বাংলাদেশের উইকেট-কন্ডিশনে মইনের মতো স্পিনিং অলরাউন্ডারের সাফল্য প্রত্যাশিতই। সেই প্রত্যাশা পূরণের পথেই চলমান তার যাত্রা। বিধ্বংসী ইনিংস আর দারুণ বোলিংয়ে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে এনে দিলেন বড় জয়। প্রিমিয়ার ব্যাংক খুলনা টাইগার্স হারল ৬৫ রানে।
ম্যাচের প্রথম ভাগে লিটন দাসের ঝড়ো শুরুর পর যখন লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টা করছে খুলনা, ৯ ছক্কায় মইনের ৩৫ বলে ৭৫ রানের ইনিংস কুমিল্লাকে নিয়ে যায় বড় স্কোরে। পরে বল হাতে তার দুই উইকেট ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় খুলনাকে।
এই জয়ে শীর্ষ দুইয়ে থেকে প্লে অফ খেলা নিশ্চিত হলো কুমিল্লার। খুলনার প্লে অফে ওঠার পথ হয়ে গেল কঠিন।
টস জিতে বোলিংয়ে নামা খুলনার কাজ শুরুতেই কঠিন করে দেন লিটন। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই বাঁহাতি স্পিনার নাবিল সামাদকে এলোমেলো করে দেন তিনি দুই চার ও এক ছক্কায়। পরের ওভালে সৈয়দ খালেদ আহমেদের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঝড়। মাহমুদুল হাসান জয়ের বাউন্ডারিতে ওভার শুরুর পর লিটন দুটি বাউন্ডারি মারেন স্কুপ করে। এর দ্বিতীয়টিতে অল্পের জন্য ক্যাচ নিতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। ওভারের শেষ বলে লিটনের পুল উড়ে যায় সীমানার বাইরে।
লিটন পরে জীবন পান আরেক দফায়। বাঁহাতি পেসার রুয়েল মিয়ার বলে শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ ছাড়েন খালেদ। জীবন পাওয়ার পরের বলেই পুল করে ছক্কায় বোলারকে আরও পোড়ান লিটন।
নাবিল ততক্ষণে আরেক প্রান্তে মাহমুদুলকে (১৫ বলে ১১) ফিরিয়ে প্রথম উইকেট এনে দিয়েছেন খুলনাকে। লিটনও জীবন পেয়ে তা পারেননি কাজে লাগাতে। থিসারা পেরেরার বল আলসেভাবে গ্লাইড করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ১৭ বলে ৪১, আরও একবার তার সম্ভাবনাময় একটি ইনিংস শেষ পূর্ণতার আগেই।
একটু পর অধিনায়ক ইমরুল কায়েস যখন বিদায় নিলেন ৫ রানে, খুলনার ইনিংস তখন হুট করেই একটু নড়বড়ে। ম্যাচে ফেরার দারুণ সুযোগ খুলনার। কিন্তু মইনের ছক্কা-বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় মুশফিকদের সেই সুযোগ।
প্রথম বিপিএল ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি সপ্তম ছক্কায়। মাইলফলক উদযাপন করেন আরেকটি ছক্কায়! তখনও পর্যন্ত কোনো চারও মারেননি তিনি! প্রথমবার গড়িয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠান ৮টি ছক্কার পর।
নবম ছক্কার পর তার ইনিংস থামে থিসারা পেরেরার ফুল টসে কাভার সীমানায় ধরা পড়ে।
ফাফ দু প্লেসি অবশ্য ইনিংসকে গতি দিতে পারেননি। সৌম্য সরকারের বলে একটি ছক্কার পর আউট হয়ে যান তিনি ৩৬ বলে ৩৮ করে। সুনিল নারাইন বিদায় নেন প্রথম বলেই। মাহিদুল ইসলাম ইনিংস শেষ করেন শেষ বলে ছক্কায়।
খুলনার রান তাড়ার শুরুটায় ছিল পাল্টা জবাব দেওয়ার ইঙ্গিত। নাহিদুল ইসলামের অফ স্পিনে প্রথম ওভারেই দুটি ছক্কা মারেন আন্দ্রে ফ্লেচার। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারেই জোড়া ধাক্কা! মুস্তাফিজুর রহমানের পরপর দুই বলে বিদায় নেন দুই ওপেনার রনি তালুকদার ও ফ্লেচার।
তৃতীয় উইকেটে সৌম্য সরকার ও ইয়াসির আলি চৌধুরি চেষ্টা করেন ধাক্কা সামাল দেওয়া। তাতে ছোট্ট জুটি গড়ে উঠলেও রানের গতি যায় কমে। বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই ইয়াসিরকে (১৯ বলে ১৮) থামিয়ে জুটি ভাঙেন মইন।
এরপর খুলনার ইনিংস কেবল পেছন পানেই ছুটেছে। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম শূন্য রানে থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন আবু হায়দারের বলে। এই বাঁহাতি পেসারের লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে আউট হন সিকান্দার রাজা। লম্বা সময় উইকেটে থেকে সৌম্য ২৫ বলে ২২ রান করে ফেরেন মইনের শিকার হয়ে।
শেষ দিকে দুই ছক্কায় থিসারা পেরেরার ২৬ রানের ইনিংসে ব্যবধান কমে একটু। রান তাড়ায় প্রথম ওভারের পর কখনোই মনে হয়নি, ম্যাচ জিততে পারে খুলনা।
টিকে থাকার লড়াইয়ে শনিবার এই কুমিল্লার বিপক্ষেই আবার খেলবে খুলনা। সেই ম্যাচে জয়ও তাদের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে, অন্য ম্যাচের ফলাফল যদি বিপক্ষে যায়। কুমিল্লার জন্য সেই ম্যাচ হবে কেবল আনুষ্ঠানিকতা। প্রথম কোয়ালিফায়ারে তারা সোমবার লড়বে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৮৮/৬ (লিটন ৪১, মাহমুদুল ১১, দু প্লেসি ৩৮, ইমরুল ৫, মইন ৭৫, নারাইন ০, মাহিদুল ১২*, আবু হায়দার ০*; খালেদ ৪-০-৩৭-১, নাবিল ৪-০-২৪-১, রুয়েল ৩-০-২৫-০, থিসারা ৩-০-২৮-২, মেহেদি ৪-০-৪০-১, সৌম্য ২-০-৩১-১)
প্রিমিয়ার ব্যাংক খুলনা টাইগার্স: ১৯.৩ ওভারে ১২৩ (ফ্লেচার ০, রনি ০, সৌম্য ২২, ইয়াসির ১৮, মুশফিক ০, রাজা ৮, মেহেদি ১১, থিসারা ২৬, রুয়েল ০, খালেদ ৮, নাবিল ২*; নাহিদুল ৪-০-২৮-২ মুস্তাফিজ ২-০-১৬-২, নারাইন ৪-০-১৫-০, মইন ৪-০-২০-২, আবু হায়দার ৪-১-১৯-৩, তানভির ১.৩-০-২১-১)
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৬৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মইন আলি