চলে গেলেন পাকিস্তানের দ্বিতীয় কোয়াড্রপল সেঞ্চুরিয়ান

মাত্র দুই টেস্টের ক্যারিয়ার। সেখানে নেই স্মরণীয় কোনো পারফরম্যান্স। তবে আফতাব বালুচ ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার ৪২৮ রানের ইনিংসের জন্য। তিনি আর নেই। ৬৮ বছর বয়সে মারা গেছেন পাকিস্তানের দ্বিতীয় কোয়াড্রপল সেঞ্চুরিয়ান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2022, 12:59 PM
Updated : 25 Jan 2022, 12:59 PM

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর জানায়।

পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ সমৃদ্ধ আফতাবের ক্যারিয়ার। চারশ ছাড়ানো সেই ইনিংস এসেছিল ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে কায়েদ-ই-আজম ট্রফির ম্যাচে। তখন তিনি ছিলেন সিন্ধের অধিনায়ক। করাচিতে ওই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে তাদের বিপক্ষে মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বেলুচিস্তান। সিন্ধের প্রথম ইনিংসে ৫৮৪ মিনিট উইকেটে থেকে ২৫ চারে ৪২৮ রানের ইনিংসটি খেলেন আফতাব।

মাত্র অষ্টম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নামা তরুণ জাভেদ মিয়াঁদাদের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে তিনি গড়েন ১৭৪ রানের জুটি। ঠিক ১০০ রান করে রান আউট হন মিয়াঁদাদ। ১৯৫৯ সালে কিংবদন্তি হানিফ মোহাম্মদের ৪৯৯ ও আফতাবের ৪২৮ ছাড়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাকিস্তানের আর কোনো ব্যাটসম্যান ছুঁতে পারেননি চারশ। সব দেশ মিলিয়েই এই কীর্তি আছে আর কেবল ছয় জনের।

আফতাবের বাবা শমশের বালুচও ছিলেন ক্রিকেটার। ভারত ভাগের আগে রঞ্জি ট্রফিতে গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের হয়ে খেলেছিলেন শমশের। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেন তিনি ২৬টি।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আফতাবের অভিষেক মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ১৯৬৯ সালের অগাস্টে কায়েদ-ই-আজম ট্রফির সেই ম্যাচে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের হয়ে হায়দরাবাদ ব্লুজের বিপক্ষে ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি খেলেন অপরাজিত ৭৭ রানের ইনিংস। হাত ঘুরিয়ে ম্যাচে উইকেট নেন ১২টি।

ওই বছরেই নভেম্বরে ঢাকায় নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হয় তার টেস্ট অভিষেক। একমাত্র ইনিংসে ২৫ রানের বেশি অবশ্য করতে পারেননি। আরেকটি টেস্ট খেলতে তাকে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ছয় বছর। এর মূল কারণ ওই সময়ে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের গভীরতা।

১৯৭২-৭৩ থেকে ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমের মধ্যে আফতাব ছিলেন তার সেরা সময়ে। পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই সময়ে প্রায় ৫৫ গড়ে ১৪ সেঞ্চুরিতে তিনি করেন ৫ হাজারের বেশি রান। একই সময়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারে ছিলেন সাদিক মোহাম্মদ, মজিদ খান, জহির আব্বাস, আসিফ ইকবাল, মুশতাক মোহাম্মদ এবং পরবর্তীতে মিয়াঁদাদের মতো ব্যাটসম্যানরা। যা টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের একটি।

ওই সময়ে শক্তিশালী ন্যাশনাল ব্যাংক দলের অধিনায়ক হিসেবে আফতাব ছিলেন বেশ সফল। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে তার নেতৃত্বে দলটি জেতে প্যাট্রন্স ট্রফি। পরের মৌসুমে জেতে কায়েদ-ই-আজম ট্রফি ও প্যাট্রন্স ট্রফির ডাবল। এর পরের মৌসুমে আবারও দুই টুর্নামেন্টেই দলকে ফাইনালে তোলেন আফতাব। দুটিতেই অবশ্য হেরে যায় তার দল। ওই ফাইনালগুলো মিলে আফতাব সেঞ্চুরি করেন তিনটি।

এর মাঝেই একটি টেস্ট তিনি খেলার সুযোগ পান ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। অ্যান্ডি রবার্টস, ল্যান্স গিবসদের মতো শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন অপরাজিত ৬০ রানের ইনিংস। যেটি হয়ে আছে তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টের শেষ ইনিংস।

সব মিলিয়ে ১৭২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৪১.৬ গড়ে তিনি করেন ৯ হাজার ১৭১ রান। সেঞ্চুরি ২০টি। অফ স্পিনে উইকেট ২২৩টি।

অবসরের পর পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ম্যানেজার ও জুনিয়র নির্বাচক হিসেবে কাজ করেন আফতাব। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন সিন্ধ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান রমিজ রাজা। একই সঙ্গে করেন স্মৃতিচারণ।

“আফতাব বালুচের মৃত্যুর খবর শুনে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আমার বেড়ে ওঠার সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের একজন ছিলেন তিনি। শুধু তার খেলা দেখা নয়, তার ক্যারিয়ারের শেষ দিকে তার বিপক্ষে খেলার সৌভাগ্যও হয়েছে আমার।”

“আমার প্রয়াত ভাই ওয়াসিম হাসান রাজার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তিনি। তাই আমি তাকে খেলার মাঠের বাইরেও ভালোভাবে চিনতাম এবং খেলার প্রতি তার আবেগ, ভালোবাসার জন্য সবসময় তার প্রশংসা করতাম।”