কুমিল্লার জয়রথ থামাল মাহমুদউল্লাহর ঢাকা

আগের ম‍্যাচের সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবাল আবার পেলেন ভালো শুরু। বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও গড়ে দিলেন ভিত। সেটা কাজে লাগিয়ে ক‍্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিলেন মাহমুদউল্লাহ। পরে বোলিংয়ে বাকিটা সারলেন আন্দ্রে রাসেল, কাইস আহমেদরা। সবার মিলিত চেষ্টায় বড় ব‍্যবধানে হারিয়ে বিপিএলে কুমিল্লার জয়রথ থামাল ঢাকা।  

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2022, 10:13 AM
Updated : 1 Feb 2022, 11:17 AM

জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার তারকায় ঠাসা দু্ই দলের লড়াইয়ে মিনিস্টার ঢাকার জয় ৫০ রানে। ১৮১ রান তাড়ায় ১৩১ রানেই শেষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ইনিংস।

কুমিল্লার এই হারে এবারের বিপিএলে কোনো দলই আর অপরাজেয় রইল না।

ঢাকার জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান মাহমুদউল্লাহর। ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৪১ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলেন ঢাকার অধিনায়ক। ২৭২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার আগের সেরাও ছিল অপরাজিত ৭০।

ক‍্যারিয়ারে সেরা ইনিংস খেলার পথে তৃতীয় ব‍্যাটসম‍্যান হিসেবে বিপিএলে দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন মাহমুদউল্লাহ। এই সংস্করণে ক্যারিয়ার রান পেরিয়ে যান ৫ হাজার। অধিনায়কের এত প্রাপ্তির দিনে দলের প্রাপ্তি টানা দ্বিতীয় জয়।

শেষটা চমৎকার হলেও টস হেরে ব‍্যাট করতে নেমে ম‍্যাচের শুরুটা ভালো হয়নি ঢাকার। আগের ম‍্যাচে ১৭৩ রান তোলা উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ম‍্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই। মুস্তাফিজুর রহমানকে চার মেরে পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান মোহাম্মদ শাহজাদ।

তাড়াহুড়ো না করে তামিম শুরু করেন ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে। এগোতে থাকেন বল বুঝে শট খেলার কৌশলে।

৯ উইকেটে জয়ী আগের ম‍্যাচে শেষ দিকে ক্রিজে গেলেও কোনো বল খেলার সুযোগ হয়নি ইমরান উজ্জমানের। এবার চার দিয়ে শুরুর পরই আউট হতে পারতেন। শহিদুল ইসলামের বলে এই কিপার-ব‍্যাটসম‍্যানের ক‍্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি লিটন।

মিনিস্টার ঢাকাকে আবারও ভালো শুরু এনে দেন তামিম ইকবাল। ছবি: সুমন বাবু।

সেই ওভারের শুরুতে ছক্কা হাঁকানো তামিম পরে সীমানার ফিল্ডার করিম জানাতের ব‍্যর্থতায় পেয়ে যান চার। আফগান পেসারের দিনটি কাটে বেশ বাজে, বোলিংয়ে এসে তামিমের ব‍্যাটে হজম করেন ছক্কা।

জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ইমরান। স্টাম্পে থাকা করিমের বলের লাইন মিস করে হয়ে যান বোল্ড।

অষ্টম ওভারে ক্রিজে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ থাকেন শেষ পর্যন্ত। তামিম ইদানিং যেভাবে ইনিংস নির্মাণ করেন, এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেভাবেই। শহিদুলের পর ছক্কা মারেন তিনি করিম ও তানভির ইসলারে বলে।

তানভিরকেই পরে দারুণ এক কাভার ড্রাইভে চার মেরে এগিয়ে যান ফিফটির দিকে। কিন্তু দ্বৈরথে শেষ পর্যন্ত জিতে যান তানভির। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে টাইমিং করতে না পেরে তামিম ধরা পড়েন শর্ট মিড উইকেটে। ৩৫ বলে তিন চার ও দুই ছক্কায় করেন তিনি ৪৬ রান।

এরপর ঢাকার ইনিংস এগিয়েছে মাহমুদউল্লাহকে ঘিরে। তামিমের পর শুভাগত হোম চৌধুরি, আন্দ্রে রাসেল, মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও মাশরাফি বিন মুর্তজা, সবার সঙ্গে ঢাকা অধিনায়ক গড়েন ছোট ছোট জুটি।  

প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নেমে সুবিধা করতে পারেননি শুভাগত (৮ বলে ৯)। পেশির জোরে তানভিরকে ছক্কা ও চার মেরে ঝড়ের আভাস দিলেও বাঁহাতি এই স্পিনাকেই বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান রাসেল (৭ বলে ১১)।

টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলের প্রথম পছন্দেন ওপেনার হলেও বিপিএলে তিন কিংবা চারে ব‍্যাট করছিলেন নাঈম। এবার সাতে নেমে করেন ৯ বলে ১০।  

এই পুরো সময়টায় এক প্রান্ত থেকে এক প্রান্তে ভরসা হয়ে দলকে এগিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ। উইকেট ধরে রেখে রানের চাকা যেমন সচল রাখেন, তেমনি শুভগত-রাসেলদের বিদায়ের পর শেষের দাবিও মেটান অধিনায়ক।

৩৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করার পর কাজ শেষ মনে করেননি ঢাকা অধিনায়ক। শেষেও ঝড় তুলে দলকে নিয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত স্কোরে।

