বিপিএলে চট্টগ্রাম পর্বে টানা দুই ম্যাচে হেরে যাওয়া খুলনা টাইগার্স জয়ে ফিরল ঢাকায় ফিরেই। সিলেট সানরাইজার্সকে উড়িয়ে দিল তারা ৯ উইকেটে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার সিলেটের ১৪২ রান খুলনা পেরিয়ে যায় ৩৪ বল বাকি রেখেই।
রান তাড়ার ৫টি করে চার ও ছক্কায় ৪৭ বলে ৭১ রানের দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংসে নায়ক ফ্লেচার। ম্যাচের সেরাও তিনি।
সৌম্য অবশ্য ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। তবে আগের ম্যাচগুলির ব্যর্থতা পেছনে ফেলে অন্তত রানের দেখা পেয়েছেন। ৩১ বলে তার রান ৪৩।
ফ্লেচারের ইনিংস আর খুলনার বিশাল জয়ে চাপা পড়ে গেছে মোহাম্মদ মিঠুনের দুর্দান্ত ইনিংস। দলের বিপর্যয়ে নেমে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ৫১ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলে সিলেটকে মাঝারি একটা স্কোরে নিয়ে যান তিনি। শেষ পর্যন্ত যদিও যথেষ্ট হয়নি সেই রান।
উইকেটে এ দিন হালকা ঘাসের ছোঁয়া রেখে দেওয়া হয়। তাতে বল ব্যাটে আসে বেশ ভালোভাবে। বিশেষ করে ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে। এই ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের সঙ্গে যোগ হয় সিলেটের যাচ্ছেতাই বোলিং। দুটি মিলিয়েই রান তাড়ায় খুলনা পায় উড়ন্ত শুরু।
চট্টগ্রামে ঠিক এরকম দুটি স্কোর তাড়া করতে গিয়েই হেরেছিল খুলনা। বিশেষ করে, শেষ ম্যাচটিতে তাদের হারের ধরন ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটু। ফরচুন বরিশালের ১৪৫ রান তাড়ায় দুই ওপেনার ফ্লেচার ও সৌম্য মন্থর ব্যাটিং করে দলকে চাপে ফেলে দেন ভীষণভাবে। সেদিন ২২ বলে ১৩ রান করেন সৌম্য, ২৩ বলে ১২ ফ্লেচার। ১০ ওভার শেষে খুলনার রান দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৩৫। কঠিন হয়ে ওঠা সমীকরণ পরে আর মেলাতে পারেননি দলের অন্যরা।
সেই ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে ফ্লেচার ও সৌম্য এবার ৯৯ রানের জুটি গড়েন স্রেফ ১০.৫ ওভারেই। ম্যাচের ফয়সালাও অনেকটা হয়ে যায় শুরুর জুটিতেই।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সোহাগ গাজীকে দুই চার ও এক ছক্কায় শুরু করেন ফ্লেচার। পরে পেয়ে বসেন তিনি মোসাদ্দেক হোসেনকে। সিলেট অধিনায়কের টানা তিন বল ছক্কায় ওড়ান ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান। পরের বলেই অবশ্য ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি। মোসাদ্দেক তা হাতে জমাতে পারেননি। ৪১ রানে জীবন পেয়ে সিলেটকে আরও ভোগান ফ্লেচার।
সৌম্যর রানে ফেরা জরুরি ছিল বেশি। আগের তিন ম্যাচ মিলিয়ে তার রান ছিল স্রেফ ১৪। এ দিন শুরুতে একটু সময় নিলেও পরে পুষিয়ে দেন নিজের সহজাত সব শট খেলে।
পাওয়ার প্লেতে খুলনা তুলে ফেলে ৬৫ রান। ফ্লেচার টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৪ বলে।
