‘পাঁচে পাঁচ’ সাকিব খুশি নিজের ব্যাটিং নিয়ে

‘টানা ৫ ম্যাচে ম্যান অব দা ম্যাচ, আপনার জন্য কি বিস্ময়কর?’, ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীতে প্রশ্নটি করলেন ধারাভাষ্যকার আতহার আলি খান। সাকিব আল হাসান স্রেফ হাসলেন। প্রশ্নের উত্তর তাতে পাওয়া গেল না। সেটা অবশ্য খুব জরুরিও নয়। পারফরম্যান্সেই তো মিশে আছে উত্তর, মুখে না বললেই কী আসে-যায়!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2022, 05:03 PM
Updated : 11 Feb 2022, 05:14 PM

টানা ৫ ম্যাচে ম্যান অব দা ম্যাচ, যে কোনো সংস্করণে, যে কোনো টুর্নামেন্টেই বিস্ময়কর। আর সেটি যদি হয় ২০ ওভারের ক্রিকেটে, বিস্ময় তাহলে ছাড়িয়ে যায় আসলে কল্পনার সীমাও। সাকিব সেটিই করে দেখালেন বাস্তবে।

স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টানা ৫ ম্যাচে সেরার কীর্তি শুধু বিপিএল নয়, বিশ্বক্রিকেটেই প্রথম। টানা চার ম্যাচে সেরা হয়ে আগের রেকর্ড ছিল যৌথভাবে মার্কাস ট্রেসকোথিক, শার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট, শেন ওয়াটসন, ডেভিড ওয়ার্নার ও উগান্ডার ভারতীয় বংশোদ্ভূত অলরাউন্ডার দিনেশ নাকরানির।

গত ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় তার এই সেরার যাত্রা। এরপর চট্টগ্রামে আরেকটি ম্যাচ, সিলেটে আরও দুটি হয়ে ঢাকায় ফিরেও ছেদ পড়েনি সেই ছুটে চলায়। শুক্রবার মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষে আবারও তিনি ম্যান অব দা ম্যাচ।

৪ ওভারে ২১ রানে ১ উইকেট নেওয়ার পর ২৯ বলে ৫১ রানের ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ইনিংস, ম্যাচ সেরার লড়াইয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই ছিল না তার। বিপিএলে গোটা টুর্নামেন্ট মিলিয়েও আগে ৫ ম্যাচে ম্যান অব দা ম্যাচ হতে পারেননি আর কেউ।

সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে এমন বিস্ময় অবশ্য অনেকবারই উপহার দিয়েছেন সাকিব। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক প্রথমের জন্ম তার হাত ধরে। অভাবনীয় অনেক কিছুই তিনি করে দেখিয়েছেন ২২ গজে। বিশ্বক্রিকেটকেও তো কম চমকে দেননি।

তবে টানা এই ৫ ম্যাচের ম্যান অব দা ম্যাচ সাকিবের নিজের মানেও অবাক করার মতো। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট যে তার কথাই শুনছিল না! বল হাতে তিনি বরাবরই ধারাবাহিক। কিন্তু ব্যাটিংয়ে অনেক দিন ধরেই অচেনা। মাঝেমধ্যে সেরা সময়ের কিছু ঝলক দেখা গেলেও ছিল না ধারাবাহিকতা। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। এই সংস্করণে তার ব্যাটিংয়ের কার্যকারিতা নিয়েও টুকটাক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল।

তার নিজেরও সেটা অনুভব করতে না পারার উপায় নেই। এবারের বিপিএল শুরুর আগে তাই ব্যাটিং নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করেন তার শৈশবের কোচ নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে, এই ফরচুন বরিশাল দলেও যিনি ব্যাটিং পরামর্শক। বাড়তি কাজ করেন পাওয়ার হিটিং নিয়েও। তবে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে ফল মিলছিল না। এবার প্রথম চার ম্যাচে তাই ম্যাচ সেরার পুরস্কার তার হাতে ওঠেনি একবারও।

চট্টগ্রামে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ৩ ছক্কায় ২৭ বলে ৪১ রানের ইনিংস দিয়ে তার ব্যাটিংয়ে ছন্দ ফেরার শুরু। পরের ম্যাচে ফিফটি পান টি-টোয়েন্টিতে ৪৫ ম্যাচের খরা কাটিয়ে। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ফিফটি করেন টানা দুই ম্যাচে।

পরের ম্যাচে পঞ্চাশ পর্যন্ত যেতে না পারলেও ৩৮ রানের ইনিংস খেলেন দুইশ স্ট্রাইক রেটে। এরপর শুক্রবারের এই ফিফটি, এবার অপরাজিত। এই ৫ ইনিংসে ছক্কা মেরেছেন ১১টি।

সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো ব্যাপার, তার রিফ্লেক্স, তার ব্যাট স্পিড, টাইমিং আর পেশির জোরের মিশেল, সবই ছিল দারুণ। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে ধার হারিয়ে ফেলার প্রশ্নগুলোও যেন মাঠের বাইরে আছড়ে ফেলেছেন একেকটি শটে।

টানা পঞ্চম ম্যাচ সেরার পুরস্কার হাতে সাকিব তাই তৃপ্তির কথা বললেন ব্যাটিং নিয়েই।

“ব্যাটিং খুব ভালো হচ্ছে গত ৫ ম্যাচে। বোলিং তো সবসময় ছিলই। বোলিংয়ে আসার পর সব ম্যাচেই আমাকে নিশ্চিত করতে হয়েছে যেন প্রতিপক্ষের ওপর চাপটা ধরে রাখতে পারি। যেভাবে চলছে, আমি খুশি। আশা করি, আর দুটি ম্যাচও থাকবে।”