ব্যাটে ঝড় তুলে মুশফিকদের হারাল মিরাজরা

ঝড়ো শুরুর পর মাঝে দায়িত্বশীল ব‍্যাটিং, শেষটায় তাণ্ডব। সঙ্গে যোগ হওয়া প্রতিপক্ষের বাজে ফিল্ডিংয়ে বড় সংগ্রহ গড়ে চট্টগ্রাম চ‍্যালেঞ্জার্স। বড় রান তাড়ায় খুলনা টাইগার্সকে পথ দেখাতে পারতেন যিনি সেই আন্দ্রে ফ্লেচার চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন শুরুতেই। বাজে শটে ফিরলেন মুশফিকুর রহিম। ব‍্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও সম্মিলিত অবদানে সহজে জিতল মেহেদী হাসান মিরাজের দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2022, 01:20 PM
Updated : 24 Jan 2022, 04:26 PM

বিপিএলে সোমবারের দ্বিতীয় ম‍্যাচে ২৫ রানে জিতেছে চট্টগ্রাম।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ১৯০ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে চট্টগ্রাম। ব্যাট হাতে দলটির সুর বেঁধে দেন দুই ওপেনার কেনার লুইস ও উইল জ‍্যাকস। মাঝে দলকে টানেন সাব্বির রহমান ও মিরাজ। শেষটায় ঝড় তোলেন বেনি হাওয়েল।

জবাবে শুরুতেই বড় ধাক্কা খাওয়া খুলনা ইয়াসির আলির ব‍্যাটে যেতে পারে ১৬৫ পর্যন্ত।

দারুণ বোলিংয়ে ৪ ওভারে ২০ রানে ২ উইকেট নিয়ে চট্টগ্রামের সফলতম বোলার রেজাউর রহমান রাজা।

ওপেনিংয়ে ৭ বলে ১৭ রান করেন উইল জ্যাকস। ছবি: চট্টগ্রাম চ‍্যালেঞ্জার্স

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব‍্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে চট্টগ্রাম। সোহরাওয়ার্দী শুভর প্রথম বল ছিল ওয়াইড। বাঁহাতি স্পিনারের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ধরার কোনো সুযোগই ছিল না কিপারের। হয় বাউন্ডারি। পরের বল স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন লুইস। চার ও ছক্কা মারেন জ‍্যাকস। ওভার থেকে আসে ২৩ রান।

ছক্কায় কামরুল ইসলাম রাব্বিকে স্বাগত জানান জ‍্যাকস। এক বল পর অবশ‍্য উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ধরা পড়েন নাভিন-উল-হকের হাতে। ৭ বলে ফিরেন ১৭ রান করে।

নাভিনকে কাট করে চার মারার পর অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকান লুইস। সেই ওভারেই চার মেরে খাতা খোলেন আফিফ হোসেন। কামরুলের পরের ওভারে চারের পর ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ক‍্যাচ দিয়ে থামেন লুইস। দুটি করে ছক্কা ও চারে ১৪ বলে করেন ২৫।

স্রেফ ৩ ওভার ৩ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলা চট্টগ্রামের রানের গতি কমে লুইসের বিদায়ের পর। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে দলটি তোলে ৬৪ রান। রান আউটে কাটা পড়েন আফিফ।

মেহেদি হাসান ও থিসারা পেরেরার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রানের জন‍্য সংগ্রাম করেন সাব্বির ও মিরাজ। চট্টগ্রামকে চেপে ধরার সুযোগ নিজেদের ব‍্যর্থতাতেই হারায় খুলনা। ফরহাদ রেজার পরপর দুই বলে জীবন পান মিরাজ ও সাব্বির। সে সময় ১৩ রানে ছিলেন মিরাজ, সাব্বির খেলছিলেন ২০ রানে।

এরপর রানের গতি বাড়ান মিরাজ। নাভিন-উল-হককে টানা তিন চার মেরে তিনি ধরা পড়েন থিসারার হাতে। ২৩ বলে চারটি চারে মিরাজ করেন ৩০।

থিসারাকে ছক্কা মেরে ডানা মেলার আভাস দিয়েও পারেননি সাব্বির। রেজার বলে ধরা পড়েন আন্দ্রে ফ্লেচারের হাতে। এক ছক্কায় সাব্বির করেন ৩৩ বলে ৩২ রান।

