অস্ট্রেলিয়ায় সিদ্ধান্ত নিতাম আমি, কৃতিত্ব নিত অন্য কেউ: রাহানে

অস্ট্রেলিয়ায় সবশেষ সফরে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে ভারতের টেস্ট সিরিজ জয়ের বড় কারিগর ছিলেন অজিঙ্কা রাহানে। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে প্রথম টেস্টে বিধ্বস্ত হওয়া দলকে যেভাবে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সামনে থেকে, চোট-আঘাতে বিপর্যন্ত দলকে যেভাবে উজ্জীবিত করেছিলেন, তা ছিল অবিশ্বাস্য। তাতে যতটা কৃতিত্ব তার প্রাপ্য, তা পাননি কখনও। ওই সিরিজে ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দাবি, সেই কৃতিত্ব ছিনিয়ে নিয়েছিলেন অন্য কেউ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2022, 02:54 PM
Updated : 10 Feb 2022, 02:54 PM

২০২০-২১ মৌসুমে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি ভারত জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। ধরে রেখেছিল তারা বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি।

ওই সিরিজেই প্রথম টেস্টে ভারত গুটিয়ে গিয়েছিল ৩৬ রানে, তাদের ইতিহাসের যা সর্বনিম্ন ইনিংস। অ্যাডিলেইডের ওই টেস্টে ভরাডুবির পর অধিনায়ক কোহলি চলে যান ছুটিতে। একের পর এক ক্রিকেটার ছিটকে পড়েন চোটে। শেষ টেস্টে দল গড়া হয় অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে। সেই দলই চমক জাগানিয়া পারফরম্যান্সে জিতে নেয় সিরিজ।

ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্টে ৮ উইকেটের জয় দিয়ে। যেখানে প্রথম ইনিংসে দারুণ এক সেঞ্চুরিতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন রাহানে। আর শেষ টেস্ট জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয় এমন এক ভেন্যুতে, যেখানে আগের ৩২ বছরে ৩১ টেস্টে অপরাজিত ছিল অস্ট্রেলিয়া। শক্তি আর অভিজ্ঞতায় অনেক পেছনে থেকেও প্রবল বিক্রমে লড়াই করে ব্রিজবেনের দুর্গ জয় করে রাহানের দল।

এমন সাফল্যের পরও সেভাবে প্রচারের আলোয় আসতে পারেননি রাহানে। বৃহস্পতিবার ‘ব্যাকস্টেজ উইথ বরিয়া’ শোতে এই ব্যাটসম্যান বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় তার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর কৃতিত্ব নিত অন্য কেউ।

“জানি, আমি সেখানে কী করেছি। কাউকে আমার বলার প্রয়োজন নেই। কৃতিত্ব নেওয়া আমার স্বভাব নয়। হ্যাঁ, একটা ব্যাপার ছিল যে, আমি মাঠে কিংবা ড্রেসিংরুমে সিদ্ধান্তগুলো নিতাম, কিন্তু অন্য কেউ এর কৃতিত্ব নিত।”

“আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল যে আমরা সিরিজ জিতেছিলাম। ওটা ছিল ঐতিহাসিক সিরিজ এবং আমার জন্য সত্যিই বিশেষ কিছু।”

রাহানে যদিও কারও নাম উল্লেখ করেননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তখনকার কোচ রবি শাস্ত্রীকে ইঙ্গিত করেছেন তিনি। ওই সিরিজ জয়ের পর দলের পারফরম্যান্সের জন্য ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন শাস্ত্রী। চোটে বিপর্যস্ত ড্রেসিংরুমে প্রাণ ফেরানোর স্থপতি মনে করা হয় তাকে।

রাহানের মতে, মাঠের ভেতরে ও বাইরে কী করেছেন, তা তিনি নিজে জানেন। নিজেকে কখনই বড় করে দেখাতে চাননি তিনি।

“তারপর থেকে মানুষের প্রতিক্রিয়া বা যারা কৃতিত্ব নিয়েছিল কিংবা মিডিয়ায় বলেছিল ‘আমি এটা করেছি’ বা ‘এটা ছিল আমার সিদ্ধান্ত’, এসব তাদের কথা বলার বিষয়। আমার দিক থেকে জানতাম মাঠে আমি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিংবা আমার সহজাত প্রবৃত্তি থেকে কী পরিকল্পনা করেছি।”

“আমরা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমি এসব হেসে উড়িয়ে দিতাম। মাঠে আমি সেটাই করি, নিজেকে নিয়ে বেশি কথা বা নিজেকে কৃতিত্ব কখনও দেই না। কিন্তু আমি সেখানে কী করেছি, সেটা আমি জানি।”

অস্ট্রেলিয়ায় ওই সিরিজ জয়ের পর থেকে লাল বলের ক্রিকেটে সময়টা ভালো কাটছে না রাহানের। গত বছর ১৩ টেস্ট খেলে ২০.৮২ গড়ে করেন ৪৭৯ রান। এই সময়ে ফিফটি করতে পারেন কেবল দুটি, ছিল না ধারাবাহিকতা। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে হারাতে হয় টেস্টের সহ-অধিনায়কত্বও। দেশটিতে ছয় ইনিংসে ২২.৬৭ গড়ে করেন ১৩৬ রান। তার শট নির্বাচন নিয়েও ওঠে প্রশ্ন। হন সমালোচিত।

তবে এসব সমালোচনায় কান দিচ্ছেন না তিনি। মনে করিয়ে দিলেন তার অবদানের কথাও।

“আমি শুধু হাসি (সমালোচনা শুনে)। যারা ক্রিকেট বোঝে, তারা এ ধরনের কথাবার্তা বলে না। তাই এই বিষয় নিয়ে গভীরে যেতে চাই না। সবাই জানে, অস্ট্রেলিয়ায় কী হয়েছিল।”

“এমনকি অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে ও পরে দলে আমার অবদান কতটা ছিল, বিশেষ করে লাল বলের ক্রিকেটে, আমি এটা নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। তবে যারা খেলাটা বোঝে, ভালোবাসে, তারা বিচক্ষণের মতো কথাবার্তা বলে।”

নিজের সামর্থ্যে আস্থা রাখছেন রাহানে। এখনও তার অনেক কিছু দেওয়ার আছে বলে মনে করেন ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।

“হ্যাঁ, আমি নিজের সামর্থ্যে আত্মবিশ্বাসী। আমি ভালো ব্যাটিং করছি এবং নিজের সামর্থ্যে বিশ্বাস আছে আমার।”