অসাধারণ পারফরম্যান্সে আবার নায়ক সাকিব-মুজিব

দীর্ঘ দিনের খরা কাটিয়ে ফিফটি করার দিনে বল হাতেও দ‍্যুতিময় সাকিব আল হাসান। জাদুকরী বোলিংয়ে আবারও ঘোর লাগালেন মুজিব উর রহমান। অধিনায়কের দুর্দান্ত অলরাউন্ড নৈপুণ‍্য আর আফগান বোলারের স্পিন ইন্দ্রজালে দেড়শ রানের কম পুঁজি নিয়েই টানা দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে গেল বরিশাল।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2022, 03:21 PM
Updated : 1 Feb 2022, 04:43 PM

বিপিএলে মঙ্গলবার জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ১৪ রানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল।

ফল যতটা বলছে, মাঠের ক্রিকেটে এর চেয়ে বেশিই ছিল বরিশালের দাপট। সেখানে আবারও সামনে থেকেই নেতৃত্বে সাকিব। ঝড়ো ফিফটির পর বল হাতে ২৩ রানে তার শিকার ৩ উইকেট। টানা দুই ম্যাচে বরিশাল অধিনায়কের হাতে উঠল ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

সাকিবের অলরাউন্ড আলোয় একটু চাপা পড়লেও মুজিবের পারফরম্যান্স স্রেফ অবিশ্বাস্য। ব্যাটিং উইকেটে, রাতের শিশির ভেজা বলেও ৪ ওভারে তার ৩ উইকেট মাত্র ৯ রান দিয়ে!

সাকিবের ফিফটিতে একসময় বড় স্কোরের পথে থাকা বরিশাল শেষের ধসে শেষ পর্যন্ত আটকে যায় ১৪৯ রানে। দারুণ বোলিংয়ে সেই রানকেই তারা যথেষ্ট প্রমাণ করে ছাড়ে জয়ের জন্য।

আগের ম‍্যাচে ১৪৫ রান করেও প্রিমিয়ার ব‍্যাংক খুলনা টাইগার্সকে ৬ রানে হারিয়েছিল সাকিবের দল।

আগের দিন টস জিতে ব‍্যাটিং হুট করে নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত  ছিল না। পরদিনও ব‍্যাটিংই নিলেন সাকিব।

টসের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন না এলেও বদল আসে উদ্বোধনী জুটিতে। ক্রিস গেইলের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেন কোভিড-১ সেরে ওঠা মুনিম শাহরিয়ার। বিপিএলে তরুণ এই ওপেনারের প্রথম ইনিংস টেকে মাত্র দুই বল। শরিফুল ইসলামের বলে শর্ট ফাইন লেগে মৃত‍্যুঞ্জয়ের দারুণ ক্যাচে আউট হন মুনিম। 

ম‍্যাচের প্রথম ওভারটিই লম্বা সময়ের জন‍্য হয়ে থাকে কোনো পেসারের শেষ ওভার।

ক্রিজে বাঁহাতি ব‍্যাটসম‍্যানদের পেয়ে একের পর এক অফ স্পিনারকে আক্রমণে আনেন নাঈম ইসলাম। মেহেদী হাসান মিরাজের পর হাত ঘোরান উইল জ‍্যাকস। আসরে এই প্রথম বোলিং করলেন ইংলিশ ক্রিকেটর। চার ওভারের প্রতিটিতে হজম করেন বাউন্ডারি। তবে বড় একটি সাফল্যও পান। গেইল তার তিন ছক্কা ও এক চারের সবকটি মারেন জ্যাকসকে। কিন্তু ১৯ বলে ২৫ রান করে আউট হন তার বলেই।

সপ্তম ওভারে ক্রিজে যান সাকিব। ডট দিয়ে শুরু করা বাঁহাতি এই ব‍্যাটসম‍্যান কিছুক্ষণ পর আফিফ হোসেনকে মারেন চার।

অফ স্পিনর চ্যালেঞ্জকে পাত্তা না দিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজকেও এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মারেন সাকিব।

অন‍্য পাশে জীবন পেযে কাজে লাগাতে পারেননি শান্ত। আফিফকে ছক্কার পর কট বিহাইন্ড হয়ে যান তিনি। আম্পায়ার আউট না দিলেও এডিআরএস-এ বদলে যাওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশয়ের অবকাশ অবশ্য রয়ে যায়। মাঠেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন সাকিব।  

সাকিব এবার দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে। নাসুমকে স্লগ সুইপে ছক্কায় ওড়ান হৃদয়।

বিপিএলে আগের ম্যাচগুলোয় অসাধারণ বোলিং করা নাসুমের জন‍্য পরের ওভারটি ছিল যেন দুঃস্বপ্ন। সাকিবের ব‍্যাটে হজম করেন তিন ছক্কা।

হৃদয় পরে বেনি হাওয়েলকে ছক্কা মেরে আউট হয়ে যান সেই ওভারেই (১৭ বলে ২২)। পরের ওভারেই ৩০ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন সাকিব।

