকস

লেগ স্টাম্পে থাকা ডেলিভারিতে উইল জ্যাকসের দুর্দান্ত ফ্লিক। বল উড়ে গেল সীমানার বাইরে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সও পেরিয়ে গেল প্রাথমিক পর্বের সীমানা। কয়েকদিন আগেও বিদায়ের দুয়ারে থাকা দল দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে জায়গা করে নিল প্লে অফে। মৌসুমজুড়ে চট্টগ্রামের ব্যাটিং নায়ক যিনি, সেই জ্যাকস বাঁচা-মরার ম্যাচে দারুণ রান তাড়ায় দলকে জয় উপহার দিলেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2022, 10:27 AM
Updated : 12 Feb 2022, 01:57 PM

জিতলে প্লে অফ, হারলে বিদায়ের কিনারায়-এই সমীকরণে খেলতে নেমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স সামনে পায় বড় লক্ষ্য। সেই চ্যালেঞ্জে তারা ৪ উইকেটে জিতে যায় জ্যাকসের দুর্দান্ত ইনিংসে। দুঃস্বপ্নের মৌসুমের শেষ ম্যাচেও সিলেট সানরাইজার্সের প্রাপ্তি পরাজয়।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিলেটের ১৮৫ রান চট্টগ্রাম পেরিয়ে যায় ৫ বল বাকি রেখে।

এবারের বিপিএলে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের কীর্তি এটিই।

ইনিংস শুরু করতে নেমে জ্যাকস দলকে জিতিয়ে ফেরেন ৫৭ বলে ৯২ রানের ইনিংস খেলে। বিপিএলের চলতি আসরে তো বটেই, সব আসর মিলিয়েই সেরা ইনিংসগুলির একটি এটি।

১০ ম্যাচে সমান ৫টি করে জয়-হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে চট্টগ্রাম প্লে অফ নিশ্চিত করল তৃতীয় দল হিসেবে। তাদের জয়ে আরেক দফা হতাশ হয়ে মিনিস্টার ঢাকা এখন তাকিয়ে প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে। সেই ম্যাচে জিতে গেলে খুলনা টাইগার্স উঠবে প্লে অফে। খুলনা হারলে কপাল খুলবে ঢাকার।

সিলেটের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় আরও আগেই। ১০ ম্যাচে স্রেফ ১ জয় নিয়ে তারা শেষ করল এবারের আসর।

শেষটা জয়ে রাঙানোর একটা সম্ভাবনা অবশ্য সিলেট জাগিয়েছিল দারুণ ব্যাটিং করে। তাদের ইনিংসে ফিফটি নেই একটিও। কিন্তু ৫ ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তারা পায় বড় স্কোর।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলকে শুরুতে দ্রুত রান এনে দেন কলিন ইনগ্রাম। আগের দুই ম্যাচে ৯০ ও ৮৯ রান করা ব্যাটসম্যান এবার অবশ্য বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ২ ছক্কায় ১৯ বলে ২৪ করে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান বোল্ড হয়ে যান মেহেদী হাসান মিরাজের বল জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে।

তিনে নেমে মিজানুর রহমান আউট হন শূন্যতেই। তবে সিলেটকে ভুগতে হয়নি এনামুল হক ও লেন্ডল সিমন্স ভালো জুটি গড়ায়।

এনামুল যথারীতি খানিকটা সাবধানী শুরুর পর রান বাড়ান বড় কিছু শট খেলে। সিমন্স প্রথম বলেই চার দিয়ে শুরুর পর খেলেন দারুণ কিছু শট। বিশেষ করে শরিফুল ইসলামের বলে পরপর দুটি ছক্কা ছিল চোখধাঁধিয়ে দেওয়া।

দুজনের ব্যাটিংয়ে ১২ ওভারে ১০০ ছুঁয়ে ফেলে সিলেট। জুটি ভাঙতে চট্টগ্রাম অধিনায়ক আফিফ হোসেন আক্রমণে ফেরান মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিকে। এবারের আসরে দারুণ পারফর্ম করা বাঁহাতি পেসার এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন থিতু দুই ব্যাটসম্যানকে।

