অস্ট্রেলিয়ার দুটি বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক পন্টিংয়ের মতে, ল্যাঙ্গারের পদত্যাগের দিনটি দেশের ক্রিকেটের জন্য দুঃখজনক। হেইডেন মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন বন্ধুর প্রতি সবার মনোভাব দেখে।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ভীষণ সঙ্কটের সময়ে ২০১৮ সালে কোচের দায়িত্ব নেন ল্যাঙ্গার। কেপ টাউনে বল টেম্পারিং কাণ্ডে ওই সময়ের টালমাটাল দলকে ঘুরে দাঁড়াতে পথ দেখান তিনি।
তার সময়ে অস্ট্রেলিয়ার পারফরম্যান্স ওঠানামা করেছে। ফলে তার কোচিং নিয়ে হয়েছে অনেক আলোচনা-সমালোচনা। অবশেষে শনিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন ল্যাঙ্গার। এদিনই পরে ল্যাঙ্গারের সঙ্গে টেস্টে জুটিতে ৩ হাজার ৪৫১ রান করা পন্টিং এবিসি রেডিওকে বলেন, এই প্রক্রিয়া তার পছন্দ হয়নি।
“অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের জন্য এটি খুব দুঃখজনক একটি দিন। পেছন ফিরলে দেখা যায়, গত ছয়টি মাস ছিল বেশ বাজে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জাস্টিন ল্যাঙ্গার ও টিম পেইনের বিষয় যেভাবে সামলেছে, আমার মতে তা ভীষণ বিব্রতকর।”
“নিশ্চিতভাবে বোর্ডের পূর্ণ সমর্থন সে পায়নি। জাস্টিনকে আমি যেমনটা জানি, কোচ হিসেবে সে খুব করে থাকতে চেয়েছিল। কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় এবং এরপর অ্যাশেজে ৪-০ দুর্দান্ত ফল, তার কোচিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা সময়টা চলছিল।”
ল্যাঙ্গারের সঙ্গে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চুক্তি ছিল আগামী জুন পর্যন্ত। তবে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা চলছিল কিছুদিন ধরে। গত অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও গত মাসে অ্যাশেজ জয়ের পর ল্যাঙ্গারের চাওয়া ছিল লম্বা সময়ের জন্য মেয়াদ বাড়ানো। বোর্ডের প্রস্তাব ছিল স্বল্প মেয়াদের চুক্তি। চাওয়া-পাওয়ার মিল না হওয়ায় বিদায় বলে দিলেন কোচ।
ল্যাঙ্গারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বিবৃতিতে জানায়, ল্যাঙ্গারকে আর কিছুদিন দায়িত্বে থাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যেখানে ছিল আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু স্বল্প মেয়াদের প্রস্তাব মনে ধরেনি ল্যাঙ্গারের।
গত প্রায় এক বছর ধরেই ল্যাঙ্গারের কোচিংয়ের ধরন, ক্রিকেটারদের সামলানো ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা চলছিল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে। গত বছর ভারতের কাছে দেশের মাঠে সিরিজ হারার পর থেকেই কোচিংয়ের ধরন নিয়ে সিনিয়র ক্রিকেটারদের অসন্তোষের ব্যাপারটি প্রকাশ্য হতে থাকে। সংবাদমাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে থাকে।
পরে নিজের কোচিংয়ের ধরন বদলান ল্যাঙ্গার। তাতে সাফল্যও পেতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবারের মতো জেতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, অ্যাশেজে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ধরে রাখে ট্রফি।
শেষ দিকে দলের ভালো পারফরম্যান্স লম্বা চুক্তির আশা যুগিয়েছিল ল্যাঙ্গারকে। কিন্তু ক্রিকেটারদের মন সেভাবে জয় করতে পারেননি তিনি। সিনিয়র ক্রিকেটারদের, বিশেষ করে সাদা ও লাল বলের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ও প্যাট কামিন্সের নানা মন্তব্যে প্রতিফলন পড়েনি কোচের প্রতি পূর্ণ সমর্থনের। কামিন্স তো প্রকাশ্যেই বলেন, ল্যাঙ্গারের চুক্তির মেয়াদ মূল্যায়ন করা উচিত।
এরপরই ল্যাঙ্গার বুঝে যান তার করণীয়। ক্রিকেটারদের সমর্থন না পাওয়া সাবেক সতীর্থকে যে ব্যথিত করেছে, তা বুঝতে পারছেন হেইডেন।
“এটা পুরোপরি পরিষ্কার যে, কেউ তাকে সমর্থন করেনি। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়কের কথা যদি শোনা হয়, যেখানে তার (ল্যাঙ্গারের) প্রশংসা বা তাকে সমর্থন নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্যই করেনি সে। আমার মনে হয় না, ল্যাঙ্গার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পেরেছে। এটা খুবই কষ্টদায়ক হওয়ার কথা।”
কোচের বিষয়ে অধিনায়কের এমন অনাস্থার খবর বের হওয়ার পর কামিন্সও ‘কঠিন পরিস্থিতিতে’ পড়ে গিয়েছিলেন বলে মনে করেন হেইডেন। এ বিষয়ে পন্টিও প্রায় একইরকম মন্তব্য করেন।
“প্যাট হয়তো বুঝতে পেরেছিল যে এমন দিন আসতে যাচ্ছে। সে যদি এগিয়ে গিয়ে জাস্টিনকে সমর্থন দিত তাহলে আজকের এই অবস্থা হতো না।”
আপাতত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড।