যুব বিশ্বকাপের গতবারের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ আসর শেষ করল অষ্টম হয়ে। চ্যাম্পিয়নদের ২ উইকেটে হারিয়ে সপ্তম স্থান পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
অ্যান্টিগায় বৃহস্পতিবার আরিফুলের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের যুবারা ৫০ ওভারে তোলে ২৯৩ রান। রান তাড়ায় বেশকবার লাগাম হাতছাড়া হওয়ার ম্যাচে প্রোটিয়া যুবারা জিতে যায় ৭ বল বাকি রেখে।
তিন নম্বরে নেমে ১১ চার ও ৭ ছক্কায় ১৩০ বলে ১৩৮ করে রান তাড়ার নায়ক ব্রেভিস। ষষ্ঠ ওভারে উইকেটে গিয়ে তিনি আউট হন দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে।
শুধু এই ম্যাচ নয়, এবারের বিশ্বকাপেরও নায়ক তিনি। আসরে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। আরও দুটি ইনিংস আছে ৯৭ ও ৯৬ রানের। টুর্নামেন্ট শেষ করলেন ৬ ম্যাচে ৫০৬ রান নিয়ে, যা যুব বিশ্বকাপে এক আসরে রেকর্ড। পেছনে পড়ে গেল ২০০৪ আসরে গড়া ভারতের শিখর ধাওয়ানের ৫০৫ রান। ধাওয়ান ম্যাচও খেলেছিলেন একটি বেশি।
ব্রেভিসের এই সেঞ্চুরিতে আড়ালে চাপা পড়ল আরিফুলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। পঞ্চম স্থান নির্ধারণী প্লে-অফে পাকিস্তানের বিপক্ষেও অসাধারণ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি, কিন্তু ম্যাচ হারতে হয়েছিল সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার। ৭ম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে তার সেঞ্চুরিতে দল ভালো স্কোর গড়েও হারল বোলাররা প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায়।
যুব বিশ্বকাপে প্রথমবার টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান।
কুলিজ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামে টস জিতে। গোটা বিশ্বকাপে ব্যর্থ টপ অর্ডার এ দিন একটু ভালো শুরু এনে দেয় দলকে। এতদিন তিন নম্বরে ব্যাট করা প্রান্তিক নওরোজ নাবিল ফেরেন তার সহজাত পজিশন ওপেনিংয়ে। মাহফিজুল ইসলামের সঙ্গে মিলে ১০ ওভারে তোলেন ৫৭ রান।
এরপর তিন উইকেট হারাতে হয় দ্রুতই। ৩১ বলে ২৯ রান করে ফেরেন মাহফিজুল। বড় ভরসা আইচ মোল্লা তিনে নেমে বিদায় নেন ১ রানেই। এরপর প্রান্তিকও আউট হয়ে যান ৫১ বলে ৩৮ করে। দলের রান তখন ৩ উইকেটে ৮৫।
সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেন আরিফুল। চতুর্থ উইকেটে ৫৫ রানের জুটি গড়েন তিনি কিপার-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ ফাহিমের সঙ্গে।
জুটিতে অবশ্য ছিল যেন ফাহিমেরই ব্যাটিং প্রদর্শনী। ৩২ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ করে তিনি আউট হয়ে যান।
বাংলাদেশকে বড় স্কোরের পথে নিয়ে যায় মূলত পরের জুটি। এসএম মেহরবকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ১১৭ রান যোগ করেন আরিফুল।
টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি উপহার দিলেন বাংলাদেশের আরিফুল ইসলাম। ছবি: আইসিসি।
