আরিফুলের দারুণ সেঞ্চুরির পর হারল বাংলাদেশ

যুব বিশ্বকাপে শক্তিশালী দলগুলোর সামনে পড়লেই যেন পথ হারিয়ে ফেলছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষেও ব্যাটিংটা হলো না ভালো। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে অবশ্য দারুণ এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন আরিফুল ইসলাম। পৌনে দুইশ রানের পুঁজি নিয়ে বোলাররা লড়াই করলেন কিছুটা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সঙ্গী হলো আরেকটি হার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2022, 04:59 PM
Updated : 31 Jan 2022, 08:39 PM

বাংলাদেশের ট্রফি ধরে রাখার স্বপ্ন আগেই শেষ হয়ে গেছে কোয়ার্টার-ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে। সোমবার পঞ্চম স্থান প্লে অফ সেমি-ফাইনালে তারা হেরেছে ৬ উইকেটে। ১৭৬ রানের লক্ষ্য পাকিস্তান ছুঁয়ে ফেলেছে ২১ বল বাকি থাকতে।

দলকে প্রায় একাই টানেন আরিফুল। ইংল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে দুই অঙ্কে যেতে ব্যর্থ এই ব্যাটসম্যান পাঁচ নম্বরে নেমে ১১৯ বলে করেন ১০০ রান। দল হারলেও ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজানো ইনিংসের সুবাদে ম্যাচের সেরা তিনিই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান আসে ইফতেখার হোসেনের ব্যাট থেকে। দুই অঙ্কে যেতে পারেন আর কেবল মেহরব হাসান (১৪)।

চলতি আসরে এটিই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে যুব বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি পেলেন আরিফুল। আগের ছয় জনের মধ্যে এনামুল হক বিজয়ের আছে দুটি।

অ্যান্টিগার কুলিজ ক্রিকেট মাঠে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মাহফিজুল ইসলাম ও ইফতেখার শুরুতে ছিলেন অতিসাবধানী। প্রথম ৭ ওভারে আসে স্রেফ ১১ রান। মাহফিজুলের ২৭ বলে ৬ রানের ইনিংস শেষ হয় এলবিডব্লিউ হয়ে।

প্রান্তিক নওরোজ নাবিল ও আইচ মোল্লা টিকতেই পারেননি। নাবিল ক্যাচ দেন স্লিপে, আইচ হন এলবিডব্লিউ।

এরপর প্রতিরোধ গড়েন ইফতেখার ও আরিফুল। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৫০ রান। জুটি ভাঙে দুই ব্যাটসম্যানের ভুল বোঝাবুঝিতে ইফতেখারের (৫৮ বলে ২৫) রান আউটে।

কিপার-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ ফাহিম দ্রুত বিদায় নেন স্টাম্পড হয়ে। বিশাল ছক্কা মেরে আরিফুল ফিফটি পূর্ণ করেন ৮১ বলে। বেশ কিছুটা সময় তাকে সঙ্গ দিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান মেহরব হাসান (৩৪ বলে ১৪)।

নাইমুর রহমান ও অধিনায়ক রকিবুল হাসান ফিরে যান পরপর দুই বলে। ৪০তম ওভারে দলের রান তখন ৮ উইকেটে ১২২। আরিফুলের রান ৫৯।

সেখান থেকে রিপন মন্ডলকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে। আওয়াইস আলির একই ওভারে মারেন তিনটি ছক্কা। পরে এই পেসারের বলেই ডাবল নিয়ে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক।

পরের বলে ছক্কার চেষ্টায় বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ১০০ রানের ইনিংস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ ও ভারতের বিপক্ষে ৯ রান করেছিলেন তিনি। আরিফুল ও রিপনের নবম উইকেট জুটিতে আসে ৫২ রান।

রান তাড়ায় ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটিতে পাকিস্তানের সুর বেঁধে দেন মুহাম্মদ শেহজাদ ও হাসিবউল্লাহ। শেহজাদকে (৩৬) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন নাইমুর।

এরপর ইরফান খানের সঙ্গে ৬৪ রানের আরেকটি ভালো জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন হাসিবউল্লাহ। ৬৪ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। তাকে ৭৯ রানে থামিয়ে দেন রকিবুল। ছক্কার চেষ্টায় ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন ব্যাটসম্যান। ১০৭ বলে ৪টি করে চার-ছক্কায় গড়া তার ইনিংসটি।

ইরফান রান আউটে কাটা পড়েন ২৪ রান করে। কাইস আকরামকে দ্রুত বিদায় করেন রকিবুল। পাকিস্তানের জয় নিয়ে অবশ্য সংশয় জাগেনি কখনোই। আব্বাস আলিকে নিয়ে বাকিটা সারেন আব্দুল ফাসিহ (২২*)।

গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৭ ও শেষ আটে ভারতের বিপক্ষে ১১১ রানে গুটিয়ে গিয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। দুর্বল কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয় পেলেও এবার হেরে গেল পাকিস্তানের বিপক্ষে।

আগামী বৃহস্পতিবার সপ্তম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। একই দিন পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে পাকিস্তান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪৯.২ ওভারে ১৭৫ (মাহফিজুল ৬, ইফতেখার ২৫, নাবিল ১, আইচ ৪, আরিফুল ১০০, ফাহিম ৫, মেহরব ১৪, নাইমুর ২, রকিবুল ০, রিপন ৭*, তানজিম ০; জিশান ৯.২-১-২৭-১, কাসিম ১০-১-৩১-০, আওয়াইস ১০-০-৫২-২, আহমেদ ৪-১-১৯-১, মেহরান ১০-২-১৬-৩, আব্বাস ৪-০-১৩-০, সাদাকাত ২-০-১৫-০)

পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪৬.৩ ওভারে ১৭৬/৪ (শেহজাদ ৩৬, হাসিবউল্লাহ ৭৯, ইরফান ২৪, ফাসিহ ২২*, কাইস ১, আব্বাস ৫*; তানজিম ৫.৩-০-২৭-০, রিপন ৭-০-৩৯-০, মেহরব ৭-০-৩৯-০, নাইমুর ১০-০-৩৩-১, আইচ ৬-০-১৬-০, রকিবুল ১০-১-২৮-২, আরিফুল ১-০-৮-০)

ফল: পাকিস্তান ৬ উইকেট জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: আরিফুল ইসলাম