৩৭ বলে ৫০ রান আর ওভারপ্রতি কেবল ৫ রান দিয়ে প্রতিপক্ষের দুই ওপেনারের উইকেট। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ফরচুন বরিশালের জয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ সাকিবই। আরও একবার!
এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে তার হাতে উঠল ম্যাচ সেরার পুরস্কার। তিনটিই দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে।
বিস্ময়ের কিছু অবশ্য নেই এতে। বরং স্বাভাবিকতারই প্রতিফলন। সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পারফরম্যান্সেই। বিপিএলের আকাশেও তিনি ধ্রুবতারা। তিনবার জিতেছেন টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফি, একাধিকবার পাননি আর কেউ। রেকর্ড ১২ বার ম্যান অব দা ম্যাচের কীর্তিও তার।
টুর্নামেন্টের ৮ আসর মিলিয়ে একশ উইকেট শিকারী একমাত্র বোলার তিনি। রান সংগ্রহের তালিকায় আছেন সাতে। ৮৩ ম্যাচে ১১৮ উইকেট আর প্রায় ১৩০ স্ট্রাইক রেটে ১ হাজার ৬৭০ রান, আলাদা করে মূল্যায়ন করলেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। সাকিব সেসব করেছেন একাই। বিপিএলও তাই বলা যায় তারই সাম্রাজ্য।
এবার অবশ্য রাজকার্যের শুরুতে কিছুটা অচেনা মনে হয়েছে তাকে। মূলত ব্যাটিংয়েই তিনি জ্বলছিলেন মিটমিট করে। অবশ্য ব্যাট হাতে তিনি বিবর্ণ বেশ কিছুদিন ধরেই। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে ঘাটতিগুলো ফুটে উঠছিল প্রকট হয়ে। এই সংস্করণে দাবি মেটানোর মতো ব্যাটিং সামর্থ্য তার এখন আছে কিনা, এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছিল টুকটাক।
এবারের আসর শুরুর আগে তিনি ব্যাটিং নিয়ে, সুনির্দিষ্ট করে বললে পাওয়ার হিটিং নিয়ে কাজ করেছিলেন অনেক। বিশেষায়িত কিছু অনুশীলনও করেন। তবে মাঠের পারফরম্যান্সে তা ফুটে উঠছিল না।
প্রথম ম্যাচে ১৩ রান করতে বল খেলেন ১৬টি। দ্বিতীয় ম্যাচে কিছুটা উন্নতি, তবে আউট হন ১৯ বলে ২৩ রান করে। পরের দুই ম্যাচে অবস্থা আরও করুণ। ৪ বলে ১ রানে বিদায় নেন তৃতীয় ম্যাচ। এরপর প্রিয় তিন নম্বর পজিশনের সঙ্গে আপোস করে পরের ম্যাচে নামেন সাত নম্বরে! রানে ফেরা হয়নি সেদিনও। সেই ম্যাচে প্রাপ্তি ৬ বলে ৯।
সবশেষ তিন ম্যাচে দেখা গেছে সেই সাকিবকেই। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে চট্টগ্রামে খেলেন ২৭ বলে ৪১ রানের ইনিংস। ৩ ছক্কার ইনিংসে পুরনো সাকিবের ঝলক দেখা যায় কিছুটা। পরে বল হাতে ২ উইকেট নেন ৪ ওভারে স্রেফ ১০ রান দিয়ে।
এই পারফরম্যান্সকে বয়ে নিয়ে যান তিনি পরের ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে। এবার ৪৫ ইনিংসের দীর্ঘ খরা ঘুচিয়ে দেখা পান টি-টোয়েন্টি ফিফটির। সেটিও স্রেফ ৩১ বলে।
টি-টোয়েন্টিতে ফিফটিই শেষ কথা নয়। অনেক সময় ছোট অনেক কার্যকর ইনিংসও দলের জন্য হয় উপযোগী। তবে তার মানের একজন ক্রিকেটার এত লম্বা সময় ধরে ফিফটি না করাও বিব্রতকর। সেই অধ্যায় পেছনে ফেলেন যেন নিজের সেরা সময়কে ফিরিয়ে এনে। সেদিন টানা তিনটি ছক্কা মারেন টুর্নামেন্টের সেরা বোলারদের একজন নাসুম আহমেদকে। এছাড়াও তার রিফ্লেক্স, বল বাছাই, ব্যাটকে চাবুকের মতো চালিয়ে দেওয়া, সবকিছুতেই ফুটে ওঠে ব্যাটসম্যান সাকিবের ফেরার বার্তা।
বোলিং তো যথারীতি তার ‘বাঁ হাতের খেল।’ ৩ উইকেট নেন ২৩ রান দিয়ে।
ফিরে পাওয়া ছন্দ সাকিব হারাতে দেননি চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারদের মতোই। আরও একটি ফিফটি, এবার আরও পরিশীলিত ব্যাটিংয়ে সময়ের দাবি মিটিয়ে।
তারপরও দল খুব বড় স্কোর গড়তে পারেনি শেষ দিকে দ্রুত রান তুলতে না পারায়। বল হাতেও তাই সাকিবের করার ছিল অনেক কিছু। এখানেও তিনি হতাশ করেননি দলকে। নতুন বল হাতে দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও লিটন দাসকে ফিরিয়ে শুরুতে চাপে ফেলে দেন কুমিল্লাকে। সেই ফাঁস আর পরে আলগা করতে পারেনি কুমিল্লা।
শুধু উইকেট বা ভালো বোলিং ফিগারই শেষ নয়। সেরা ফর্মে থাকলে যেমন নিয়ন্ত্রিত ও বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং তিনি উপহার দেন, স্কিল আর চাতুর্য দিয়ে যেভাবে শিকার ধরেন, সেসবও দেখা যাচ্ছে নিয়মিতই।
নেতৃত্ব নিয়ে আঙুল তোলার অবকাশ তো রেখেছেন সামান্যই। মাঠের ভেতরে-বাইরে নানা সিদ্ধান্ত, কৌশল, মাঠে পরিস্থিতির ডাকে সাড়া দেওয়া কিংবা পরিস্থিতি তৈরি করা, সব কিছুতেই আছে অধিনায়ক সাকিবের ছাপ।
রানে ফেরা, বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা, অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, দারুণ নেতৃত্ব, দলের জয়, সবই আপাতত পাচ্ছেন সাকিব। ঘাটতি এখন স্রেফ রানগুলোকে আরও বড় ইনিংসে রূপ দেওয়া। পরপর দুই ম্যাচে ৫০ ছুঁয়েই থমকে যাওয়া তাকে কাঁটা হয়ে বিদ্ধ করার কথা।
তার ব্যাটিংয়ের ধরন আর শরীরী ভাষা বলছে, বড় ইনিংসও এই এলো বলে!