সপ্তাহ গড়াতে চলল, তবুও অস্ট্রেলিয়া প্রধান কোচের পদ থেকে ল্যাঙ্গারের সরে যাওয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শেষ হচ্ছে না। ল্যাঙ্গারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। তাদের অনেকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে কাঠগড়ায় তুলছেন আবার কেউ আঙুল তুলছেন ক্রিকেটারদের দিকেও।
এবার বিষয়টি নিয়ে বর্তমান ক্রিকেটারদের পক্ষ থেকে জবাব দিলেন কামিন্স। বুধবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তার একটি বিবৃতি প্রকাশের ঘণ্টা খানেক পর সংবাদ সম্মেলনেও ল্যাঙ্গার ইস্যু নিয়ে কথা বলেন এই পেসার। নিশ্চিত করেন, ড্রেসিং রুমে নতুন কণ্ঠস্বর চেয়েছিলেন তারা।
“আমি মনে করি না, ল্যাঙ্গারের অবাক হওয়ার কিছু আছে। আমি যদি গত দুই বছরের ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আবহ মূল্যায়ন করি, এটা ছিল বেশ একঘেঁয়ে। তবে আমরা সব সময় পূর্ণাঙ্গ রিভিউ পেয়েছি। তাই আমাদের শক্তি ও দুর্বলতার কথা জেনেছি, খোঁচা হজম করেছি এবং সব সময় শেখার চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয়, গত দুই সপ্তাহে এটা অনেক বেশি প্রকাশ্য হয়ে গেছে। তবে আমি মনে করি না, এখানে বড় কোনো চমক আছে।”
“আমি মনে করি, তিনি অনেক পরিবর্তন এনেছেন এবং উন্নতি করেছেন। দারুণ কাজ করেছেন। তিনি খুব বড় কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন এবং এর জন্য অনেক কৃতিত্ব তার প্রাপ্য। এখন প্রশ্ন হলো, গত কয়েক মাসের সাফল্যের পর আমরা কি মনে করি এটা টেকসই? এবং আবারও, এ বিষয়ে সম্ভবত মতের ভিন্নতা আছে। তবে আমরা ভেবেছি, পরিবর্তন আনার এটাই সঠিক সময়।”
কী ধরনের পরিস্থিতির জন্য গত বছর ল্যাঙ্গারের সঙ্গে রিভিউ সেশন হয়েছিল, এর একটা আভাস দিলেন কামিন্স।
“কয়েক পর্যায়ে আমরা সত্যিই আমাদের দলের সংস্কৃতি বদল করতে চেয়েছিলাম। আমরা এটাকে গুরুত্বপূর্ণ ভেবেছিলাম এবং মনে করেছিলাম এটা দলের সেরাটা বের করে আনবে। এসবের মধ্যে যেগুলো দৃঢ়ভাবে সামনে এসেছিল তার একটা হচ্ছে, নিজের একান্ত জায়গাটি নিজেরই থাকা। কাজের জন্য শান্ত, নিরবচ্ছিন্ন ও সুস্থির পরিবেশ থাকা।”
সদ্য বিদায়ী কোচের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে বলে দাবি করলেন কামিন্স।
“গত কিছু দিনে আমরা একে অন্যকে কিছু বার্তাও পাঠিয়েছি, আমাদের মধ্যে সবকিছু ঠিক আছে। আমার অবস্থান থেকে, তার প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা আছে। তিনি যা করেছেন, সেটা আমার খুব পছন্দ। তার কাছে আমি অনেক ঋণী। তিনি ছিলেন অসাধারণ, কেবল দলের জন্যই নয়, ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্যও। তিনি আমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছেন, অনেকবার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের মধ্যে সব ঠিক আছে। আশা করি, শিগগির আমাদের দেখা হবে এবং এ নিয়ে কথা বলব।”
ল্যাঙ্গার ইস্যু নিয়ে ইদানিং অনেক সমালোচনা শুনতে হচ্ছে কামিন্সের। পূর্বে কখনোই তার এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। আবার নেতৃত্বের শুরুতেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে এক দিক থেকে ভালোই হয়েছে বলে মনে হচ্ছে এই পেসারের।
“এই দায়িত্বটা নেওয়ার সময়ই জানতাম, অনেক কাটাছেড়া হবে। তাই শেষ সপ্তাহটা বলব ভালোই ছিল, এখন আমি জানি যে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারব। সহজভাবেই নিয়েছি…অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো, আমরা সবাই সেটা করতে চাই।”
আজকের আগে কেন এই বিষয়ে কথা বলেননি, সেটারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
“ভালোর জন্যই আমি আজকের আগে এ বিষয়ে জনসম্মুখে কথা বলিনি। এমন একটি সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কথা বলা, যা তখনও নেওয়া হয়নি এবং যে সিদ্ধান্তটা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নেওয়ার কথা, (আমি কথা বললে) সেটা বোর্ড ও দলকে জটিল একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিত। আমি কখনও তা করব না। আমি ড্রেসিং রুমের অভ্যন্তরীন বিষয় ও যথাযথ প্রক্রিয়াকে শ্রদ্ধা করি।”
