ডাবল হ্যাটট্রিকসহ ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে হোল্ডারের শিকার ৫ উইকেট, বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনের প্রাপ্তি ক্যারিয়ারের প্রথম ৪ উইকেট। সিরিজের পঞ্চম টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় ১৭ রানে।
চার ম্যাচ শেষে ২-২ সমতায় থাকা সিরিজে টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দলকে শেষপর্যন্ত হারিয়ে দিল সাতে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বারবাডোজে রোববার ২০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ১৭৯ রান। ইংলিশরা লড়াই জিইয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত যেতে পারে ১৬২ পর্যন্ত।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পান হোল্ডার। পরের বলে উইকেট নেন আরও একটি, ক্রিকেটের পরিভাষায় যেটিকে বলে ডাবল হ্যাটট্রিক। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার আগে এই কীর্তি আছে কেবল আর ৩ জনের- লাসিথ মালিঙ্গা, রশিদ খান ও কার্টিস ক্যাম্পার।
২৭ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরাও তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তো বটেই, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ১৬২ ম্যাচে প্রথমবার ৫ উইকেটের দেখা পেলেন তিনি।
হোল্ডারের কীর্তি শেষ নয় এখানেই। সিরিজের প্রথম ম্যাচেও তিনি সেরা হয়েছিলেন ৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে। সব মিলিয়ে সিরিজে তার প্রাপ্তি ১৫ উইকেট, দ্বিপাক্ষিক সিরিজে যা বিশ্বরেকর্ড। এই পারফরম্যান্সে সিরিজের সেরাও তিনি।
আগের ম্যাচগুলোর ধারা থেকে বেরিয়ে কেনসিংটন ওভালে রোববার টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন কাইরন পোলার্ড। এই উইকেটেই কদিন আগে রভম্যান পাওয়েলের সেঞ্চুরিতে ২২৪ রানের পাহাড় গড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ম্যাচেও শুরুটা করে তারা দারুণ। ব্র্যান্ডন কিং ও কাইল মেয়ার্স পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তোলেন ৫৮ রান।
তাতে যথারীতি মেয়ার্সের অবদানই বেশি। নান্দনিক ঝড়ে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ১৯ বলে ৩১। আরেক ওপেনার কিং দুটি করে চার-ছয় মারলেও বরাবরের মতোই বল খেলেন একটু বেশি। তার ৩৪ রান আসে ৩১ বলে।
মূলত দুই লেগ স্পিনার আদিল রশিদ ও লিয়াম লিভিংস্টোন আক্রমণে এসে রাশ টেনে ধরেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ে। কিংকে ফেরানোর পর লিভিংস্টোন বিদায় করেন রোমারিও শেফার্ডকে। তিন নম্বরে প্রমোশন পেয়ে একটি ছক্কা মেরেই আউট হয়ে যান শেফার্ড।
১৬ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ১১৩। দেড়শ হওয়া নিয়েই তখন টানাটানি। কিন্তু কাইরন পোলার্ড ও রভম্যান পাওয়েলের পাওয়ার ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে দেড়শ ছাড়িয়ে রান ওঠে আরও অনেক বেশি। শেষের তাণ্ডবে ৩৩ বলে ৭৪ রানের জুটি গড়েন দুজন।
