মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে কুমিল্লার জয় ৯ উইকেটে।
আসরে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে চতুর্থ জয়ে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে ফিরল কুমিল্লা। আট ম্যাচ খেলা চট্টগ্রামের এটি পঞ্চম হার। টানা তিন হারে প্লে-অফে ওঠার পথ কঠিন হয়ে গেল দলটির।
বৃষ্টির বাধায় ১৮ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৮ উইকেটে ১৩৮ রান করে চট্টগ্রাম। ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে নির্ধারিত ১৪৪ রানের নতুন লক্ষ্যে ইমরুল ও লিটনের ফিফটিতে ৯ বল আগেই পৌঁছে যায় কুমিল্লা। আসরে দুইজনেই করলেন প্রথম ফিফটি।
শুরুতে হোঁচট খাওয়া চট্টগ্রামকে ৫৭ রানে ইনিংসে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন উইল জ্যাকস। কিন্তু বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে বল হাতে জ্বলে ওঠেন মুস্তাফিজ। ২৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে গুঁড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষের বড় রানের স্বপ্ন। বিপিএলে নিজের সেরা বোলিংয়ে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
১৭৪ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটা মুস্তাফিজের তৃতীয় পাঁচ উইকেট, বিপিএলে পেলেন প্রথমবার। দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি এই টুর্নামেন্টে বাঁহাতি এই পেসারের আগের সেরা, ১০ রান দিয়ে তিন উইকেট।
জবাব দিতে নেমে ইমরুল-লিটনের ১৩৮ রানের উদ্বোধনী জুটিতেই ম্যাচের ফয়সালা প্রায় হয়ে যায়। ৫ ছক্কা ও ৬ চারে ৬২ বলে ৮১ রানের ইনিংসে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছাড়েন ইমরুল। শেষ দিকে আউট হওয়া লিটন করেন ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ৫৩।
নিজেদের সবশেষ দুই ম্যাচে ঘরের মাঠে হেরে আসা চট্টগ্রামের এদিন শুরুটা ভালো হয়নি। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলটি রানের খাতা খোলার আগেই হারায় চ্যাডউইক ওয়ালটনকে। নাহিদুল ইসলামের টেনে দেওয়া বলে আকাশে তুলে দিয়ে ফেরেন আসরে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা এই ক্যারিবিয়ান। আগের ম্যাচে মিডল অর্ডারে তেমন কিছু করতে পারেননি, এবার ব্যর্থ হলেন ওপেনিংয়ে।
শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে কুমিল্লাকে এগিয়ে নেন আফিফ হোসেন ও জ্যাকস। দারুণ কিছু শট খেলে সচল রাখেন রানের গতি। দ্বিতীয় ওভারেই বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামকে দুইজনে মিলে মারেন তিন চার।
নাহিদুলকে লং অন দিয়ে ছক্কায় ওড়ানো জ্যাকস পরে মুস্তাফিজকে দুর্দান্ত দুটি শটে মারেন চার-ছক্কা। পাওয়ার প্লেতে ওই এক উইকেটে ৫৫ রান তোলে চট্টগ্রাম।
জমে ওঠা ৬২ রানের জুটি ভাঙেন তানভির। তার বেশ নিচু হয়ে তীক্ষ্ণ বাঁক নেওয়া বলে করার মতো তেমন কিছু ছিল না আফিফের। ৪ চারে ২১ বলে ২৭ রান করে বোল্ড হয়ে যান বাঁহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
জ্যাকস ও শামীম হোসেনের ব্যাটে সঠিক পথেই ছিল চট্টগ্রাম। ৯ বছর পর বিপিএল খেলতে আসা মইন আলিকে রিভার্স সুইপে প্রথম বাউন্ডারি মারেন শামীম। স্বদেশী মইনকে পরে স্লগ সুইপে গ্যালারিতে নিয়ে ফেলেন ছন্দে থাকা জ্যাকস। ৩১ বলে আসরে নিজের তৃতীয় ফিফটি স্পর্শ করেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। দ্বাদশ ওভারে চট্টগ্রাম পৌঁছে যায় শতরানে।
