গেইল যখন বরিশালের বোঝা

সিলেটে আসার পর ফরচুন বরিশালের প্রথম অনুশীলন সেশন হলো রোববার সকালে। সেখানে দেখা গেল না ক্রিস গেইলকে। অনুশীলনে তাকে ঢাকা-চট্টগ্রামেও খুব একটা দেখা যায়নি। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে তাদের মতো তারকাদের অনুশীলনে খুব একটা আগ্রহ অনেক সময়ই থাকে না। তাতে প্রশ্নও খুব একটা ওঠে না। তবে এবার প্রশ্নটা উঠল। ব্যাটে যখন রান নেই, পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুই যে তখন চোখে লাগে আরও বেশি!

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2022, 10:47 AM
Updated : 7 Feb 2022, 02:57 PM

শুধু অনুশীলনই নয়, একাদশে জায়গা প্রাপ্য কিনা গেইলের, দলের বোঝা হয়ে উঠছেন কিনা, এই প্রশ্নও উঠছে। বরিশালের ব্যাটিং পরামর্শক নাজমুল আবেদীন ফাহিম এসব প্রসঙ্গে একমতও হচ্ছেন। অথচ একসময় এসব ছিল কল্পনার সীমারও বাইরে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ‘ব্র্যাডম্যান’ বলা যায় গেইলকে। অবিশ্বাস্য সব সংখ্যা, রেকর্ড, পরিসংখ্যানের জন্ম তার ব্যাটে। বিপিএলেও তার রেকর্ড চোখধাঁধানো। রেকর্ড-পরিসংখ্যানও আসলে অনেক সময় ফুটিয়ে তুলতে পারত না গেইলকে। দুনিয়াজুড়ে বোলারদের আতঙ্কের প্রতিশব্দ ছিলেন তিনি। সেই গেইল এখন যেন স্রেফ অতীতের কঙ্কাল!

গত কয়েক বছর ধরেই তার ব্যাটে ভাটার টান। তার পরও মাঝেমধ্যে জ্বলে উঠতেন। নিজের দিনে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতেন। এখন সেই ‘নিজের দিনের' জন্য অপেক্ষা করতে হয় দিনের পর দিন, ম্যাচের পর ম্যাচ।

গত আইপিএলে ব্যর্থতার পর এবার তিনি নিলামেই নেই। এই প্রথম আইপিএলে খেলা হচ্ছে না তার। একসময় বিশ্বের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে যাকে নিয়ে ছিল কাড়াকাড়ি, এখন তার ক্রিকেট জগত সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে অনেকটাই।

বিপিএলে একসময় যিনি রাজত্ব করেছেন হেসে-খেলে। মাঠে নামলেই ছক্কার ঝড় তুলতেন। এমনকি, লম্বা ভ্রমণ শেষে ম্যাচের আগে ঢাকায় পা রেখে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করে ম্যাচের পরই আবার ফিরে যাওয়ার ঘটনাও্ আছে। সেই গেইল এখন বিপিএলেও হালে পানি পান না।

বিপিএলের গত আসর থেকেই তিনি বিবর্ণ। তবু কিছুটা ছাপ তিনি রাখতে পেরেছিলেন সেবার। ৪ ম্যাচে একটি ফিফটিতে ১৪৪ রান করতে পেরেছিলেন ১৩৮.৪৬ স্ট্রাইক রেটে। এবার পারফরম্যান্স আরও নাজুক। ৫ ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই। মোট ১১৭ রান এসেছে কেবল ১১৭ স্ট্রাইক রেটে।

সবচেয়ে বড় কথা, তার ব্যাটিং ধেকে ধার হারিয়ে গেছে, স্রেফ নামের ভারই রয়ে গেছে। বোলারদের জন্য তিনি এখন আর আতঙ্ক নন, বরং থিতু হতে অনেক সময় নিয়ে এবং পরে আউট হয়ে দলের বিপদই ডেকে আনেন। তিনি ছন্দ পেলেই জয়ের নায়ক হয়ে উঠবেন, এই আশায় খেলানো হয় ম্যাচের পর ম্যাচ। কিন্তু আশা পূরণ হয় সামান্যই।

ফরচুন বরিশালের অনুশীলন শেষে রোববার ব্যাটিং পরামর্শক নাজমুল আবেদীনের সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠল, এই গেইল দলের বোঝা হয়ে উঠছেন কিনা। দেশের খ্যাতিমান এই কোচ অস্বীকার করলেন না ব্যাপারটি।

“সত্যি বলতে, হ্যাঁ, হতে পারে (বোঝা)। কারণ ও যদি রান না করে, ওর কাছ থেকে এরপরে অনেক কিছু পাওয়ার থাকে না আসলে। হয়তো ফিল্ডিংয়ে ওকে কিছুটা লুকিয়ে রাখতে হয়।”

তবে তিনি গেইল বলেই তবু আশার নৌকা বেয়ে চলছে তার দল। তার ব্যাট জ্বলে উঠবে, প্রতিপক্ষ পুড়ে খাকি হবে, এমন দিনের অপেক্ষায় নাজমুল আবেদীন।

“আমার মনে হয়, এখনও ওর ওই ক্ষমতা আছে পাঁচ ওভারের মধ্যে খেলাটাকে ঘুরিয়ে দেওয়ার, এখনও সেই সামর্থ্য আছে। সেজন্য আমরা এখনও তার উপর বিশ্বাসটা রাখছি এবং ওই জায়গাটা ওকে ছেড়ে দিয়েছি, যেন পুরোপুরি মনোযোগী হতে পারে ওখানে। ওর জায়গা নিয়ে যেন চিন্তা করতে না হয়। আমরা আশা করছি, যত সময় যাবে ও আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নেবে এবং ভালো করবে।”

গেইল নিয়মিত অনুশীলনে না আসায় দলে বাজে নজির চালু হওয়া ও শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও থাকে। বরিশালের ব্যাটিং কোচের অবশ্য দাবি, নেতিবাচকতার ছোঁয়া থেকে দলের অন্যদের আড়াল করার পথ তারা বের করে নিয়েছেন।

“ওরা যেখান থেকে আসছে, ওই জায়গার সংস্কৃতিটা বোধহয় অনেকটা এমনই। ওরা খেলাটাকে এভাবে দেখে বা নেয়। তো, আমরা মানিয়ে নিয়েছি। ওটা যেন দলের সার্বিক পারফরম্যান্সে বা দলের শৃঙ্খলায় কোনো প্রভাব ফেলতে না ফেলতে পারে, সেদিকে আমাদের চোখ আছে। অন্য যারা আছে, তারা সবাই খুবই মনোযোগী, সবাই যে যার কাজটা করছে।”