দারুণ গতিতে ছুটতে থাকা ফরচুন বরিশাল বিপিএলের সিলেট পর্ব শেষ করল জয় দিয়ে। সিলেট সানরাইজার্সকে হারাল তারা ১২ রানে।
সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আবারও জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। ৪ ছক্কায় ১৯ বলে ৩৮ রানের ইনিংসের পর রান জোয়ারের ম্যাচে আঁটসাঁট বোলিংয়ে ২ উইকেট, টানা চার ম্যাচে বরিশাল অধিনায়ক আদায় করে নিলেন ম্যান অব দা ম্যাচের স্বীকৃতি।
তবে সাকিব নামের ধ্রুবতারার পাশে এ দিন উজ্জ্বল আরও কয়েকটি তারাও দেখা যায় বরিশালের আকাশে। বিধ্বংসী ফিফটিতে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন মুনিম শাহরিয়ার। নিজের সেরা সময় পেছনে ফেলে আসা ক্রিস গেইল একপ্রান্ত আগলে রেখে পুরো ২০ ওভার ব্যাটিংয়ে করেন ফিফটি। শেষ দিকে রীতিমত তাণ্ডব চালান ডোয়াইন ব্রাভো। পরে বল হাতেও তার প্রাপ্তি দুটি উইকেট। এক ওভার বোলিংয়েই জোড়া শিকার ধরে শান্তও রাখেন বড় অবদান।
বরিশালের ১৯৯ রান তাড়ায় সিলেটকে অভাবনীয় এক জয়ের আশা দেখান ইনগ্রাম। তবে তার দুঃসাহসী অভিযান থামে ৪৯ বলে ৯০ রান করে। তবে যোগ্য সঙ্গী পাননি তেমন কাউকে। জয়ও তাই ধরা দেয়নি।
টুর্নামেন্টে ধুঁকতে থাকা সিলেট এই পরাজয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ছিটকে গেল প্লে অফের লড়াই থেকে।
সিলেট ম্যাচের শুরুটাই করে সুযোগ হাতছাড়া করে। সোহাগ গাজীর করা ম্যাচের প্রথম বলেই স্লিপে মুনিমের ক্যাচ নিতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন। উল্টো আসে চারটি রান।
পাওয়ার প্লেতে বরিশাল তোলে ৬৭ রান। তাতে মুনিমের অবদান ২৫ বলে ৪৭, গেইলের ১১ বলে ১৪।
আগের ম্যাচে পঞ্চাশের একটু আগে আটকে যাওয়া মুনিম এবার প্রথম বিপিএল ফিফটির দেখা পান ২৬ বল খেলেই। ইনিংসটি অবশ্য বড় করতে পারেননি। বড় শটের তৃষ্ণাতেই থেমে যান সোহাগের বলে সীমানায় ধরা পড়ে।
৫১ রান করে মুনিম যখন ফিরছেন, গেইলের রান তখন স্রেফ ১৫। ইনিংসের বাকি পথজুড়েও তিনি পার্শ্বভূমিকাই পালন করে যান।
নুরুল হাসান সোহানকে তিনে নামানোর পরীক্ষা সফল না হলেও বরিশালের ইনিংসে গতি হারাতে দেননি সাকিব। উইকেটে গিয়েই বেদম মার শুরু করেন বরিশাল অধিনায়ক। সোহাগকে টানা দুটি ছক্কায় ওড়ানোর পর মোসাদ্দেক হোসেন ও আলাউদ্দিন বাবুর ওভারেও ছক্কা হাঁকান তিনি।
আগের দুই ম্যাচে ফিফটি করা ব্যাটসম্যান এবার অবশ্য পঞ্চাশে যেতে পারেননি। রানের তাড়নায়ই তার ইনিংস শেষ হয় সীমানায় ক্যাচ দিয়ে।
শেষ দিকে ঝড়ের মঞ্চ তখন প্রস্তুত। তৌহিদ হৃদয় না পারলেও সেই মঞ্চে সিলেটের বোলারদের নিয়ে প্রলয় নৃত্যে মেতে ওঠেন ব্রাভো। বল ফেলার জায়গাই পাচ্ছিলেন না বোলাররা।
গেইল তখনও পর্যন্ত অদ্ভুত রকমের ধীরস্থির। পঞ্চাশে পা রাখেন তিনি ১৯তম ওভারে, ৪৩ বল খেলে! এবারের আসরে তার প্রথম ফিফটি এটিই। ২০ ওভারের ক্রিকেটে অর্ধশত রানের দেখা পেলেন ২৮ ইনিংস পর!