বিপজ্জনক হাওয়েলকে ৫ রানে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল। কিন্তু কামরুলের বলে সীমানায় ক‍্যাচ নিতে পারেননি থিসারা। জীবন পেয়ে তাণ্ডব চালান হাওয়েল। নাভিনের বলে রিভার্স স্কুপে মারেন দারুণ এক চার। শেষ পর্যন্ত ২০ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে।

২০ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন বেনি হাওয়েল। ছবি: চট্টগ্রাম চ‍্যালেঞ্জার্স

৬ বলে শামীম হোসেন ৯ রান করে ফেরার পর ৫ বলে ১৫ রান করেন নাঈম। তার দুই ছক্কায় ফরহাদের শেষ ওভার থেকে আসে ১৯ রান।

রান তাড়ায় খুলনার তানজিদ হাসানকে ডানা মেলতে দেননি নাসুম আহমেদ। শরিফুলকে ছক্কায় উড়িয়ে ঝড়ের আভাস দিয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু নাসুমের বাঁহাতি স্পিনে ফিরে যান এলবিডব্লিউ হয়ে।

আগের ম‍্যাচে ঝড় তোলা রনি তালুকদারকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি মিরাজ। একটি করে ছক্কা ও চার মেরে মাত্রই চড়াও হতে শুরু করেছিলেন ফ্লেচার। কিন্তু রেজাউর রহমান রাজার বলের আঘাতে তাকে ফিরে যেতে হয় স্ট্রেচারে করে। পরে সতর্কতার অংশ হিসেবে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরে তার জায়গায় কনকাশন সাব হিসেবে নামেন জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা।

অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি নিজের মতো চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু শরিফুলের বলে অনেকটা লাফিয়ে কিপার লুইস চমৎকার ক‍্যাচ গ্লাভসে জমালে ফিরে যেতে হয় তাকে। ৫ চারে মেহেদি ২৪ বলে করেন ৩০।

বিপদে দলের ত্রাতা হতে পারেননি মুশফিক। বরং হাওয়েলের শর্ট বলে বাজে শট ক‍্যাচ দিয়ে ফিরে যান খুলনা অধিনায়ক। কানকাশন বদলি রাজা ক্রিজে গিয়েই ঝড় তোলেন। কিন্তু একই ওভারে তাকে ও থিসারাকে বিদায় করে ম‍্যাচ পুরোপুরি চট্টগ্রামের দিকে ঘুরিয়ে দেন রেজাউর।

এরপর আর লড়াই করতে পারেনি খুলনা। ইয়াসির (২৬ বলে ৪০) ও কামরুলের ব‍্যাটে শেষের দিকে ব‍্যবধান কিছুটা কমায় তারা।

এই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠল মিরাজের চট্টগ্রাম। জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর পর দ্বিতীয় ম‍্যাচে উল্টো স্বাদ পেল খুলনা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

চট্টগ্রাম চ‍্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৯০/৭ (লুইস ২৫, জ‍্যাকস ১৭, আফিফ ১৫, সাব্বির ৩২, মিরাজ ৩০, হাওয়েল ৩৪*, শামীম ৯, নাঈম ১৫; সোহরাওয়ার্দী ১-০-২৩-০, কামরুল ৩-০-৩৫-২, নাভিন ৪-০-৪৮-১, মেহেদি ৪-০-২৩-০, থিসারা ৪-০-২৫-০, ফরহাদ ৩-০-৩৫-১)

খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৬৫/৯ (তানজিদ ৯, ফ্লেচার আহত অবসর ১৬, রনি ৭, মেহেদি ৩০, মুশফিক ১১, ইয়াসির ৪০, রাজা ২২,  থিসারা ০, ফরহাদ ৬, সোহরাওয়ার্দী ১, কামরুল ১৪*, নাভিন ১* ; নাসুম ৪-০-৩০-১, শরিফুল ৪-০-২৯-২, মিরাজ ৪-০-৪২-২, রেজাউর ৪-০-২০-২, হাওয়েল ৪-০-৩৭-১ )

ফল: চট্টগ্রাম চ‍্যালেঞ্জার্স ২৫ রানে জয়ী

ম‍্যান অব দা ম‍্যাচ: বেনি হাওয়েল