শেষ ওভারে করিম জানাতের বলে মাহমুদউল্লাহর দুই ছক্কাসহ রান আসে ২০। দুই বিমারের জন‍্য শেষ বলটি করতে পারেননি করিম। ওভার শেষ করেন শহিদুল। 

শেষ ৫ ওভারে ঢাকা তোলে ৬৬ রান।

বড় রান তাড়ায় শুরুতেই বড় হোঁচট খায় কুমিল্লা। ইনিংসের মাত্র তৃতীয় বলেই রুবেল হোসেনকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় লিটন দাস আউট হন কিপার ইমরানের হাতে ধরা পড়ে।

উইকেটের সামনে-পিছনে দিনটি বাজে কাটল লিটনের। ক‍্যাচ ও বাই চার ছাড়ার পর ব্যাটিংয়ে আউট হলেন শূন‍্য রানে।

ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও বল হাতে আন্দ্রে রাসেল ছিলেন ঢাকার সেরা। ছবি: সুমন বাবু।

সেই ধাক্কা কুমিল্লা সামাল দেওয়ার আগেই আরেকটি জোর আঘাত। দ্রুত একটি সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টায় মাহমুদউল্লাহর জোরাল থ্রোয়ে রান আউট তাদের আগের ম্যাচের নায়ক ফাফ দু প্লেসি (৮)।

দ্রুত দুই ব‍্যাটিং ভরসার বিদায়ের পরও কুমিল্লাকে পথে রাখেন মাহমুদুল হাসান জয়। দৃষ্টিনন্দন সব ক্রিকেট শটে বাউন্ডারির পসরা মেলে ধরেন যুব বিশ্বকাপজয়ী প্রতিভাবান ব‍্যাটসম‍্যান। তিন চার মারেন তিনি অভিজ্ঞ মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। পরে শুভাগতর ওভারে মারেন টানা চারটি চার।

সবগুলি বাউন্ডারিই ক্রিকেট ব্যাকরণের শট, সবগুলিই দুর্দান্ত টাইমিং আর প্লেসমেন্টের নজির।

মাহমুদুলকে সঙ্গ দিয়ে ইমরুলও শুরুটা করেন দারুণ। মাহমুদউল্লাহর শর্ট বল ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ওড়ান ছক্কায়। গড়ে ওঠে দারুণ এক জুটি।

ইনিংসের মাঝপথে কুমিল্লা লক্ষ্যে টিকে থাকে ভালোভাবেই। এরপর যখন জয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পালা, তখনই তাদের উল্টো যাত্রা। একাদশ ওভারে আক্রমণে এসেই রাসেল পাল্টে দেন ম্যাচের চিত্র।

পুল করার চেষ্টায় বল স্টাম্পে টেনে আনেন ইমরুল।২৩ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় কুমিল্লা অধিনায়ক করেন ২৮। থেমে যায় মাহমুদুলের সঙ্গে তার ৪৪ বলে ৭০ রানের জুটি।

ওই ওভারের শেষ বলে কাট করার চেষ্টায় বল স্টাম্পে আনেন মাহমুদুল। ৩০ বলে ৮ চারে ৪৬ রানে শেষ হয় তার নান্দনিক যাত্রা।

আগের ম‍্যাচে ঝড়ো ফিফটি করা ক‍্যামেরন ডেলপোর্ট ৩ রান করে কাটা পড়েন রান আউটে।  বল হাতে খরুচে করিম ব‍্যাটিংয়ে পুষিয়ে দেওয়ার আভাস দেন দুই ছক্কা মেরে। তবে আফগান অলরাউন্ডারকে (১১ বলে ১৭) দ্রুতই থামিয়ে দেন ইবাদত হোসেন।

এরপর বেশিদূর এগোয়নি কুমিল্লার ইনিংস। ১০ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৮২ রানে থাকা দল স্রেফ ১৩১ রানেই গুটিয়ে যায় ইনিংসের ১৫ বল বাকি থাকতে।

৬ ম্যাচ শেষে ঢাকার জয়-পরাজয় এখন ৩টি করে। ৪ ম্যাচে প্রথম হারের পরও কুমিল্লা আপাতত রয়ে গেল শীর্ষেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

মিনিস্টার ঢাকা: ২০ ওভারে ১৮১/৬ (শাহজাদ ৬, তামিম ৪৬, ইমরান ১৫, মাহমুদউল্লাহ ৭০*, শুভাগত ৯, রাসেল ১১, নাঈম ১০, মাশরাফি ২*;  নাহিদুল ৪-০-২৪-০, মুস্তাফিজ ৪-০-২৬-১, শহিদুল ৩.১-০-৩২-১, করিম ৩.৫-০-৪৬-১,  তানভির ৪-০-৩৬-২, আরিফুল ১-০-১০-০)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৭.৩ ওভার ১৩১ (লিটন ০, মাহমুদুল ৪৬, দু প্লেসি ৮, ইমরুল ২৮, ডেলপোর্ট ৩, করিম ১৭, আরিফুল ১২, নাহিদুল ০, শহিদুল ১, তানভির ১০*, মুস্তাফিজ ১; রুবেল ২-০-৫-১, মাশরাফি ২-০-২১-০, ইবাদত ৩-০-২১-২, শুভাগত ১-০-১৮-০, কাইস ২-০-২৭-২, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-১৭-০, রাসেল ২.৩-০-১৭-৩)

ফল: মিনিস্টার ঢাকা ৫০ রানে জয়ী

ম‍্যান অব দা ম‍্যাচ: মাহমুদউল্লাহ