তিনি অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন ৪৫ বলে ৫২ রানে। তবে ব্রাভোর সৌজন্যে শেষ দিকে ঠিকই রান পায় বরিশাল। শেষ ১০ ওভারে তারা তোলে ১১৪ রান। শেষ ২ ওভারে আসে ৩৪।
৪ ছক্কায় ১৩ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন ব্রাভো।
আগের ম্যাচগুলোয় দেড়শ আশেপাশে রানকেই জয়ের জন্য যথেষ্ট বানিয়ে ফেলেছে বরিশালের দুর্দন্ত বোলিং আক্রমণ। তবে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে আর শিশির ভেজা বলে এ দিন তাদের কাজটা ছিল কঠিন। যার বলে রান করাই দায়, সেই মুজিব উর রহমান ঠিকমতো বল গ্রিপ করতেই পারছিলেন না। ইনগ্রাম সেটির ফায়দা নেন পুরোপুরি।
শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ইনগ্রাম জানান দেন, ছেড়ে কথা বলবেন না তিনি। তবে বড় রান তাড়ায় তো একার চেষ্টায় জেতা প্রায় অসম্ভব। সতীর্থদের কাছ থেকে সেই যোগ্য সহায়তা পাননি দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান।
ওপেনিংয়ে দ্রুত ফেরেন এনামুল হক। তিনে নেমে মোহাম্মদ মিঠুন জুটি গড়লেও পারেননি বড় ইনিংস খেলতে। রবি বোপারা আছেন ব্যর্থতার চক্রেই।
১৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৯ বলে ৯০ করে ইনগ্রাম যখন ফেরেন, সিলেটের সম্ভাবনাও তখন প্রায় শেষ। শান্ত পরের বলেই ফিরিয়ে দেন মিজানুর রহমানকে।
এরপর মোসাদ্দেক হোসেন (২১ বলে ৩৮) ও আলাউদ্দিন বাবু (১২ বলে ২২*) চেষ্টা করেন সাধ্যমতো। তাতে ব্যবধান কমাতে পারলেও জয়ের সম্ভাবনা সেভাবে জাগাতে পারেননি।
প্রথম চার ম্যাচের স্রেফ একটিতে জয়ী বরিশাল এখন টানা পাঁচ জয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে শীর্ষে। ম্যাচ জয়ের পর সাকিবের চওড়া হাসিতেই সেই তৃপ্তির প্রতিফলন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৯৯/৪ (মুনিম ৫১, গেইল ৫২, সোহান ২, সাকিব ৩৮, হৃদয় ১০, ব্রাভো ৩৪*; সোহাগ ৪-০-৪৫-১, শিরাজ ৪-০-৫৬-০, স্বাধীন ৪-০-৩৭-১, আলাউদ্দিন ৪-০-২৭-১, নাজমুল অপু ২-০-১৪-১, মোসাদ্দেক ২-০-১৫-১)
সিলেট সানরাইজার্স: ২০ ওভারে ১৮৭/৬ (ইনগ্রাম ৯০, এনামুল ৭, মিঠুন ১৯, বোপারা ৯, মোসাদ্দেক ৩৪, মিজানুর ০, আলাউদ্দিন ২২*, স্বাধীন ১*; মুজিব ৪-০-৪০-০, সাকিব ৪-০-২৩-২, ব্রাভো ৪-০-৪২-২, শফিকুল ৩-০-৩৩-০, মেহেদি রানা ১-০-২১-০, জিয়াউর ৩-০-২৬-০, শান্ত ১-০-২-২)
ফল: ফরচুন বরিশাল ১২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান