চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে শুক্রবার চট্টগ্রামকে ৬ উইকেটে হারাল খুলনা।
আফিফ হোসেনের রানে ফেরার দিনে থিসারা পেরেরার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে চট্টগ্রামকে ১৪৩ রানে থামায় খুলনা। সেই রান তারা ৭ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় ফ্লেচার ও মুশফিকের কার্যকর ব্যাটিংয়ে।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের উইকেট এমনিতে ব্যাটিং সহায়ক। বিপিএলের সর্বোচ্চ ছয়টি দলীয় স্কোর এসেছে এই মাঠেই। এ দিনও টসের সময় দুই অধিনায়ক বলেন, ১৭০ রান এখানে ভালো সংগ্রহ।
তবে আগের তিন দিন মেঘলা আকাশের কারণে রোদ না পেয়ে শুরুতে উইকেট ছিল একটু স্যাঁতস্যাঁতে ও স্বাভাবিকের চেয়ে খানিকটা মন্থর। পরে সময়ের সঙ্গে রোদ পেয়ে সহজ হয়ে ওঠে ব্যাটিং। বোলিংয়ের সময় সুবিধা যেভাবে কাজে লাগান থিসারা, ব্যাটিংয়ে সেভাবেই ফায়দা নেন ফ্লেচার ও মুশফিক।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই কেনার লুইসকে হারায় চট্টগ্রাম। এবারের আসরে প্রথম খেলতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট নেন নাবিল সামাদ।
সেই ধাক্কাকে পাত্তা না দিয়ে আফিফ হোসেন ও উইল জ্যাকস ছিলেন আক্রমণাত্মক। আগের তিন ম্যাচ মিলিয়ে ৩৩ রান করা আফিফ এ দিন কিছুটা খুঁজে পান নিজেকে। তিনে নেমে বাউন্ডারি দিয়ে শুরুর পর তিনি চার ও ছক্কা মারেন কামরুল ইসলাম রাব্বিকে। ইংলিশ ওপেনার জ্যাকস দুই ছক্কায় স্বাগত জানান আসরে প্রথম খেলতে নামা লেগ স্পিনার সিকুগে প্রসন্নকে।
পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৪৬ রান করে চট্টগ্রাম।
খুলনার ম্যাচে ফেরার শুরু থিসারার হাত ধরে। তার স্লোয়ার বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হন জ্যাকস (২৩ বলে ২৮)। ভেঙে যায় আফিফের সঙ্গে ৪৪ বলে ৫৭ রানের জুটি।
এরপর প্রসন্নকে ছক্কা মারার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসানের বলে এই চেষ্টায় ফেরেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
সেই ধসে বাঁধ দিতে পারেননি আফিফও। প্রসন্নকে ছক্কায় উড়িয়ে পাল্টা আক্রমণের আভাস দিলেও বিদায় নেন পঞ্চাশের আগেই। ৩৭ বলে খেলা তার ৪৪ রানের ইনিংস গড়া দুই ছক্কা ও তিন চারে।
থিসারার স্লোয়ারে গায়ের জোরে ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দেন শামীম হোসেন। ১০২ রানে সাত উইকেট হারিয়ে তখন ভীষণ বিপদে চট্টগ্রাম।
সেখান থেকে দলকে দেড়শর কাছাকাছি নিয়ে যান নাঈম ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম। ১৪ বলে দুই জনে গড়েন ২৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। ১৯ বলে ২৫ রান করেন নাঈম। একটি করে ছক্কা ও চারে ৬ বলে ১২ রান করেন শরিফুল।
৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন থিসারা। কেবল তিনিই ওভার প্রতি পাঁচের কম রান দেন।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি খুলনার। কোভিড থেকে সেরে উঠে দলে ফেরা সৌম্য সরকার ফেরেন স্রেফ ১ রানেই। শরিফুলের বল ফ্লিক করে লেগ সাইডে সীমানায় থাকা একমাত্র ফিল্ডারকে ক্যাচ দেন বাঁহাতি এই ওপেনার। বিপিএলে তার রেকর্ড এমনিতেও ভালো না, এবারও শুরুটা হলো বাজে।
দ্বিতীয় উইকেটেই অবশ্য জয়ের ভিত গড়ে নেয় খুলনা। ৪৪ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েন রনি তালুকদার ও ফ্লেচার।
ক্রিজে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দুটি বাউন্ডারি মারেন রনি। একবার এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচেন ‘এডিআরএস’-র সুবিধা নিয়ে। কিন্তু এক বল পরই নাসুম আহমেদের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি (১৭)।
তবে ফ্লেচার আরেক প্রান্তে ছুটছিলেন। মুশফিক যোগ দেওয়ার পর আরও গতি পায় ইনিংস। দুজনের জুটিতে খুলনা এগিয়ে যায় শতরানের পথে।
ফ্লেচার ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৩ বলে। ফিফটির পর মিরাজকে ছক্কায় ওড়ান ফুল টস পেয়ে। পরের বলেই লং অনে ধরা পড়ে থামে তার অভিযান।
৪৭ বলে দুই ছক্কা ও ছয় চারে তিনি করেন ৫৮।
ফ্লেচার যতক্ষণ ছিলেন, ততক্ষণ মূলত তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক। তবে এই ওপেনারের বিদায়ের পর গা ঝাড়া দেন তিনি। শরিফুলের এক ওভারে মারেন তিন চার।
দুই দলের রান তখন সমতায়। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান মুশফিক।
তিন ম্যাচে খুলনার এটি দ্বিতীয় জয়, চার ম্যাচে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় হার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৪৩/৮ (লুইস ১, জ্যাকস ২৮, আফিফ ৪৪, সাব্বির ৪, মিরাজ ৬, হাওয়েল ৫, নাঈম ২৫*, শামীম ২, রেজাউর ৭, শরিফুল ১২*; কামরুল ৪-০-৪১-০, নাবিল ২-০-১৪-১, মেহেদি ৪-০-২৭-১, প্রসন্ন ৩-০-২৪-১, থিসারা ৪-০-১৮-৩, ফরহাদ ৩-০-১৬-১)
প্রিমিয়ার ব্যাংক খুলনা টাইগার্স: ১৮.৫ ওভার ১৪৪/৪ (ফ্লেচার ৫৮, সৌম্য ১, রনি ১৭, মুশফিক ৪৪*, প্রসন্ন ২৩, থিসারা ০*; মিরাজ ৩.৫-০-২৪-২, শরিফুল ৩-০-৩২-১, নাসুম ৪-০-২৬-১, রেজাউর ৪-০-৪০-০, হাওয়েল ৪-০-২১-০)
ফল: প্রিমিয়ার ব্যাংক খুলনা টাইগার্স ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আন্দ্রে ফ্লেচার