সিরিজের আগের ম্যাচগুলিতে ব্যাট হাতে ভালো করতে না পারলেও শেষে জ্বলে ওঠে পোলার্ড করেন ২ ছক্কায় ২৫ বলে ৪১। পাওয়েল অপরাজিত থাকেন ৪ ছক্কায় ১৭ বলে ৩৫ রান করে।
ব্যাটসম্যানদের সিরিজেও অসাধারণ বোলিং করা আদিল রশিদ শেষ ম্যাচেও ছিলেন চেনা রূপে। আঁটসাঁট বোলিংয়ে এই লেগ স্পিনার নেন ২ উইকেট। ইংল্যান্ডের হয়ে এই সংস্করণে উইকেট শিকারের তালিকায়ও নিজেকে তুলে নেন সবার ওপরে (৮১টি)
ইংল্যান্ডের রান তাড়া শুরু হয় ইনিংসের প্রথম দুই বলেই জেসন রয়ের দুটি বাউন্ডারিতে। তবে বোলার আকিল হোসেন ফিরে আসেন দ্রুতই। ওই ওভারেই বিদায় করেন দেন তিনি বিপজ্জনক রয়কে।
ইংল্যান্ড তাতে ভড়কে না গিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যায়। তিনে নেমেই চার-ছক্কায় শুরু করেন জেমস ভিন্স। হোল্ডারের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার থেকে আসে ১৭ রান।
নান্দনিক সব শটের মহড়া চালিয়ে যান ভিন্স, বিশেষ করে অফ সাইডে খেলেন মুগ্ধতা জাগানিয়া সব ক্রিকেট শট। তবে আরেক প্রান্তে পাননি তিনি যোগ্য কোনো সঙ্গী। টম ব্যান্টন একটি ছক্কার পরই বিদায় নেন ১২ বলে ১৬ করে।
অধিনায়ক মইন আলি প্রথম বলে জীবন পাওয়ার পর টাইমিং পেতে ধুঁকতে থাকেন। আগের ম্যাচে ৭ ছক্কার ঝড় তোলার ব্যাটসম্যান এবার ১৯ বল খেলে করতে পারেন স্রেফ ১৪। তাকে ফিরিয়ে প্রথম শিকার ধরেন হোল্ডার।
আগের ম্যাচগুলির মতো এ দিনও ব্যাট হাতে ব্যর্থ লিভিংস্টোন। ঝড় তুলতে পারেননি ফিল সল্ট। ৩৫ বলে ৫৫ রান করে ভিন্স যখন আউট হন আকিল হোসেনের বলে, ইংল্যান্ডের সম্ভাবনাও মিইয়ে যায় অনেকটা।
তবে এত দ্রুত নাটকীয়তা শেষ হলে কী আর চলে! স্যাম বিলিংস দারুণ ব্যাটিংয়ে আবার জাগিয়ে তোলেন দলের সম্ভাবনা। ৩ ওভারে যখন প্রয়োজন ৪৮ রান, বিলিংসের দুই ছক্কায় ওডিন স্মিথের ওভার থেকে আসে ২০ রান।
১৯তম ওভারে কটরেল দেন ৮ রান। এরপর শেষ ওভারে সেই ২০ রানের সমীকরণ। হোল্ডার প্রথম বলটি করেন ‘নো।’ সঙ্গে একটি রানে ৬ বলে প্রয়োজন পড়ে ১৮ রানের। পরের বলে হয়নি রান। এরপর টানা চারটি উইকেট!
ঘরের দর্শকের সামনে উল্লাসে ফেটে পড়েন হোল্ডার। পরে দর্শকদের সমর্থনের প্রতি সম্মান জানিয়ে পতাকা দিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করে উদযাপনে মেতে ওঠেন গোটা দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৭৯/৪ (কিং ৩৪, মেয়ার্স ৩১, শেফার্ড ৬, পুরান ২১, পোলার্ড ৪১*, পাওয়েল ৩৭*; টপলি ৪-০-৪৩-০, সাকিব ২-০-২৭-০, মইন ৩-০-২০-০, জর্ডান ৪-০-৫২-০, রশিদ ৪-০-১৭-২, লিভিংস্টোন ৩-০-১৭-২)।
ইংল্যান্ড: ১৯.৫ ওভারে ১৬২ (রয় ৮, ব্যান্টন ১৬, ভিন্স ৫৫, মইন ১৪, লিভিংস্টোন ৬, বিলিংস ৪১, সল্ট ৩, জর্ডান ৭, রশিদ ০, সাকিব ০, টপলি ০*; আকিল ৪-০-৩০-৪, হোল্ডার ২.৫-০-২৭-৫, কটরেল ৩-০-২১-০, স্মিথ ৪-০-৪১-১, পোলার্ড ২-০-১৫-০, শেফার্ড ১-০-৭-, অ্যালেন ২-০-১৭-০)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-২ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: জেসন হোল্ডার।
ম্যান অব দা সিরিজ: জেসন হোল্ডার।