বাংলাদেশের সবচেয়ে নান্দনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিয়ে কোনো দ্বিধার অবকাশই এতদিন ছিল না। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ছিল প্রায় সর্বজন স্বীকৃত দেশের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়াম। কিন্তু এটিকে টেক্কা দিতে ঠিক পাশেই এখন সগৌরবে দাঁড়িয়ে জমজ এক মাঠ।
কখনও এই মাঠকে বলা হয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার গ্রাউন্ড। কখনও পরিচিতি পেয়েছে একাডেমি গ্রাউন্ড নামে। তবে ক্রিকেটীয় সুযোগ-সুবিধা অনেকটা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পর এটির কেতাবি নাম এখন ‘সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম-২।’ সৌন্দর্য্যে এটি এখন বলা যায় পেছনে ফেলে দিয়েছে মূল মাঠকেও।
একসময় এটি ছিল ধুলোবালির আখড়া। ময়লার স্তুপও পড়ে থাকত। পাশেই কাঁচা পথ ধরে মূল স্টেডিয়াম প্রাঙ্গনে যেতে নাকে ধাক্কা দিত বাজে গন্ধ। ওই অভিজ্ঞতা যাদের আছে, এখন জায়গাটা তাদের কাছে মনে হবে অচেনা এক ভূবন।
মাঠের ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় গত অক্টোবরে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট জাতীয় লিগ দিয়ে। পরে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের একদিনের ম্যাচের টুর্নামেন্টের কিছু ম্যাচও হয় এখানে। ঘরোয়া ক্রিকেট এখানে এখন নিয়মিতই হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সিরিজ ও বিপিএলের সময় এখানে চলবে অনুশীলনও। এবারই যেমন, রোববার থেকে শুরু হতে যাওয়া বিপিএলের সিলেট পর্বে দলগুলির অনুশীলন হবে এখানেই।
এই মাঠের স্রেফ এক পাশে রাখা হয়েছে কংক্রিটর স্থাপনা। সেখানে আধুনিক ড্রেসিং রুম আছে চারটি। এছাড়াও আছে প্রেসিডেন্ট’স বক্স, মিডিয়া সেন্টারসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। সেন্টার উইকেট এখানে ৯টি। মাঠের পাশেই নেট অনুশীলনের জন্য আছে ৬টি উইকেট।
সব মিলিয়ে চোখ আর মনকে প্রশান্তি দেওয়ার আয়োজন। তবে শুধু সৌন্দর্যে নয়, উপযোগিতার দিক থেকেও এটিকে দেশের ক্রিকেটের জন্য মাইলফলক করে তুলতে চান বিসিবি পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল।
“নিউ জিল্যান্ডে মাউন্ট মঙ্গানুইতে গিয়ে সেখানকার স্টেডিয়াম আমার মনে ধরে যায়। এই মাঠ তৈরির সময় বাংলাদেশের বাস্তবতায় যতটুকু সম্ভব, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের মতো করেই গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি আমরা। আরও গাছপালা লাগানোর পর ধাপে ধাপে অন্যান্য কাজগুলো শেষ হলে এই মাঠ দেখতে আরও ভালো লাগবে।”
অদূর ভবিষ্যতে এই মাঠে ফ্লাড লাইটও বসবে বলে জানালেন শফিউল আলম নাদেল।
জমজ এই দুই মাঠেই শেষ নয় সিলেট ক্রিকেট কমপ্লেক্সের কর্মযজ্ঞ। এই দুটি মাঠেই যেহেতু বিসিবির ম্যাচ ও ক্যাম্পের ব্যস্ততা থাকবে, সিলেটের স্থানীয় ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা চূড়ান্ত হয়ে গেছে বলে জানালেন শফিউল আলম নাদেল।
এই অনুশীলন মাঠের জন্য ৩ একর জায়গা এর মধ্যেই পাওয়া গেছে বলে জানালেন শফিউল আলম নাদেল। এখানে কোনো ম্যাচ খেলা নয়, স্রেফ অনুশীলনই হবে। ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে অন্যান্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে এখানেও।
“সত্যি বলতে, আমরা শুরু থেকেই জানি যে এখানে জাদুঘর একটি উচ্চভিলাসী পরিকল্পনা। আমাদের ক্রিকেট তো আর অনেক বছরের নয়, অর্জন বা স্মরণীয় কিছুও খুব বেশি নয়। তারপরও যা আছে, টুকটাক কিছু নিয়ে হলেও জাদুঘরটা আমরা করে যেতে চাই। তারপর সময়ের সঙ্গে এটা সমৃদ্ধ হবে।”
সব মিলিয়ে সিলেট হয়ে উঠতে যাচ্ছে দেশের ক্রিকেট চর্চার বড় এক চারণভূমি। ভেন্যু বা আয়োজক হিসেবে দেশের ক্রিকেটে মূল স্রোতে প্রবেশ তাদের অনেক পরে। কিন্তু উদ্যোগ, পরিকল্পনা ও আন্তরিকতা দিয়ে এই সিলেটই এখন হয়ে উঠছে গোটা দেশের ক্রিকেটের অবকাঠামোর জন্য উজ্জ্বল উদাহরণ।