জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শনিবারের দ্বিতীয় ম্যাচে সিলেট সানরাইজার্সকে ১৬ রানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম।
ঘটনাবহুল ম্যাচে কত নায়ক, পার্শ্ব নায়ক। ১৮ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে আসরের দ্রুততম ফিফটির কীর্তি গড়লেন উইল জ্যাকস, বেঁধে দিলেন ম্যাচের সুর। আশা জাগিয়ে ঠিকঠাক সঙ্গত করতে পারেননি সাব্বির রহমান, আফিফ হোসেন। শেষটায় আবার ঝড় তোলেন বেনি হাওয়েল। তাতে আসরের প্রথম দুইশ ছোঁয়া ইনিংসে চট্টগ্রাম ৫ উইকেটে করে ২০২ রান।
এনামুল হক ও কলিন ইনগ্রামের ফিফটিতে সেই রান তাড়া করে ফেলার আশা জাগায় সিলেট। কিন্তু শেষটায় দারুণ এক হ্যাটট্রিকে ব্যবধান গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি সব আলো নিজের দিকে টেনে নেন মৃত্যুঞ্জয়। মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিপিএল অভিষেকে হ্যাটট্রিক করলেন এই অলরাউন্ডার।
দ্বিতীয় বোলার হিসেবে বিপিএলে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করলেন মৃত্যুঞ্জয়। ছবি: সুমন বাবু
নিজের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করতে করতে মাঠ ছাড়েন এনামুল। অফ স্টাম্পের বাইরের বল তুলে মেরে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়েন মোসাদ্দেক হোসেন। সেরা ডেলিভারি ছিল হ্যাটট্রিকের শেষ বলটি। দারুণ এক ইয়র্কারে এলোমেলো করে দেন রবি বোপারার স্টাম্প।
এরপর মোহাম্মদ মিঠুন ও মুক্তার আলি কিছুটা কমান ব্যবধান।
শেষটায় মৃত্যুঞ্জয় সব আলো কেড়ে নিলেও ম্যাচের শুরুতে দ্যুতিময় ছিলেন জ্যাকস। টস হেরে ব্যাট করতে নামা চট্টগ্রামকে তিনিই এনে দেন উড়ন্ত সূচনা। প্রথম ওভারে সানজামুল ইসলামকে চার মারার পর তাসকিন আহমেদের বলে হাঁকান চার ও ছক্কা। সানজামুলের পরের ওভারে সুইপ ও স্লগ সুইপে মারেন আরও দুই ছক্কা। ১১ বলে তখন তার রান ২৯।
এরপর আলাউদ্দিন বাবুকে টানা তিন চার মেরে পৌঁছে যান পঞ্চাশের কাছে। তাসকিনকে দুই চার মেরে ১৮ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ। পরের বলেই শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়ে শেষ হয় তার ইনিংস।
১৯ বলে তিন ছক্কা ও সাত চারে জ্যাকস করেন ৫২। তামিম ইকবাল শুক্রবার সেঞ্চুরি করার পথে ২৮ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছিলেন। সেটাই ছিল চলতি আসরে দ্রুততম পঞ্চাশ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা পাল্টে গেল।
একই সঙ্গে জ্যাকস স্পর্শ করলেন এই মাঠে দ্রুততম পঞ্চাশের রেকর্ড। ২০১৬ সালে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে ৭ ছক্কায় ১৮ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন সেকুগে প্রসন্ন। এই দুই জনের চেয়ে বিপিএলে কম বলে পঞ্চাশ করেছেন কেবল আহমেদ শেহজাদ। ২০১২ সালে বিপিএলের উদ্বোধনী আসরে দুরন্ত রাজশাহীর বিপক্ষে ১৬ বলে ফিফটি করেছিলেন পাকিস্তানের এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।