পরের ওভার শেষ না হতেই নামে বৃষ্টি। এক ঘণ্টা পর খেলা শুরু হলে ছন্দ হারায় চট্টগ্রাম। মুস্তাফিজের শর্ট বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন চারটি চারে ২৬ রান করা শামীম। ওই ওভারেই লং অনে ধরা পড়েন ৫৭ রান করা জ্যাকস। তার ৩৭ বলের ইনিংসটি গড়া ৩ ছক্কা ও ৫ চারে।
শেষ দিকের প্রয়োজনীয় ঝড় তুলতে পারেননি নাঈম ইসলাম, বেনি হাওয়েল। নাঈমের সজোরে মারা বল দারুণ রিফ্লেক্সে এক হাতে ফিরতি ক্যাচ নেন মুস্তাফিজ। তার স্লোয়ারে ৩০ গজই পার করতে পারেননি হাওয়েল, ধরা পড়েন মিড অফে।
শেষ ওভারে আক্রমণে এসে মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন মুস্তাফিজ। শুরু থেকে দলের সঙ্গে থেকেও চোটের কারণে খেলতে না পারা সুনিল নারাইন এদিন মাঠে নেমে করতে পারেননি কিছু।
রান তাড়ায় শুরুতে নড়বড়ে দেখা গেছে ইমরুলকে। বিশেষ করে শরিফুল ইসলাম বেশ ভুগিয়েছেন তাকে। নিজের প্রথম দুই বাউন্ডারিই ইমরুল পান ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের পেছন দিয়ে। দুইবারই বোলার ছিলেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল।
সময়ের সঙ্গে ছন্দ খুঁজে পান ইমরুল। পরে দারুণ কিছু শটও খেলেন তিনি। জায়গা বানিয়ে হাওয়ালকে কাভার দিয়ে মারেন ছক্কা। হাওয়েলের পরের ওভারেই অবশ্য জীবন পান তিনি ৪৪ রানে। শর্ট থার্ড ম্যানে তার কঠিন ক্যাচ ঝাপিয়ে ধরার চেষ্টায় ব্যথা পেয়ে কিছুক্ষণ মাঠের বাইরে ছিলেন শরিফুল।
এরপর কেবল এগিয়ে গেছেন ইমরুল। মিরাজকে উড়িয়ে বাউন্ডারি ছাড়া করেন দুইবার। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে লং অফ দিয়ে পাঠিয়ে ৪২ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ ফিফটি, পরেরটি স্লগ সুইপে। ওভারের শেষ বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান আত্মবিশ্বাসী লিটন।
জীবন পান লিটনও। নাসুম আহমেদের বলে ৪৮ রানে বাউন্ডারিতে সহজ ক্যাচ ছেড়ে ছক্কা দেন জ্যাকস। ওই বাউন্ডারিতেই ৩৬ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্দশ ফিফটিতে পৌঁছে যান তিনি।
জয় থেকে যখন কেবল ৬ রানে দূরে কুমিল্লা আউট হয়ে যান লিটন। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিকে আকাশে তুলে কিপার আকবর আলির গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি। মৃত্যুঞ্জয়ের পরের দুই বল চার-ছক্কায় উড়িয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ইমরুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৮ ওভারে ১৩৮/৮ (ওয়ালটন ০, জ্যাকস ৫৭, আফিফ ২৭, শামীম ২৬, হাওয়েল ৩, নাঈম ৩, মিরাজ ৪, আকবর ১২*, মৃত্যুঞ্জয় ১; নাহিদুল ৩-০-২১-১, তানভির ৩-০-২১-১, নারাইন ৪-০-৩২-০, মুস্তাফিজ ৪-০-২৬-৫, মইন ৩-০-২৭-০, সুমন ১-০-৭-০)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৬.৩ ওভারে ১৪৮/১ (ইমরুল ৮১*, লিটন ৫৩, দু প্লেসি ০*; নাসুম ৪-০-২৬-০, শরিফুল ৩-০-২৬-০, মিরাজ ৩-০-৩১-০, হাওয়েল ৪-০-২৯-০, আফিফ ১-০-১০-০, মৃত্যুঞ্জয় ১.৩-০-২১-১)
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মুস্তাফিজুর রহমান