ম্যাচের আগে আরেক দফায় অধিনায়ক পরিবর্তন করে ভাগ্যের বদল কিছুটা দেখল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এবারের বিপিএলের সম্ভবত সবচেয়ে রোমাঞ্চ জাগানিয়া ম্যাচে মিনিস্টার ঢাকাকে ৩ রানে হারিয়ে তারা আপাতত বাঁচিয়ে রাখল প্লে-অফের আশা।
জয়ের দুয়ারে থাকা ঢাকা শেষ দুই ওভারে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি তরুণ দুই বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ও মৃত্যুঞ্জয়ের দুর্দান্ত বোলিংয়ে। পুরো সময় ক্রিজে থেকে ৫৬ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেও তামিম মাঠ ছাড়লেন শেষ ওভারে পর্যাপ্ত স্ট্রাইক না পাওয়ার হতাশায়।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের ১৪৮ রান তাড়ায় বেশির ভাগ সময় সম্ভাবনায় এগিয়ে থেকেও ঢাকা হেরে যায় শেষ সময়ে নিজেদের আত্মঘাতী ব্যাটিং আর প্রতিপক্ষের দারুণ বোলিংয়ে।
এবারের বিপিএলের সেরা ইনিংসগুলোর একটি খেলে তামিম দলকে রাখেন জয়ের পথে। সঙ্গে শুভাগত হোমের দারুণ ক্যামিওতে জয় নাগালে পেয়ে যায় ঢাকা। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে শরিফুলকে যখন বিশাল ছক্কায় ওড়ালেন শুভাগত, জয়ের জন্য ঢাকার প্রয়োজন তখন ১১ বলে ১৪।
উইকেট বাকি তখনও ৬টি। তামিম আর শুভাগত খেলছেন দারুণ। এই ম্যাচে তখন ঢাকার জয় ছাড়া আর কিছু ছিল না সম্ভাব্য ফল।
কিন্তু ক্রিকেট তার অনিশ্চয়তার চরিত্র নিয়ে হাজির হলো আরও একবার। ছক্কার পরের বলেই শরিফুলের স্লোয়ার হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড শুভাগত (১১ বলে ২২)।
নতুন ব্যাটসম্যান কাইস আহমেদ প্রথম বলে সিঙ্গেল নিতে পারলেও তামিম টানা দুই বলে পারেননি রান নিতে। শেষ বলে অবশ্য একটি বাউন্ডারি আদায় করে নেন তামিম।
এমনিতে টপ অর্ডার হলেও নাঈম ক্রিজে যান আট নম্বরে। ঢাকার মুঠো থেকে ম্যাচ ফসকে যেতে থাকে তখনই। তামিমকে স্ট্রাইক দেওয়ার বদলে নাঈমও স্লগ করতে গিয়ে রান নিতে ব্যর্থ টানা দুই বলে।
মৃত্যঞ্জয় এরপর করেন এক ওয়াইড। তবে বাউন্ডারির সুযোগ দেননি। পরের দুই বলে আসে স্রেফ দুটি সিঙ্গেল।
ম্যাচের শেষ বলে যখন প্রয়োজন ৬ রান, তখন বুক সমান উচ্চতার নো বল পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি নাঈম। পারেননি শেষ বলে ‘ফ্রি হিট’ পেয়ে বলকে বাউন্ডারিতে পাঠাতে। নিতে পারেন স্রেফ ১ রান।
স্নায়ুর চাপ সামলে ও দুর্দান্ত স্কিলের ছাপ রেখে দলকে জিতিয়ে দেন গোটা আসরেই দারুণ বোলিং করতে থাকা মৃত্যুঞ্জয়।
ম্যাচ শেষের মতো চট্টগ্রাম শুরুতে চমক দেখায় নতুন অধিনায়ক মাঠে নামিয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজকে ৪ ম্যাচ পর নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেই নাঈম ইসলাম দলেই জায়গা হারান ৪ ম্যাচ পর। নেতৃত্ব পান আফিফ হোসেন।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রাম শুরুতেই হারায় আসরে প্রথম খেলতে নামা জাকির হাসানকে। বিপিএল অভিষেকে প্রথম ওভারে উইকেট পান আফগান বাঁহাতি পেসার ফজলহক ফারুকি।