মেহরব ৪৭ বলে ৩৬ রান করে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। বাংলাদেশের পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা কেউ রান পাননি সেভাবে।
৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১০৩ বলে ১০২ করে আউট হন আরিফুল। শেষ ৫ ওভারে কেবল ৩৫ রান করতে পারে বাংলাদেশ। তিনশ ছাড়ানোর সম্ভাবনা জাগিয়েও তাই আর হয়ে ওঠেনি পরে।
পুঁজি তবু যথেষ্টই ভালো ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুতে উইকেটও হারায়। ষষ্ঠ ওভারে মুসফিক হাসান ফেরান জেড স্মিথকে। তবে দ্বিতীয় জুটিতে দলকে পথে রাখেন রোনান হারমান ও ডেওয়াল্ড ব্রেভিস। দুজনে গড়েন ৮৬ রানের জুটি।
৪২ বলে ৪৬ রান করা হারমানকে থামিয়ে এই জুটি ভাঙেন বাংলাদেশের মূল স্ট্রাইক বোলার রিপন মণ্ডল। কিন্তু ব্রেভিসকে থামানো যায়নি। আরেকপ্রান্তে উইকেট হারালেও তিনি ছিলেন অবিচল।
দক্ষিণ আফ্রিকা এক পর্যায়ে ১৭৬ রানে ৫ উইকেট হারালে ম্যাচে বাংলাদেশের সম্ভাবনা জেগে ওঠে ভালোভাবেই। কিন্তু সেই আশা পিষ্ট হয় ব্রেভিসের ব্যাটে। ষষ্ঠ উইকেটে ম্যাথু বোস্টকে ৭৪ রানের জুটি গড়েন তিনি স্রেফ ৪০ বলে। চার ছক্কায় বোস্ট করেন ২২ বলে ৪১।
ব্রেভিস শুরুতে খুব আগ্রাসী ছিলেন না। ইনিংস গড়েন তিনি আস্তেধীরে। ৬৪ বলে স্পর্শ করেন ফিফটি। এরপর স্রেফ বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ১১১ বলে। শতরানের পর ১৮ বলেই করেন আরও ৩৮!
১৩৮ রান করে তিনি যখন আউট হলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার তখন প্রয়োজন ৬ ওভারে ৩১ রান। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা সেই দাবি মেটান ভালোভাবেই। অ্যাডাইল সাইমলেন আটে নেমে করেন ১১ বলে ২০। বাংলাদেশ অধিনায়ক রকিবুল হাসানের বলে লিয়াম অল্ডারের ছক্কায় শেষ হয় ম্যাচ।
গত বিশ্বকাপে শিরোপাজয়ী দলের সদস্য রকিবুল বল হাতে ছিলেন ব্যর্থ। খরুচে বোলিংয়ে উইকেটশূন্য রয়ে যান যুব ক্রিকেটের অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি স্পিনার। দলও বিশ্বকাপ শেষ করে হতাশায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯: ৫০ ওভারে ২৯৩/৮ (মাহফিজুল ২৯, প্রান্তিক ৩৮, আইচ ১, আরিফুল ১০২, ফাহিম ৩৬, মেহরব ৩৬, তাহজিবুল ৪, রিপন ১৪*, রকিবুল ০, নাঈমুর ৩*; বোস্ট ১০-০-৫৩-১, মাফাকা ১০-০-৫৫-৩, অল্ডার ১০-২-৪৬-২, সাইমলেন ৭-০-৫৪-১, কোপল্যান্ড ৮-১-৪৪-১, ব্রেভিস ৫-০-৩৪-০)।
দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯: ৪৮.৫ ওভারে ২৯৮/৬ (স্মিথ ১০, হারমান ৪৬, ব্রেভিস ১৩৮, মারি ৪, ফন হিরডেন ৪, সলোমস ১৫, বোস্ট ৪১, সাইমলাইন ২০, কোপল্যান্ড ৬*, অল্ডার ১০*; রিপন ১০-১-৬২-২, মুসফিক ৭-০-৫২-২, নাঈমুর ১০-১-৩৩-০, রকিবুল ৯.৫-০-৬৮-০, মেহরব ৮-০-৪৮-২, আইচ ৪-০-৩৪-১)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দল ২ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ডেওয়াল্ড ব্রেভিস।