এখন সিদ্ধান্তটা চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় এবং এ নিয়ে ল্যাঙ্গার ও অন্য সাবেক ক্রিকেটাররা নানারকম কথা বলায় কামিন্স মনে করছেন, কিছু বিষয় তার পরিষ্কার করা উচিত।
“জাস্টিন স্বীকার করেছেন যে, তার কোচিংয়ের ধরন কখনও বাড়াবাড়ি পর্যায়ে ছিল। এটা আসলেই তেমন ছিল। ওইসব বাড়াবাড়ির জন্য তিনি খেলোয়াড় ও স্টাফদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমি মনে করি, এই দুঃখ প্রকাশ অপ্রয়োজনীয়। কারণ, জাস্টিন ল্যাঙ্গারের ওই ধরনে ক্রিকেটারদের কোনো সমস্যা ছিল না। ভালোর জন্যই তিনি তা করেছিলেন-অস্ট্রেলিয়া ও ব্যাগি গ্রিনের প্রতি তার তীব্র ভালোবাসা- যা তিন দশক ধরে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছে।”
বল টেম্পারিং কাণ্ডে ২০১৮ সালের টালমাটাল অস্ট্রেলিয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ল্যাঙ্গার। শুরুতে কঠিন সময় কাটলেও শেষে সাফল্য পেতে শুরু করেন তিনি। তবে দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হার ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সংস্করণে সিরিজ হারে পরিবেশ হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। বছর জুড়েই খেলোয়াড়দের অসন্তোষের খবর আসতে থাকে গণমাধ্যমে।
টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপে জয়ের পর অ্যাশেজে ইংল্যান্ডকে ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেওয়ার পর ল্যাঙ্গার চেয়েছিলেন, লম্বা মেয়াদে দায়িত্ব। তবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তার চুক্তির মেয়াদ কেবল ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। সেটি প্রত্যাখ্যান করে পদত্যাগ করেন ল্যাঙ্গার।
দলে নতুন কোচের প্রয়োজনীয়তার কথা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে কেন বলেছিলেন, সেটাও বিবৃতিতে জানান কামিন্স।
“কীভাবে সঠিক উপায়ে-সঠিক অস্ট্রেলিয়ান উপায়ে ক্রিকেট খেলতে হয় এটা আমাদের খুব ভালোভাবে শেখানো হয়েছে। সবসময় উঁচু নৈতিক মান বজায় রাখার গুরুত্ব আমরা বুঝি। খেলোয়াড়দের কোনো অনুপ্রেরণার দরকার নেই। আমার দলের চেয়ে বাড়তি অনুপ্রাণিত খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমি কখনও খেলিনি। এই দৃঢ় ভিতে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার জন্য আরও ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠতে আমাদের নতুন ঘরানার কোচিং ও স্কিল সেট প্রয়োজন।”
সাবেক ক্রিকেটারদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে পাল্টা কোনো সমালোচনায় যাননি কামিন্স। স্রেফ মনে করিয়ে দিয়েছেন, তারা যেটা করছেন, তিনিও ঠিক সেটাই করছেন।
“দল যখন জয় পাচ্ছে তখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া পালাবদলের সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিনশেষে আমরা ক্রিকেটের রক্ষক। একটা জায়গায় আমরা সবাই এক কাতারে; আমাদের প্রথম দায়িত্ব অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের প্রতি, যেটা আমাদের সবার চেয়ে বড়। আমি এই দায়িত্ব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ক্রিকেট নিয়েই আমি বেঁচে আছি। আমাদের একই সঙ্গে সতীর্থদের প্রতিও দায়িত্ব আছে। অনেক সাবেক খেলোয়াড় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং আমাকে উপদেশ দিয়েছে, যা আমি স্বাগত জানাই।”
“কেউ কেউ গণমাধ্যমে কথা বলেছেন-সেগুলোকেও স্বাগত জানাই। খেলাটির প্রতি ভালোবাসা ও তাদের সতীর্থের সমর্থনেই তারা বলেছেন। সাবেক সব খেলোয়াড়কে আমি এটা বলতে চাই; আপনারা যেমন সবসময় আপনাদের সতীর্থের পাশে থাকেন, আমিও আমার সতীর্থদের পাশে আছি।”