আরেক ওপেনার উইল জ্যাকস ও অধিনায়ক আফিফ এরপর ৪০ রানের জুটি গড়েন। তবে দুজনের কেউই পারেননি দ্রুত রান তুলতে। আঁটসাঁট বোলিংয়ে তাদের আটকে রাখেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, আরাফাত সানিরা।
২৪ বলে ২৬ করে ফেরেন জ্যাকস, সমান বলে ২৭ করেন আফিফ। মিরাজ বিদায় নেন স্রেফ ২ রানে। দশম ওভারে চট্টগ্রাম ৬০ রানে হারায় ৪ উইকেট।
সেখান থেকে দলকে টেনে নেন শামীম হোসেন। আগের ম্যাচগুলোয় ব্যর্থ বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান এ দিন শুরুতে সময় নেন অনেকটা। শুরুতে জুটি গড়েন আকবর আলির সঙ্গে। আকবরের (১০ বলে ৯) বিদায়ের পর বেনি হাওয়েলের সঙ্গে শামীমের ৫৮ রানের জুটি চট্টগ্রামকে নিয়ে যায় দেড়শর কাছে।
প্রথম বিপিএল ফিফটি করে শামীম শেষ ওভারে আউট হন ৩৭ বলে ৫২ করে। হাওয়েল অপরাজিত থাকেন ১৯ বলে ২৪ করে। শেষ ৪ ওভারে চট্টগ্রাম তোলে ৫১ রান!
সেই সময়টায় এক প্রান্ত আগলে রাখেন তামিম। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে চষ্টা করেন জুটি গড়ার।
বড় একটা বিপদেও অবশ্য পড়েছিলেন তামিম। একাদশ ওভারে মিরাজকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে করতে পারেনি ব্যাটে-বলে। কিন্তু স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন আকবর।
তখনও পর্যন্ত মিইয়ে থাকা তামিম জীবন পেয়ে যেন জ্বলে ওঠেন। দারুণ দুটি ইনসাইড আউট শটে চার মারেন ওই ওভারেই। পরে জ্যাকস ও হাওয়েলের বলে ছক্কা, প্রয়োজনের সময় বাউন্ডারিতে বাড়ান রান। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ২৯ বল ২৪ করে বিদায় নিলে তামিমের ব্যাটে দল থাকে পথেই।
শুভাগত হোম উইকেটে যাওয়ার পর রান-বলের সমীকরণও সহজ হয়ে আসে অনেকটা। কিন্তু এরপর শেষ সময়ের সেই নাটক। শেষ ওভারে তামিমের অসহায় তাকিয়ে থাকা। শেষের নায়ক মৃত্যুঞ্জয়কে ঘিরে চট্টগ্রামের উল্লাস।
এই ম্যাচ জিতলে প্লে অফ নিশ্চিত হয়ে যেত ঢাকার। এখন তারা পড়ে গেল দোলাচলে। আপাতত টিকে রইল চট্টগ্রামের আশা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৪৮/৭ (জাকির ১, জ্যাকস ২৬, আফিফ ২৭, মিরাজ ২, শামীম ৫২, আকবর ৯, হাওয়েল ২৪*, মৃত্যুঞ্জয় ০*; মাশরাফি ৪-০-২৪-১, ফারুকি ৪-০-৩২-১, সানি ৩-০-১৬-১, ইবাদত ৪-০-৩৪-১, কাইস ৪-০-৩৩-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৫-১)
মিনিস্টার ঢাকা: ২০ ওভারে ১৪৫/৬ (তামিম ৭৩*, শাহজাদ ৭, ইমরান ৮, মাশরাফি ২, মাহমুদউল্লাহ ২৪, শুভাগত ২২, কাইস ১, নাঈম ২*; শরিফুল ৪-০-২৮-২, নাসুম ৪-০-১৫-১, মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-২১-২, মিরাজ ৩-০-২৯-১, হাওয়েল ৪-০-৪১-০, জ্যাকস ১-০-৯-০)
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শামীম হোসেন