ক্রিজে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সোহাগ গাজীকে ছক্কায় ওড়ান আফিফ। মোসাদ্দেক হোসেনকে জোড়া চার মারেন সাব্বির। পরের তিন ওভারে তাদের ব্যাট থেকে আসেনি একটিও বাউন্ডারি।
মোসাদ্দেকের অফ স্পিনে চার মেরে গা ঝাড়া দেওয়ার আভাস দেওয়া সাব্বির পরের বলে পুল করে ক্যাচ দেন লং অনে। ২৯ বলে তিন চারে তিনি করেন ৩১।
মুক্তার আলিকে ছক্কা ও চার মারার পর পুল করে রবি বোপারাকে ছক্কায় ওড়ান আফিফ। কিন্তু এরপরই নাকল বল বুঝতে না পেরে ইয়র্কারে হন বোল্ড। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৮ বলে তিন ছক্কা ও এক চারে করেন ৩৮।
চট্টগ্রামের নতুন অধিনায়ক নাঈম ইসলাম তেমন কিছু করতে পারেননি। রানের গতিতে দম দেন হাওয়েল। সানজামুলকে ছক্কায় ওড়ানোর পর তাসকিনকে মারেন জোড়া চার।
স্রেফ চার ম্যাচ পরেই নেতৃত্ব হারানো মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম বলে মারেন ছক্কা। পরে তাসকিনের বল উড়িয়ে পাঠান সীমানার বাইরে। সেই ওভারেই জোড়া ছক্কায় দলকে দুইশ রানে নিয়ে যান হাওয়েল। ২১ বলে তিনি করেন ৪১। মিরাজ ৪ বলে দুই ছক্কায় ১৩।
তাসকিনের শেষ ওভার থেকে আসে ২২ রান। শেষ ৫ ওভারে চট্টগ্রাম তোলে ৭১ রান।
এমন ঝড়ো ব্যাটিংয়ের মধ্যেও ৪ ওভারে স্রেফ ২৩ রান দেন বোপারা। মোসাদ্দেক দেন ২৫। ঝড় বয়ে যায় মূলত তাসকিনের ওপর দিয়ে। ৪ ওভারে গতিময় এই পেসার খরচ করেন ৫৩ রান।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি সিলেটের। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে স্টাম্পড হয়ে যান লেন্ডল সিমন্স। সেই ওভারটি মেডেন নেন নাসুম। প্রথম ৩ ওভারে সিলেট তুলতে পারে কেবল ১০ রান।
চমক জাগিয়ে চারে আলাউদ্দিন বাবুকে পাঠায় সিলেট। দলকে হতাশ করে নাসুমের ফুলটস বলে বোল্ড হয়ে যান এই অলরাউন্ডার।
এক প্রান্তে চালিয়ে যেতে থাকেন এনামুল। বোপারার সঙ্গে তার জুটিতে ম্যাচে টিকে থাকে সিলেট। এরপর মৃত্যুঞ্জয়ের সেই ওভার। তাতে চট্টগ্রাম পর্বে প্রথম জয় পেল স্বাগতিক দল।
দারুণ হ্যাটট্রিকে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন মুত্যুঞ্জয়। তবে সম্ভবত ম্যাচের সেরা বোলার নাসুম। ৪ ওভারে স্রেফ ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের এই স্পিনার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ২০২/৫ (লুইস ৮, জ্যাকস ৫২, আফিফ ৩৮, সাব্বির ৩১, হাওয়েল ৪১*, নাঈম ৮, মিরাজ ১৩*; সানজামুল ৩-০-৩৪-০, তাসকিন ৪-০-৫৩-১, আলাউদ্দিন ১-০-১৪-০, সোহাগ ২-০-১৮-১, মোসাদ্দেক ৪-০-২৫-১, বোপারা ৪-০-২৩-১, মুক্তার ২-০-২৬-১)
সিলেট সানরাইজার্স: ২০ ওভারে ১৮৬/৬ (সিমন্স ৯, এনামুল ৭৮, ইনগ্রাম ৫০, আলাউদ্দিন ১, বোপারা ১৬, মোসাদ্দেক ০, মিঠুন ৭*, মুক্তার ৮*; শরিফুল ৪-০-৩৯-০, নাসুম ৪-১-১৮-২, মিরাজ ৩-০-৩১-১, রেজাউর ২-০-৩৬-০, মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-৩৩-৩, হাওয়েল ৩-০-২৪-০)
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি