রান না নিয়ে আইসিসির সম্মাননা পেলেন মিচেল

দলের বিশ্বকাপ ফাইনাল ভাগ্য তখন দোদুল্যমান। একটি রানও মহামূল্য। এরকম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রানের সুযোগ পেয়েও স্রেফ ক্রিকেটীয় ভব্যতা দেখিয়ে রান নেননি ড্যারিল মিচেল। সেদিন শেষ পর্যন্ত ৭২ রান করে দলের জয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন তিনি। এবার আইসিসি তাকে পুরস্কৃত করল ওই একটি রান না নেওয়ার জন্য।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2022, 12:21 PM
Updated : 2 Feb 2022, 12:21 PM

২০২১ সালের আইসিসি অ্যাওয়ার্ড-এ ‘আইসিসি স্পিরিট অব ক্রিকেট’ সম্মাননা পেলেন নিউ জিল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার।

ক্রিকেটীয় চেতনা ও মূল্যবোধকে তুলে ধরায় ভূমিকা রাখার জন্য প্রতি বছর এই পুরস্কার দিয়ে থাকে আইসিসি। ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’-এর মৌলিক অংশ মনে করা হয় প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান, নিজ দল ও অধিনায়কের প্রতি সম্মান, আম্পায়ারদের ভূমিকার প্রতি সম্মান ও খেলাটির প্রথাগত মূল্যবোধের প্রতি সম্মান।

মিচেল এই সম্মান পেলেন গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের একটি ঘটনায়। গত ১০ নভেম্বর, আবু ধাবিতে ইংল্যান্ডের ১৬৬ রান তাড়ায় নিউ জিল্যান্ডের তখন দরকার ৩ ওভারে ৩৪ রান।

অষ্টাদশ ওভারের প্রথম বলে সজোরে শট খেলেন জিমি নিশাম। বোলার আদিল রশিদ ফলো থ্রুতে ফিল্ডিং করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নন-স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটসম্যান মিচেল রান নেওয়ার চেষ্টায় চলে আসেন রশিদের সামনে। বাধা পেয়ে আর বল ধরতে পারেননি রশিদ। এক রান নেওয়ার সুযোগ তখন অনায়াসেই।

ক্রিকেটে এভাবে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা হরহামেশাই হয়। কিন্তু ব্যতিক্রমী নজির স্থাপন করে রান নেননি মিচেল। ফিরিয়ে দেন তিনি রান নিতে উদ্যত হওয়া সঙ্গী জিমি নিশামকে।

বিশ্বকাপ সেমি-ফাইনালের মতো ম্যাচে এমন চাপের সময় রান না নেওয়ায় ধারাভাষ্যে তখন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন নাসের হুসেইন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও স্তুতির জোয়ারে ভাসেন মিচেল।

সেদিন শেষের সেই কঠিন সমীকরণ মিলিয়ে ১ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জেতে নিউ জিল্যান্ড। ৪৭ বলে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলের জয়ের নায়ক হন মিচেল।

আইসিসির এই স্বীকৃতিকে বড় পাওয়া মনে করছেন মিচেল। রান না নেওয়ার কারণও ব্যখ্যা করলেন তিনি।

“আইসিসি স্পিরিট অব ক্রিকেট অ্যাওয়ার্ড পাওয়া দারুণ সম্মানের। সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের অংশ হতে পারা ছিল অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এবার এই অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার ব্যাপারটিও দারুণ।”

“সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তীব্র লড়াইয়ের ম্যাচ ছিল সেটি, কয়েক ওভার মোটে বাকি ছিল। নিশ (নিশাম) লং অফে বল পাঠিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, রশিদকে আমি বাধা দিয়েছি বলের কাছে যেতে।”

৩০ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারের মতে, জয়ের তাড়না যতই তীব্র হোক, ক্রিকেটীয় চেতনার চেয়ে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

“আমরা যে খেলাটি খেলি, ভালোবাসি বলেই খেলি। হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা জিততে চাই যতটা সম্ভব, তবে আমরা চাই না, সেটা এমনভাবে আসুক যে ক্রিকেটের মূল্যবোধের বাইরে যাবে। ক্রিকেটের চেতনা প্রবলভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাদের সামনেও নজির গড়ে দেয় এটা, ভবিষ্যতে যারা খেলাটা খেলবে সঠিক পথে।”

“দিনশেষে এটা তো একটি খেলাই, যা খেলতে আমরা ভালোভাসি। অবশ্যই আমরা সৌভাগ্যবান ভালোবাসার খেলা খেলতে পেরে।”

ক্রিকেটীয় চেতনাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে নিউ জিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সবসময়ই অগ্রণী দেখা যায়। ‘আইসিসি স্পিরিট অব ক্রিকেট’ অ্যাওয়ার্ডের ১০ বিজয়ীর মধ্যে চারজনই এখন এই দেশের। মিচেলের আগে এই সম্মান পেয়েছেন তিন সময়ে তিন কিউই অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেটোরি, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও কেন উইলিয়ামসন।

মিচেল বললেন, জাতি হিসেবে তাদের ক্রিকেট দর্শনই এমন।

“এটা এমন কিছু, নিউ জিল্যান্ডের মানুষ হিসেবে খেলাটা এভাবে খেলতে এবং ক্রিকেটের চেতনার দিকটিতে প্রাধান্য দেওয়ায় আমরা গর্ব খুঁজে নেই। ওই সময়টায় ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছিল, আমি বাধা দিয়েছি (আদিল রশিদকে)। আমরা জিততে চাই নিজেদের নৈপুণ্যে, এত বড় ম্যাচে বিতর্কের জন্ম দিতে চাইনি।”