৪৫ ইনিংসের খরা কাটিয়ে পাওয়া ফিফটিকে অবশ্য বড় করতে পারেননি তিনি। তিনটি করে চার ও ছক্কার ইনিংস শেষ হয় আরেকটি ছক্কার চেষ্টায়।

এরপর নাটকীয় ধস নামে বরিশালের ইনিংসে। ১৯ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে তারা গুটিয়ে যায় দেড়শর আগেই।

দিন তিনেক আগে বিপিএল অভিষেক হ‍্যাটট্রিকে রাঙানো মৃত‍্যুঞ্জয় আবারও আশা জাগান তিন বলে তিন শিকারে। সেটা হয়নি। তবে ৪ বলের মধ্যে ৩ উইকেট ঠিকই নেন।

সব মিলিয়ে ১২ রানে মৃত্যুঞ্জয়ের শিকার ৪ উইকেট। ৯ ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারে তার প্রথম ৪ উইকেট এটি।  

একাদশে তিন পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামা চট্টগ্রাম ব্যাটিং অর্ডারেও আনে বদল। জ‍্যাকসের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামেন আফিফ। আগের ম্যাচগুলোয় ওপেন করা কেনার লুইস ছিলেন না দলেই।

আগের দুই ম‍্যাচে ফিফটি করা জ‍্যাকস এবার প্রথম ওভারেই ফেরেন শূন‍্য রানে। মুজিবের ডেলিভারি বুঝতে পারেননি তিনি।

একাদশে জায়গা হারানো সাব্বির রহমানের জায়গায় তিনে নামেন শামীম। আগের ম্যাচগুলোয় একদমই ছন্দে না থাকা ব্যাটসম্যান এ দিনও ভুগতে থাকেন শুরুতে। সে সময় রানের চাকা সচল রাখেন আফিফ।

ক্রিজে দুই বাঁহাতি থাকায় দুই অনিয়মিত অফ স্পিনার হৃদয় ও গেইলকে আক্রমণে আনেন সাকিব। তবে সেই ফাটকা কাজে লাগেনি। রানের গতি খুব ভালো না থাকলেও ১০ ওভারে ৭০ রানের জুটিতে ভিত গড়েন দেন শামীম ও আফিফ।

একাদশ ওভারে আক্রমণে এসেই আফিফের ব‍্যাটে ছক্কা হজম করেন সাকিব। তবে সেই ওভারেই মেলে সাফল‍্য। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে আনেন আফিফ (৩২ বলে ৩৯)।

এই জুটি ভাঙার পর চট্টগ্রামের ইনিংসও ভেঙে পড়ে ক্রমে। ২৯ রান করতে শামীম খেলে ফেলেন ৩০ বল। তাকে আউট করে মেহেদি রান উদযাপন করতে থাকেন ব‍্যাটসম‍্যানের ঠিক সামনে, তবে দৌড়ে এসে তাকে সরিয়ে নেন সাকিব।

এরপর স্রেফ ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া। সাকিবের বলে চট্টগ্রাম অধিনায়ক নাঈম ইসলাম ফেরেন ‘গোল্ডেন ডাক’ পেয়ে। মুজিব নিজের শেষ ওভারে পটানা দুই বলে বিদায় বিপজ্জনক বেনি হাওয়েল ও প্রথমবার মতো খেলতে নামা আকবর আলিকে।

শেষ দিকে মিরাজের ১৩ বলে ২৬ রানের দারুণ ক্যামিওতে কিছুটা ব্যবধান কমায় চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রাম পর্ব শেষে ৬ ম্যাচে ৪ জয়ে বরিশাল এখন শীর্ষে। ৭ ম্যাচে চট্টগ্রামের হার ৪টি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ফরচুন বরিশাল: ১৯.১ ওভারে ১৪৯ (মুনিম ১, গেইল ২৫, শান্ত ২৮, সাকিব ৫০, হৃদয় ২২, ব্রাভো ৪, শুক্কুর ৫, সোহান ০, মুজিব ১, মেহেদি রানা ৫*, শফিকুল ০; শরিফুল ২.১-০-৯-২, মিরাজ ৪-০-২৫-০, জ‍্যাকস ৪-০-৩২-১, আফিফ ২-০-১৬-১, হাওয়েল ৩-০-২০-১, নাসুম ২-০-৩২-০, মৃত‍্যুঞ্জয় ২-০-১২-৪)

চট্টগ্রাম চ‍্যালেঞ্জার্স: ১৯.৪ ওভারে ১৩৫ (জ‍্যাকস ০, আফিফ ৩৯, শামীম ২৯, ওয়ালটন ১৬, নাঈম ০, হাওয়েল ১, আকবর ০, মিরাজ ২৬, মৃত‍্যুঞ্জয় ৯*, শরিফুল ১০, নাসুম ১; মুজিব ৪-১-৯-৩, শফিকুল ১-০-১১-০, গেইল ৩-০-২৫-০, হৃদয় ২-০-১১-০, ব্র‍্যাভো ৩.৪-০-৩৫-২, সাকিব ৪-০-২৩-৩, মেহেদি রানা ২-০-২১-২)

ফল: ফরচুন বরিশাল ১৪ রানে জয়ী

ম‍্যান অব দা ম‍্যাচ: সাকিব আল হাসান