২৭ বলে ৪২ করা সিমন্স ধরা পড়েন সীমানায়। থেমে যায় ৫৪ রানের জুটি। ২৬ বলে ৩২ রান করা এনামুল বোল্ড হন স্টাম্প ছেড়ে খেলতে গিয়ে।

জোড়া ধাক্কায় টালমাটাল ইনিংস আবার গতি পায় মোসাদ্দেক হোসেনের ব্যাটে। উইকেটে যাওয়ার পরপরই ছক্কা মারেন তিনি মিরাজকে। পরে মিরাজের বলেই টানা দুই বলে মারেন চার-ছক্কা।

সিলেটের নেতৃত্ব হারানো মোসাদ্দেকের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়েন নেতৃত্ব পাওয়া রবি বোপারা। গোটা মৌসুমে নিষ্প্রভ বোপারা জ্বলে ওঠেন শেষ ম্যাচে। দুজনের বিধ্বংসী জুটিতে আসে ৪১ বলে ৮০ রান।

চার ছক্কায় ২১ বলে ৪৪ করে বোপারা ফেরেন শেষ ওভারে। মোসাদ্দেক অপরাজিত থেকে যান ২২ বলে ৩৫ করে। শেষ ৪ ওভারে সিলেট তোলে ৬১ রান।

রান তাড়ায় চট্টগ্রামকে শুরু থেকেই পথে রাখেন জ্যাকস। ওপেনিংয়ে জাকির হাসান ও তিনে নেমে আফিফ হোসেন খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। কিন্তু জ্যাকস দমে না গিয়ে দারুণ সব শটের প্রদর্শনী মেলে ধরেন।

আফিফ আউট হওয়ার পরই একেএস স্বাধীনের এক ওভারে তিন চার ও এক ছক্কা মারেন জ্যাকস। পরের পথচলায়ও তার মধ্যে দেখা যায়নি স্নায়ু চাপের লেশমাত্র। তৃতীয় উইকেটে তার সঙ্গে ৪১ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন চাডউইক ওয়ালটন।

লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনকে টানা দুটি ছক্কা মারার পর ওয়ালটন (২৩ বলে ৩৫) রান আউট হলে ভাঙে এই জুটি। কৃতিত্ব পুরোপুরি বোপারার। কাভারে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে বল থামিয়ে সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভেঙে দেন সিলেট অধিনায়ক।

এরপর বেনি হাওয়েল বেশিক্ষণ না টিকলেও জ্যাকস চালিয়ে যান ঝড়। শেষ সময়ে তার কাজটা সহজ করে দেন শামীম হোসেন। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৭ বলে ২১ রানের ক্যামিও খেলে সমীকরণ একদম নাগালে আনেন তিনি।

এরপর মিরাজ আউট হলেও জ্যাকসকে থামাতে পারেনি সিলেট। তাই থামানো যায়নি চট্টগ্রামকেও। দলকে জিতিয়ে জ্যাকস ফেরেন ব্যাট উঁচিয়ে।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিলেট সানরাইজার্স: ২০ ওভারে ১৮৫/৬ (ইনগ্রাম ২৪, এনামুল ৩২, মিজানুর ০, সিমন্স ৪২, বোপারা ৪৪, মোসাদ্দেক ৩৫*, আলাউদ্দিন ২; শরিফুল ৪-০-৪১-১, নাসুম ৪-০-২৭-০, মিরাজ ৪-০-৩৬-১, মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-৩৭-৩, হাওয়েল ৪-০-৪২-০)

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৯.১ ওভারে ১৮৮/৬ (জ্যাকস ৯২*, জাকির ১৭, আফিফ ৭, ওয়ালটন ৩৫, হাওয়েল ৮, শামীম ২১, মিরাজ ২, আকবর ২*; সোহাগ ৩-০-২১-২, স্বাধীন ২-০-৩১-০, আলাউদ্দিন ৩.১-০-৩২-২, জুবায়ের ৩-০-৩৫-০, বোপারা ৪-০-৩৬-০, সিমন্স ৪-০-৩৩-১)

ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: উইল জ্যাকস