সৌম্য ফিফটি হাতছাড়া করেন বাজে এক বলে আরও বাজে শট খেলে। বাঁহাতি নাজমুল ইসলাম অপুর শর্ট বলে অনেক চেষ্টা করে যেন শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ডাইভ দিয়ে তা হাতে জমান জুবায়ের হোসেন।
দেশের ক্রিকেটে দীর্ঘ পথচলা শেষে অবশেষে এ দিন বিপিএল অভিষেকের সুযোগ পান জুবায়ের। ওই ক্যাচ নেওয়ার পাশাপাশি দলের হয়ে খানিকটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন এই লেগ স্পিনারই। ৩ ওভারে রান দেন ২০।
ব্যাটিংয়ে শেষটা যেমন করে খুলনা, ম্যাচের প্রথম ভাগে বোলিংয়ের শুরুটাও তাদের ছিল দারুণ। টস জিতে বোলিংয়ে নেমে সিলেটের ওপেনারদের রান তোলার সুযোগই দেয়নি তারা।
উইকেট শুরুতে খানিকটা মন্থর ছিল। সঙ্গে যোগ হয় সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও নাবিল সামাদের দুর্দান্ত বোলিং। সিলেটের ওপেনার এনামুল হক ১০ বল খেলে ৪ রান করে খালেদের বলে ধরা পড়েন থার্ড ম্যানে। আরেক ওপেনার লেন্ডল সিমন্স ১৯ বল খেলে করতে পারেন কেবল ৬।
পাওয়ার প্লেতে স্রেফ ২৪ রান তোলা সিলেটকে পরে আরও বড় ধাক্কা দেন নাবিল সামাদ। বাঁহাতি এই স্পিনার দ্রুত ফিরিয়ে দেন কলিন ইনগ্রামকে (২)।
সেই নড়বড়ে অবস্থা থেকে দলকে টানেন মিঠুন ও মোসাদ্দেক। শুরুতে সময় নিয়ে জুটি গড়েন দুজন। পরে উইকেট একটু সহজ হয়ে এলে বড় শটও খেলেন তারা। বিশেষ করে মিঠুনের কিছু শট ছিল চোধধাঁধানো।
চতুর্থ উইকেটে ৫০ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন দুজন। খালেদের বলে সীমানায় জাকের আলির অসাধারণ এক ক্যাচে শেষ হয় মোসাদ্দেকের ইনিংস। ৩০ বলে তার রান ৩৪। তাতে বাউন্ডারি থেকেই আসে ২৪ রান।
মিঠুন ৪১ বলে ফিফটি স্পর্শ করে পরে জ্বলে ওঠেন আরও। একটি ছক্কা মারেন তিনি শ্রীলঙ্কান লেগ স্পিনার সিকুগে প্রসন্নর বলে, তিনটি ছক্কা থিসারা পেরেরাকে। এর মধ্যে একটি ছক্কায় ফিল্ডার জাকের আলি বল হাতে জমিয়ে পড়ে যান সীমানার ওপাশে। সেই শটে ফিফটি হয় মিঠুনের, এবারের আসরে তার প্রথম।
৬ ছক্কা ও ৪ চারের ইনিংস খেলে মিঠুন আউট হন শেষ ওভারে। সিলেট শেষ ৬ ওভারে তোলে ৬৯ রান।
তখনও পর্যন্ত রানটাকে বেশ লড়িয়ে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ফ্লেচার-সৌম্যর ব্যাটে তা হয়ে যায় মামুলি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট সানরাইজার্স: ২০ ওভারে ১৪২/৫ (সিমন্স ৬, এনামুল ৪, মিঠুন ৭২, ইনগ্রাম ২, মোসাদ্দেক ৩৪, মুক্তার ৫*, নাদিফ ৬*; খালেদ ৪-০-২০-২, নাবিল ৪-১-১০-১, কামরুল রাব্বি ৪-০-৩১-১, মেহেদি ১-০-৮-০, প্রসন্ন ২-০-২২-০, থিসারা ৩-০-৩০-০, সৌম্য ২-০-১৬-১)
খুলনা টাইগার্স: ১৪.২ ওভারে ১৪৪/১ (ফ্লেচার ৭১*, সৌম্য ৪৩, থিসারা ২২*; শিরাজ ৩-০-১৮-০, সোহাগ ১-০-১৫-০, মুক্তার ৩-০-৩১-০, নাজমুল অপু ৩.২-০-৩৯-১, মোসাদ্দেক ১-০-২০-০-, জুবায়ের ৩-০-২০-০)
ফল: খুলনা টাইগার্স ৯ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আন্দ্রে ফ্লেচার